নরেন-কাণ্ড
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, সভা তপ্তই
প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী নরেন দে-র উপরে হামলার ঘটনার জেরে বুধবারও উত্তাল হল বিধানসভা। এ বার বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করল সরকারি হাসপাতালে প্রাক্তন মন্ত্রীর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ।
গুরুতর আহত হওয়া সত্ত্বেও জেলার সরকারি হাসপাতালে নরেনবাবুর ঠিকমতো চিকিৎসা করা হয়নি, এই অভিযোগ তুলে এ দিন প্রথমার্ধে অধিবেশন কক্ষের ভিতরেই পোস্টার-ছবি নিয়ে বিক্ষোভ দেখান বাম বিধায়কেরা। চলে স্লোগান। নরেনবাবুর উপযুক্ত চিকিৎসায় যাঁরা বাধা দিতে চেয়েছেন বলে অভিযোগ, সেই তৃণমূল নেতা, পুলিশ ও চিকিৎসকদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানায় বিরোধী পক্ষ। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিবৃতিও দাবি করে তারা। পরে সভায় বিবৃতি দিয়ে পার্থবাবু বলেন, “ওই হামলার ঘটনায় সরকার পক্ষই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাইছে। দোষীরা যে-ই হোক, শাস্তি পাবেই।”
সভার শুরুতে এ দিন শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি নিয়ে আলোচনা চলছিল। তা শেষ হওয়ার পরেই বিরোধী দলনেতা চিকিৎসক সূর্যকান্ত মিশ্র উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “নরেন দে-র শারীরিক অবস্থা এত খারাপ হওয়া সত্ত্বেও ভর্তির ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতাল থেকে কার্যত জোর করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে লিখে দেওয়া হয়েছে, কোথাও আঘাত লাগেনি বা ভেঙে যায়নি। অথচ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে এক্স-রে করে ডাক্তাররা দেখেছেন, নরেনবাবুর বাঁ হাতের হাড় (চিকিৎসা পরিভাষায় ‘আলনা’) ভেঙেছে। চোখের আঘাতও গুরুতর।” এর আগে সিপিএম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা হেমব্রম বা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার চিকিৎসা নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। যার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন গৌরাঙ্গবাবু।
একটি সরকারি হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসায় এই রকম গাফিলতি হয় কী করে, সেই প্রশ্ন তুলে বাম বিধায়কেরা বিধানসভা চত্বরে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাবদিহি দাবি করে স্লোগান দেন। তাঁদের পোস্টারে ছিল আহত নরেনবাবুর ছবি। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য তখন সভায় হাজির থাকলেও কিছু বলেননি। বাম বিধায়কেরা স্পিকারের সামনে গিয়ে তাঁকে নরেনবাবুর ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেখানোর চেষ্টা করেন। সেই সময় সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নরেন দে-র ব্যাপারে যা-যা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নিশ্চয়ই নেওয়া হবে। যাঁরা আঘাত করেছেন, তাঁরা শাস্তি পাবেন। তবে ১৯৯০ সালে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে আক্রমণ হয়েছিল, তখনও আমরাও অনেক প্রতিবাদ করেছিলাম। সে সব শোনা হয়নি!” গোলমালের মধ্যেই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি কোনও বিষয়ে কাউকে বিবৃতি দিতে বাধ্য করতে পারি না।”
পরে সূর্যবাবু বলেন, “যখন আমি অধিবেশনের মধ্যে বলার চেষ্টা করছি যে ওঁর হাত ভেঙে গিয়েছে, চোখে আঘাত লেগে আইরাইটিস হয়েছে, তখন মাইক বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে!” বিরোধীদের অভিযোগ, যেখানে ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে ‘ব্লান্ট ট্রমা,’ বা ‘হিস্ট্রি অফ অ্যাসল্ট’-এর মতো কথা লেখা রয়েছে, সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন পুলিশকে জানালেন না? সূর্যবাবুর কথায়, “যাঁরা এই ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করেছেন, সে সব নেতা এবং যাঁরা সেই চাপে মাথা নুইয়েছেন সেই পুলিশ ও চিকিৎসকদের প্রত্যেককে খুঁজে বার করে কড়া আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেটাও বিধানসভায় বলতে হবে।”
মন্ত্রীদের কেউ চিকিৎসায় গাফিলতি নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেননি। তবে হুগলি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নরেনবাবুর দু’বার এক্স-রে করা হয়েছিল। তাতে কোনও অংশে হাড় ভাঙা বা চিড় ধরার লক্ষণ পাওয়া যায়নি।” ওই কর্তার আরও বক্তব্য, তাঁদের উপস্থিতিতেই ফরওয়ার্ড ব্লকের বর্ষীয়ান নেতা অশোক ঘোষ ফোন করে নরেনবাবুকে কলকাতায় চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন। নরেনবাবুও একই ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এর পরেই ওঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়।
পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু অবশ্য সভার দ্বিতীয়ার্ধে বিবৃতি দিয়ে বলেন, নরেনবাবুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সভার ভিতরে-বাইরে যে ভাবে সংসদীয় রীতিনীতি না-মেনে কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে, তা কাম্য নয়। তাঁর বক্তব্য, “৮ ডিসেম্বর বিকেল পৌনে ৪টের ঘটনার পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু উনি নিজেই চুঁচুড়ায় হাসপাতালে যেতে চান। সাড়ে ৫টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।” পার্থবাবুর কটাক্ষ, “দু’টি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ ধন্দে। কারণ একটা অভিযোগে টিপ সই রয়েছে। সেটাও দেখতে হবে!” যার প্রেক্ষিতে সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমানের মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে পরিষদীয় মন্ত্রীই তাঁর হয়ে কাজ করেন। কিন্তু পার্থবাবু এ দিন মনগড়া বিবৃতি দিয়েছেন!”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.