শুধু উচ্চ আদালতে নয়, মামলার পাহাড় জমছে বিভিন্ন নিম্ন আদালতেও। সময়ে সুবিচার না-পেয়ে আবেদনকারীরা উচ্চতর আদালতে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বিচারকেরাও যে কতটা নিরুপায়, বারাসতে প্রথম বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের একটি রিপোর্টে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ওই ম্যাজিস্ট্রেট কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম রায়ের কাছে রিপোর্ট দিয়ে বলেছেন, শুধু তাঁর আদালতেই ১১ হাজার মামলা জমে গিয়েছে!
চিকিৎসক এবং নার্সিংহোমের গাফিলতিতে তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে ২০১২ সালে বাগুইআটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এক ব্যক্তি। আদালতে মামলা উঠলে প্রথম বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট জানান, ২০১৪ সালের নভেম্বরে (মামলা ওঠার ১৪ মাস পরে) চার্জ গঠন হবে। নিম্ন আদালত চার্জ গঠনের জন্য এত দীর্ঘ সময় দেওয়ায় সন্তানহারা আবেদনকারী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। চার্জ গঠনের তারিখ এত পরে ফেলা হল কেন, বিচারপতি অসীম রায় বারাসতের প্রথম বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তা জানতে চান।
ম্যাজিস্ট্রেট উচ্চ আদালতে পেশ করা রিপোর্টে জানান, তিনি প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০টি মামলা শোনেন। তাঁর এজলাসে ১১ হাজার মামলা জমে গিয়েছে। তিনি জানেন, মামলায় বিলম্ব হওয়াটা সুবিচারের পরিপন্থী। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাঁর কিছু করার নেই। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে বিচারপতি হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার (প্রশাসনিক)-কে পরিস্থিতির সবিস্তার বিবরণ পেশ করতে বলেছেন।
বিচার বিলম্বিত হওয়ায় বন্দিরাও অনেক আন্দোলন করেছেন। বিনা বিচারে দীর্ঘদিন আটকে থাকতে হচ্ছে বহু মানুষকে। বর্তমানে এ রাজ্যে প্রায় ৩৮ লক্ষ মামলা জমে রয়েছে। এক যুগ পার হয়ে গিয়েছে, এমন
মামলার সংখ্যাও কম নয়। কয়েক দিন আগেই স্বামীকে খুন করার দায় থেকে বেকসুর মুক্তি পেয়েছেন মুনমুন বসু। কিন্তু মামলা বিলম্বিত হওয়ায় ইতিমধ্যেই ১৩ বছর জেল খাটতে হয়েছে তাঁকে।
জমা মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট, বিভিন্ন হাইকোর্ট, বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বারবার প্রশ্ন তুলেছে। অনেক নিয়মকানুনও তৈরি হয়েছে। কিন্তু মামলার সংখ্যা কমেনি। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী থাকাকালে সন্ধ্যার পরেও আদালতের কাজ চালানোর কথা বলেছিলেন বীরাপ্পা মইলি। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। নিম্ন আদালতে বিচারক বা হাইকোর্টে বিচারপতির সংখ্যা বাড়েনি। বাড়েনি পরিকাঠামো। বিশেষ ধরনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু হয়েছে। ব্যবস্থা হয়েছে লোক আদালতেরও। কিন্তু বেশির ভাগ মামলার ক্ষেত্রে পরিস্থিতির যে বিশেষ বদল হয়নি, বারাসতের প্রথম বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের রিপোর্টই সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
|