এ বার বিদ্যুতে ক্ষতি রুখতে বিল আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা
কোষাগারে টানাটানি চলছেই। সংস্থা চালাতে গিয়ে তাই বাজার থেকে ধারও করতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানিকে। এর উপরে বাড়তি চাপ, বাজারে বিদ্যুৎ যত বিক্রি হচ্ছে, তার পুরো দাম আদায় হচ্ছে না।
ফলে সঙ্কট বাড়ছে। পরিস্থিতি সামলাতে তাই প্রতিটি অঞ্চলে বণ্টন সংস্থার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলেন কর্তৃপক্ষ। আয় বাড়িয়ে যাতে আর্থিক ক্ষতি কমানো যায়, সেই লক্ষ্যে গড়া হল নজরদার দলও।
সংস্থা-সূত্রের খবর: এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর, বণ্টন-এলাকায় গ্রাহকদের বিদ্যুৎ-বিলের মোট অঙ্ক যা দাঁড়িয়েছে, রাজস্ব আদায় হয়েছে তার মোটামুটি ৯২%। কর্তৃপক্ষের মতে, আদায়ের এই হারে কোষাগারের হাল ফেরানো যাচ্ছে না। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, ৫% বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে। বণ্টন-কর্তৃপক্ষের তরফে সংস্থার পদস্থ কর্তাদের বলে দেওয়া হয়েছে, বিলের অন্তত ৯৭% আদায় করতে না-পারলে আর্থিক সঙ্কট আরও ঘোরালো হবে।
বস্তুত আদায়ে এ হেন ‘ঘাটতি’র ইঙ্গিত মিলেছে সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগমের কথাতেও। তিনি জানান, বিল আদায়ে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে, যা মেটাতে কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তবে দ্রুত সমস্যাটি মিটে যাবে বলে তাঁর আশা। এবং বলেন, “আমাদের সরকারের নীতি হল, সবাইকে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে হবে। তা দিয়েও চলেছি। কিন্তু সেই পরিষেবা দিতে গেলে সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্যও ভাল রাখা প্রয়োজন।”
তারই তাগিদে বিল আদায়ের ‘লক্ষ্যমাত্রা’ নির্ধারণ। পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ বণ্টন পরিষেবা-এলাকা পাঁচটি অঞ্চলে (জোন) বিভক্ত কলকাতা, বর্ধমান, মেদিনীপুর, বহরমপুর ও শিলিগুড়ি। সম্প্রতি সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ-পরিষেবা জোগাতে যে স্বাভাবিক ক্ষতি (প্রযুক্তিগত ও সংবহনজনিত) হয়, পাঁচ অঞ্চলেই তার বহর বেড়েছে। কিন্তু জোনগুলোয় বিল আদায়ের হার বেড়েছে সামান্য। তা আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে বলে মত কর্তৃপক্ষের।
ওই সুযোগকেই কাজে লাগানোর প্রয়াস শুরু হয়েছে। কী রকম? সংস্থা-সূত্রের দাবি: লোকসান বেশি, এমন একশোটি গ্রাহক পরিষেবাকেন্দ্রকে চিহ্নিত করে চালু হয়েছে নজরদারি। নজরদার দলগুলো দেখবে, প্রতিটি পরিষেবাকেন্দ্রে বিদ্যুৎ চুরি ঠিক ধরা হচ্ছে কি না। মিটার রিডিং ও বিল তৈরির প্রক্রিয়ায় ঘাটতি থাকছে কি না, তা-ও তারা যাচাই করবে। দীর্ঘ দিন ধরে বিল বকেয়া রাখা গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হবে। অবৈধ লাইন কেটে সেখানে বৈধ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করার দায়িত্বও নজরদারদের উপরে ন্যস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক কর্তা।
নজরদারি দল কাজ করবে কী ভাবে? যা ঠিক হয়েছে, তাতে প্রতিটি দলের মাথায় জোনাল ম্যানেজার বা রিজিওনাল ম্যানেজারের মতো কোনও পদস্থ কর্তাকে ‘নোডাল অফিসার’ হিসেবে রাখা হবে। তিনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী দলের সদস্যদের নিয়ে এলাকায় এলাকায় ঘুরবেন, ক্যাম্প করবেন। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট বানাবেন। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে আর্থিক ক্ষতিতে রাশ পরানো না-গেলে সংশ্লিষ্ট নোডাল অফিসারই দায়ী থাকবেন বলে বণ্টন-কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। বণ্টন-চেয়ারম্যান নিজেও দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রতিটি অঞ্চলে গিয়ে তিনি আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, নিচ্ছেন এলাকা-ভিত্তিক রিপোর্ট। জেলায় জেলায় বিদ্যুৎ বেচে কত টাকা বণ্টন সংস্থার ঘরে আসছে, চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার মাসিক তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ চলছে।
বিল সে ভাবে আদায় না-হওয়ায় চলতি অর্থবর্ষে (২০১৩-’১৪) বণ্টন সংস্থার অন্তত ২,৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে বলে আশঙ্কা কর্তাদের অনেকের। তাঁরা জানাচ্ছেন, খরচ বাড়লেও, সেই অনুপাতে আয় বাড়ছে না। বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে গিয়ে এটিসি লোকসান (এগ্রিগেট ট্রান্সমিশন অ্যান্ড কমার্শিয়াল লস) যে রকম বেড়েছে, সে রকম বাজার থেকে বিদ্যুৎ কেনার খরচও চড়েছে। আবার গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের সুবাদে বেড়েছে গ্রাহকসংখ্যা। পশ্চিমবঙ্গে কৃষিক্ষেত্রেও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। অথচ বহু গ্রাহকের মতো সরকারেরও বেশ ক’টি দফতর বিদ্যুতের বিল বাকি রেখে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। বণ্টন-তথ্য মোতাবেক, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দফতরের কাছে সংস্থার বিল বাবদ পাওনা দাঁড়িয়েছে ৫০৮ কোটি।
এমতাবস্থায় রোজকার কাজ চালাতে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন’-এর কাছ থেকে কয়েকশো কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে বণ্টন সংস্থা। বিল মেটানোর ব্যাপারে বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে ফের কথা শুরু হয়েছে। আর এ বার তো আদায়ের ‘টার্গেট’ই বেঁধে দেওয়া হল। “সব মিলিয়ে যে সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তাতে অর্থবর্ষের শেষে সঙ্কট অনেকটাই কাটতে পারে।” মন্তব্য এক বণ্টন-কর্তার। রাজ্যের বিদ্যুৎ-সচিব গোপালকৃষ্ণের কথায়, “আমাদের অন্যতম লক্ষ্য, রাজস্ব আদায় বাড়ানো। বিল আদায়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল। অন্যান্য দিকেও কিছু আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কর্মীদের সাহায্যে এ সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যাবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.