প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় বিতর্কিত কর্মী পাপ্পু সিংহের তৃণমূলে যোগদান ঘিরে জটিলতা তৈরি হল দলের অন্দরে।
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার পাপ্পুকে আনুষ্ঠানিক ভাবে নিজেদের সংগঠনে বরণ করে নেন তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষাবন্ধু সমিতির নেতৃত্ব। এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্সিতে ভাঙচুরের ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছিলেন বলে পুলিশের দাবি। যদিও পুলিশ জানিয়েছিল, তিনি নির্দিষ্ট কারও নাম করেননি। ওই ঘটনার পরেই পাপ্পুকে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে বদলি করা হয়। প্রেসিডেন্সিতে দ্বাররক্ষী থাকাকালীন পাপ্পু কো-অর্ডিনেশন কমিটির
সদস্য ছিলেন বলে তৃণমূলের দাবি। যদিও পাপ্পুর দাবি, তিনি কোনও সংগঠনই করতেন না। এ দিন ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতায় এসে প্রেসিডেন্সিতে শিক্ষাবন্ধু সমিতিতে যোগ দেন তিনি। একইসঙ্গে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও জনা
তিরিশেক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এ দিন ওই সংগঠনে যোগ দিয়েছেন। পাপ্পুর বক্তব্য, “প্রেসিডেন্সি থেকে আমার প্রাক্তন সহকর্মীরা আমাকে ডেকেছিলেন এই সংগঠনে যোগ দেওয়ার জন্য। এই সংগঠন শিক্ষাকর্মীদের জন্য ভাল কাজ করছে বলে এতে যোগ দিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর উপরে আমার আস্থা আছে।”
পাপ্পুর যোগদানের খবর জানাজানি হতেই তৃণমূলের অন্দরে বিতর্ক শুরু হয়। তৃণমূলের মহাসচিব এবং রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূলের কোনও শাখা সংগঠন পাপ্পু সিংহকে উত্তরীয় পরাতে পারে। কিন্তু তৃণমূলে তাঁর অন্তর্ভুক্তি দল অনুমোদন করছে না।” পার্থবাবুর অভিযোগ, প্রেসিডেন্সির ঘটনা নিয়ে পাপ্পুই তৃণমূলের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সুতরাং, তাঁকে দলে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। শিক্ষামন্ত্রী তথা দলের শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান ব্রাত্য বসু বলেন, “দলের শাখা সংগঠনে প্রতি দিন অনেকে যোগ দেন। এক জন নির্দিষ্ট কর্মীর ব্যাপারে আমি আর কিছু বলব না।”
যদিও তৃণমূলের অন্দরের খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন ছিল বলেই পাপ্পুকে এ দিন শিক্ষাবন্ধু সমিতিতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এটা ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন পার্থবাবু এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। এ দিন দিল্লি থেকে মুকুলবাবু বলেন, “এটা শাখা সংগঠনের ব্যাপার। আমি ফিরে গিয়ে খোঁজ নেব।” পার্থবাবুর মতো দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেরই অভিযোগ, পাপ্পু প্রেসিডেন্সি কাণ্ডে তৃণমূলকে হেয় করার চেষ্টা করেছিলেন। প্রেসিডেন্সিতে গোলমালের সময়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পাপ্পুর কাজকর্ম নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছিল। তা ছাড়া, পাপ্পু কলকাতায় বসবাসকারী তাঁর পরিবারের সুবিধার্থে এবং তাদের সঙ্গে থাকার জন্যই ফের প্রেসিডেন্সিতে বহাল হতে চেয়েছিলেন। সেই উদ্দেশ্যেই তাঁর শিক্ষাবন্ধু সমিতিতে যোগদান। তৃণমূল প্রভাবিত ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী আরও বলেন, “পাপ্পু সিংহ এখন ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের কর্মী। সেটি সরকারি কলেজ। তাই তাঁকে দলের শাখা সংগঠনে আসতে হলে সরকারি কর্মী সংগঠনে যোগ দিতে হত। তার বদলে তিনি কেমন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী-সংগঠনে যোগ দিলেন, বুঝতে পারছি না।”
|