পাওনা আদায়ে হামলা কেন, সরব ব্যবসায়ীরা
পাওনা আদায়ে ব্যবসায়ীর উপরে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে সরব হল দক্ষিণবঙ্গের ৯টি জেলার ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন। তাদের দাবি, ব্যাঙ্কের পাওনা আদায় করতে হবে পদ্ধতি মেনেই। এ ব্যাপারে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। বর্ধমানের ঘটনার ব্যাপারে রাজ্যপালের কাছে চিঠি পাঠানো হবে বলে জানান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দত্ত। এই ধরনের ঘটনা সমর্থন করেন না বলে জানিয়েছেন নানা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও।
অনাদায়ী ঋণের টাকা আদায়ে গিয়ে গৃহকর্ত্রীর মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গয়না খুলে নেওয়া, নগদ টাকা লুঠ ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পাঠানো ‘রিকভারি এজেন্সি’র কিছু লোকজনের বিরুদ্ধে। বর্ধমান শহরে ভাঙাকুঠি এলাকার ওই ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় সাত জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ব্যবসায়ীদের ওই সংগঠন ‘ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর তরফে এই ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। সুব্রতবাবুর বক্তব্য, “পাওনা আদায়ের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার ব্যাঙ্কের আছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে গুন্ডা পাঠিয়ে হেনস্থা করতে হবে। আমরা এই ঘটনার বিরোধিতায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি জানান, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। তাই এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার আর্জি জানিয়ে রাজ্যপালের কাছে আবেদন জানাবেন।
ওই সংগঠনের মুখ্য উপদেষ্টা রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান জানান, অতীতেও একাধিক ব্যবসায়ীর কাছে ব্যাঙ্কের পাওনা বকেয়া হয়েছে। ব্যাঙ্কের তরফে বণিক সংগঠনকে বিষয়টি জানানো হয়। যাতে কোনও পক্ষই যেন আর্থিক ক্ষতির মুখে না পড়েন সে জন্য সংগঠন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ, দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে মীমাংসা করে দিয়েছে, এমন নজির রয়েছে। রাজেন্দ্রপ্রসাদবাবু বলেন, ‘‘বর্ধমানে যা ঘটেছে তা অন্যায়।” একই বক্তব্য দুর্গাপুর বণিকসভার সাধারণ সম্পাদক রমাপ্রসাদ হালদারেরও। তাঁর মতে, মানুষ প্রয়োজনে পড়েই ব্যাঙ্কের কাছে ঋণ নিয়ে থাকেন। অনেকেই তা ঠিক ভাবে শোধ করে দেন। কিন্তু নানা কারণে কেউ কেউ তা করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের উচিত তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। তিনি বলেন, “কোনও অবস্থায় মস্তান পাঠানো উচিত নয়।”
বেসরকারি নানা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এই গোটা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তারা বর্ধমানের ঘটনা সমর্থন করছেন না। শিল্পাঞ্চলের তেমনই এক ব্যাঙ্কের আধিকারিক জানান, ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের সম্পূর্ণ আলাদা পরিকাঠামোযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে। বেশ কয়েক ধাপ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার আছে। ব্যাঙ্কের নিজস্ব আধিকারিক নিজে গিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আসেন। সব দিক থেকে সন্তুষ্ট হয়ে ঋণ অনুমোদন করা হয়। তার পরেও ঋণ হাতে তুলে দেওয়ার আগে বাড়ির দলিল, অলঙ্কার ইত্যাদি জমা রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। যদি ঋণগ্রহীতা শোধ করতে না পারেন সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিয়ে সেই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মতো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকারী ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সেই শর্তেই ঋণ দেওয়া হয়। ওই আধিকারিকের মতে, ঋণ আদায়ের জন্য সশস্ত্র লোক পাঠানোর কোনও প্রয়োজন নেই। সে জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে।
এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এজিএম পদের এক আধিকারিক জানান, অনাদায়ী ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে দু’ধরনের এজেন্ট নিয়োগ করা হয়। তা হয় কলকাতার প্রধান কার্যালয় থেকে। এক দল হল সাধারণ ‘রিকভারি এজেন্ট’। ঋণগ্রহীতা যেখানে থাকেন সেই এলাকার ১০কিলোমিটারের মধ্যে তাঁর বাসস্থান হতে হবে, যাতে তিনি নির্দিষ্ট ভাবে পাওনাদারকে চেনেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কাছে ঋণগ্রহীতাদের তালিকা নিয়ে তাঁদের কাছে গিয়ে বুঝিয়ে পাওনা মেটানোর পরামর্শ দেন তাঁরা। প্রয়োজনে ব্যাঙ্কের সঙ্গে মধ্যস্থতার ব্যবস্থাও করেন। অন্য দল হল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার এজেন্ট। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ প্রথমে আদালতে আপিল করে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের অনুমোদন নেন। ঋণগ্রহীতা যেখানে বসবাস করেন সেখানকার স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে থানা থেকে কত পুলিশ কর্মী প্রয়োজন তা জেনে থানায় নির্দিষ্ট ‘ফি’ জমা দেন সেই এজেন্ট। এর পরে পুলিশ নিয়ে গিয়ে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
এ সব সত্ত্বেও ভাঙাকুঠির ওই ঘটনা কেন ঘটল, সে ব্যাপারে বিস্মিত সব পক্ষই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.