উত্তপ্ত বাংলাদেশের আঁচ পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে। যে কোনও মুহূর্তে বড় মাপের নাশকতার আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গকে সতর্কও করল কেন্দ্র। শুরু হয়ে গিয়েছে জরুরি ভিত্তিতে মোকাবিলার ব্যবস্থাও। গত কাল সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী। রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়তি নজরদারি চালু করা হোক। কেন্দ্রও নিরাপত্তা বাড়াচ্ছে বলে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, এর পরেই মমতা রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। আজই নয়াদিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছেন সঞ্জয়বাবু। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। সরকারি সূত্রের খবর, পাঁচ রাজ্যের ভোটে যেখানে যেখানে বিএসএফ মোতায়েন করা হয়েছিল, তাদের সরিয়ে আনা হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। যে সব জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া নেই, সেখানে বেশি করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উত্তর চব্বিশ পরগনার উল্টো দিকে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে সব চেয়ে বেশি অশান্তি ছড়াতে পারে বলে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা। সম্প্রতি একাত্তরের যুদ্ধপরাধী কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টার পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আশঙ্কা। নাশকতার প্রভাব পড়তে পারে সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গেও। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের কাছে গত কাল যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে এই আশঙ্কা আরও জোরদার হয়েছে।
রিপোর্ট বলা হচ্ছে, উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাট সাব ডিভিশনের লাগোয়া বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় জামাতের ব্যাপক সন্ত্রাস চলছে। এই সীমান্তেই রয়েছে ভারতের দু’টি চেকপোস্ট হরিদাসপুর এবং ঘোজাডাঙ্গা। বলা হচ্ছে, প্রশাসন সেখানে একেবারেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এমনকী এই অভিযোগও উঠছে, সেখানকার পুলিস সুপার জামাতের প্রতি সহানুভূতিশীল। গত ১৫ দিনে সেখানে তিনশোর উপরে বাড়ি-জমির দলিল হস্তান্তর হয়েছে। এই তথ্য থেকে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার কিছু সংখ্যালঘু ও আওয়ামি লিগ সমর্থক নামমাত্র মূল্যে বাড়ি বিক্রি করে ভারতে অথবা অন্য কোথাও চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। লুঠপাট অগ্নি সংযোগের মতো ঘটনাও যথেচ্ছ ঘটছে। খুলনাতেও অনেকে আত্মগোপন করে আছেন বলে জানা গিয়েছে। ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়েছেন দেভাটায় আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মণি, আনাসুরি থানা এলাকার আওয়ামি লিগের নেতা পিন্টু, সদর থানা এলাকার আওয়ামি নেতা আসাদুজ্জামান ইত্যাদি। গত ১৫ দিনে এই এলাকায় জামাতে সন্ত্রাসে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্মী, এমনকী মুক্তিযোদ্ধাও।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে ইতিমধ্যেই ভারতীয় সীমান্তে ৫ হাজার বাড়তি বিএসএফ জওয়ান নিয়োগ করা হয়েছে। এমনিতেই বাংলাদেশ সীমান্ত আগলানোর কাজ অনেক বেশি জটিল বলে মনে করেন বিএসএফ-কর্তারা। কারণ এই সীমান্তের এক-চতুর্থাংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই। বিএসএফের ডিজি-র কথায়, “বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে পূর্ব সীমান্ত নিয়ে আমাদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।” |