ধোনির চওড়া কপালটা কি এ বার দেশেই রেখে এসেছে ভারত? প্রথম দুটো ম্যাচে কঠিন উইকেটে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং রীতিমতো নাকানি চোবানি খেয়েছে। আর যে পিচটায় মনে হচ্ছিল, ধবন-রোহিত-কোহলিরা চেনা ছন্দে ফিরতে পারে, সেখানেই ব্যাট করার সুযোগ হল না।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শেষ হওয়ার পর সেঞ্চুরিয়নে বৃষ্টি নামল, ম্যাচটাও শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হয়ে গেল। এ দিন স্টেইন, মর্কেল খেলেনি। উইকেটটাও অনেকটা ভারতীয় উপমহাদেশের মতো ছিল। এখানে কিন্তু টেস্টের আগে প্রয়োজনীয় ব্যাটিং প্র্যাকটিস সেরে নিতে পারত কোহলিরা। আত্মবিশ্বাসটাও মনে হয় ফিরে পেত। আর ম্যাচটা জিতলে তো সেটা বাড়তি বোনাস হত।
যাই হোক, ভারতীয় ব্যাটিংকে বুধবার দেখতে পেলাম না, কিন্তু বোলিংটাকে আরও একবার দেখলাম। কুইন্টন ডি’কক (১০১) টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি পেল। সেঞ্চুরি করল ডেভিলিয়ার্সও (১০৯)। ওয়ান্ডারার্স বা কিংসমিডের মতো ভয়ঙ্কর উইকেট নয় সুপারস্পোর্ট পার্কের। এখানে পেসাররা বলে বলে আগুন ঝরাবে, সেটা হওয়ার নয়।
|
ইশান্ত: ৪-৪০। বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেস্তে গেলেও উজ্জ্বল ইশান্ত। |
ব্যাটসম্যানরা অন্তত কিছুটা স্বস্তিতেই খেলতে পারে এই ধরনের উইকেটে। তেমন বাউন্স নেই, মুভমেন্টও কম বলে তিন উইকেট নিলেও মহম্মদ শামিকে পর্যন্ত এ দিন কিছুটা কম ধারালো লাগল। যদিও ওপেনিং জুটিটা ও-ই ভাঙল। কিন্তু বলতেই হচ্ছে, ইশান্ত শর্মার (৪-৪০) পারফরম্যান্স আমার বেশ ভাল লেগেছে। ইশান্তের সমস্যাটা হয়ে যাচ্ছে ধারাবাহিকতায়। সেটা ওকে আনতে হবে।
এই পিচে ইশান্ত শুধু ভাল গতিতে বল করল না, লাইন-লেংথও ঠিকঠাক রাখল। চার উইকেট তোলার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের তিনশো রানের ইনিংসে ১০ ওভারে দিল মাত্র ৪০ রান। ডেভিলিয়ার্স বা কুইন্টনের পক্ষেও কিন্তু ওকে মারা কঠিন হয়ে পড়ছিল। বুধবারের ইশান্তকে দেখে মনে হল, টেস্ট সিরিজে ও ভাল কিছু করলেও করতে পারে।
তিনটে ম্যাচে তিনটে সেঞ্চুরি করার পর কুইন্টন যে ম্যান অব দ্য সিরিজ হবে, তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ছিল না। ২০ বছরের ছেলেটাকে একবারও চাপে ফেলতে পারল না ভারতীয় বোলাররা। তবে ধোনিরা স্বস্তি পেতে পারে একটা তথ্য থেকে। টেস্ট সিরিজে এই কুইন্টনকে সামলাতে হবে না। ওকে দলের বাইরে রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওর জায়গায় ফিরছে গ্রেম স্মিথ। |
ফের সেঞ্চুরি করলেন দে’কক। |
প্রকৃতি এ দিন ভারতীয় ব্যাটিংকে টেস্টের আগে প্রয়োজনীয় ম্যাচ প্র্যাকটিস পেতে দিল না। আসলে এই মাঠের বাইরের ব্যাপারগুলো মাঝে মাঝে বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। যেমন রঞ্জিতে আমাদের রেলওয়েজ ম্যাচে মুরলী কার্তিকের অখেলোয়াড়োচিত আচরণ আমাদের ফোকাসটা ভীষণ ভাবে নড়িয়ে দিয়েছিল। জানি না, অশান্তির বিষ ছড়ানোর জন্য ইচ্ছা করে এমন জঘন্য কাজ করেছিল কি না মুরলী। তবে বল করতে এসে সন্দীপনের মতো একটা বাচ্চা ছেলেকে নন স্ট্রাইকার এন্ড ছাড়ার জন্য যে ভাবে রান আউট করল, তা সাধারণত কেউ করে না। শুধু তা-ই নয়, আমার মতো একজন সিনিয়রকে ‘ইউ শাট আপ’ বলে যে ভাবে চোখ রাঙাল, তাতেও কম অপমানিত বোধ করিনি। দুর্ভাগ্যবশত এগুলো মাঝে মাঝে খেলার মধ্যে বড় আকার ধারণ করে।
আশা করব, টেস্টের আগে দু’দিনের প্র্যাকটিস ম্যাচটা কাজে লাগাবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। |
ওয়ান ডে সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক |
• জাহির আব্বাস ১১৮ (মুলতান), ১০৫ (লাহৌর), ১১৩ (করাচি), সব ভারতের বিরুদ্ধে ’৮২-৮৩।
• সইদ আনোয়ার ১০৭ (শ্রীলঙ্কা), ১৩১ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), ১১১ (শ্রীলঙ্কা), সব শারজায় ১৯৯৩।
• হার্সেল গিবস ১১৬ (কেনিয়া), ১১৬ ন.আ. (ভারত), ১৫৩ (বাংলাদেশ), প্রথম দু’টো কলম্বো, শেষটা পচেস্ত্রুমে ২০০২।
• এবি ডে’ভিলিয়ার্স ১১৪ ন.আ. (ভারত-গ্বালিয়র), ১০২ ন.আ. (ভারত-আমদাবাদ), ১০২ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ-নর্থ সাউন্ড), ২০১০।
• কুইন্টন ডি’কক ১৩৫ (জো’বার্গ), ১০৬ (ডারবান), ১০১ (সেঞ্চুরিয়ন), সব ভারতের বিরুদ্ধে, ২০১৩।
|
“ব্যাটসম্যানদের জন্য পিচটা অন্যতম সেরা। ওদের মিডল অর্ডারকে কিছুটা এক্সপোজ করে দিয়ে নতুন বলের সুবিধা তুলে নিয়েছিলাম আমরা। পেস আর বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার দিক থেকে টেস্টের আগে ওয়ান ডে খেলাটা ভাল ব্যাপার। ইশান্ত দুরন্ত বল করেছে। দীর্ঘকায় বোলাররা সঠিক লেংথে বল ফেললে উইকেট উঠবে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভাগ্য ভাল, বেশ কয়েক জন সিম বোলিং অলরাউন্ডার আছে।”—মহেন্দ্র সিংহ ধোনি |
|