নারায়নস্বামী শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে এ বার সরাসরি তোপ দাগল প্রায় এক যুগ ধরে প্রধান স্পনসর হিসাবে ভারতীয় ক্রিকেট দলের পাশে থাকা সহারা গোষ্ঠী। তাদের বক্তব্য, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সংস্থার মতো করে চালাচ্ছেন তিনি। শ্রীনি-র বোর্ড স্টার গোষ্ঠী-কে টিম ইন্ডিয়া-র স্পনসরশিপ স্বত্ব দেওয়ার পর সহারার অভিযোগ, বেশি মূল্যের ‘বিড’ দেওয়া সত্ত্বেও অন্যায় ভাবে তাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে বোর্ড এবং তা হয়েছে শ্রীনিবাসনের অঙ্গুলিহেলনে।
বুধবার সহারার মুখপাত্র অভিজিৎ সরকার সরাসরি বোর্ড প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনে বলেন, “শ্রীনিবাসন বোর্ডকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বানিয়ে দিয়েছেন। ওঁর ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুযায়ী বোর্ডের কাজকর্ম চলছে। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য শ্রীনি যা খুশি তাই করে যাচ্ছেন।”
কেন এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ?
জানুয়ারি ২০১৪ থেকে মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত টিম ইন্ডিয়া স্পনসরশিপ স্বত্ব পেয়েছে স্টার ইন্ডিয়া। কিন্তু সহারার দাবি, তাদের বিড বেশি মূল্যের হওয়া সত্ত্বেও তাদের ‘অযোগ্য’ বলে ঘোষণা করে বোর্ড। এই নিয়ে বুধবার রাতে লখনউ থেকে ফোনে অভিজিৎবাবু বললেন, “দেশের ক্রিকেটমহলের বহু মানুষ, বহু কর্তা আর বর্তমান-প্রাক্তন ক্রিকেটারের অনুরোধে বোর্ডের সঙ্গে দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও আমরা স্পনসরশিপের বিড করেছিলাম। স্টার ২০৩ কোটি দিচ্ছে। আমরা কিন্তু ২৫২ কোটিরও বেশি দিতে রাজি ছিলাম। বিডে ৪৯ কোটি বেশি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও আমাদের অন্যায় ভাবে বাতিল করে দেওয়া হয়।”
আইপিএলে সহারা তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি পুণে ওয়ারিয়র্স থেকে স্পনসরশিপ তুলে নিয়েছিল বলেই তার বদলা নিলেন শ্রীনিবাসন, দাবি অভিজিৎবাবুর। বিসিসিআই-এর সঙ্গে তাদের এই গোলমেলে সম্পর্কের অজুহাতে সহারাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় বলে বোর্ডের ব্যাখ্যা। কিন্তু অভিজিৎবাবুর যুক্তি, “আমাদের সঙ্গে তো গত মে মাস থেকে ঝামেলা বোর্ডের। এই অজুহাতে যদি সহারাকে বাতিল করা হয়, তা হলে মে মাসের পরেও কেন বর্তমান স্পনসরশিপের টাকা নেওয়া হল? কেনই বা আমাদের কাছ থেকে পরবর্তী স্পনসরশিপ স্বত্বের জন্য বিড নেওয়া হল?”
এর পরেও সহারা মুখপাত্রের আরও যুক্তি রয়েছে। তিনি বলছেন, “আইপিএল নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলা সহারা অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস আইপিএল সংস্থার। আর ভারতীয় দলের স্পনসরশিপ স্বত্বের জন্য বিড করেছিল সহারা ইন্ডিয়া ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশন লিমিটেড। দু’টো আলাদা সংস্থা যখন, তখন একটা সংস্থার জন্য অন্য সংস্থাকে বঞ্চিত করার কোনও যুক্তি নেই।”
গত সোমবার বোর্ডের মার্কেটিং কমিটির বৈঠকের পর সহারা কর্তারা যখন এই যুক্তিতে বোর্ড কর্তাদের চেপে ধরেন, তখন তাঁদের কাছে কোনও ব্যাখ্যা ছিল না বলে জানান অভিজিৎবাবু। তাঁর কথায়, “পছন্দের লোকেদের বরাত পাইয়ে দেওয়ার জন্য জলের দরে স্বত্ব বিক্রি করে দিচ্ছেন শ্রীনিবাসন। ২০১০-এ যেখানে স্পনসরশিপের জন্য ম্যাচ প্রতি ৩.৩৪ কোটি টাকা দিয়েছিলাম আমরা, এ বার সেখানে ম্যাচপিছু ১.৯২ কোটি টাকা দিয়েই স্বত্ব পেয়ে গেল স্টার! এতে ভারতীয় ক্রিকেটের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা মানুষই বুঝে নিতে পারবে।”
তবে এই নিয়ে বোর্ডের বিরুদ্ধে কোনও আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছে না সহারা। সংস্থার মুখপাত্র বলেন, “এমন নয় যে, আমাদের এটা পেতেই হবে। ভারতীয় ক্রিকেটের ভালর জন্যই আমরা তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু খোদ বোর্ড প্রধানেরই যখন আমাদের পাশে পাওয়ার ইচ্ছা নেই, তখন আমাদেরও এই সম্পর্কে ইতি টানাই ভাল।” |