গ্রীষ্মের হাঁসফাঁস দুপুরে আরাম কিনতে চড়া দাম দিতে হবে সিইএসসি-র গ্রাহকদের। তা সে এসি চালান, আর পাখাই চালান। দুপুরে চাহিদা বেশি বলে ওই সময়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম দিনের অন্য সময়ের তুলনায় অনেকটাই বেশি রাখার কথা ভাবছে সিইএসসি।
সিইএসসি-র বক্তব্য, সাধারণ ভাবে বাজারে জিনিসপত্রের চাহিদা অনুযায়ী তার দাম ওঠা-পড়া করে। বিদ্যুতকেও সেই নিয়মে ফেলতে চায় সিইএসসি। যখন চাহিদা তুঙ্গে, অন্য জিনিসের মতো বিদ্যুতের দামও তখন বেশি হবে। আর চাহিদা কমে গেলে, দামও কমবে। বিদ্যুত্ শিল্পের পরিভাষায় একে বলে ‘ডিমান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’। দেশে বেসরকারি বিদ্যুত্ সরবরাহকারী সংস্থাগুলির মধ্যে অনেকেই এখন এই ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবছে বলে বিদ্যুত্-কর্তারা জানিয়েছেন।
কী ভাবে দুপুরের এই অতিরিক্ত বিদ্যুত্ খরচ পরিমাপ করবে সিইএসসি? সংস্থা সূত্রে বলা হয়, মিটারের সঙ্গে একটি করে যন্ত্র লাগানো হবে। সেই যন্ত্রে দুপুরের নির্দিষ্ট সময়ে কত বিল উঠছে, তার হিসেব থাকবে। সেই মতো মাসের শেষে প্রতি গ্রাহক দুপুরে কত বিদ্যুত্ খরচ করলেন, তা জানতে পারবে সিইএসসি। সেই অনুযায়ী মাসের বিল হবে। দুপুরে পাখা বা এসি চালানোর জন্য অতিরিক্ত কত মিটার উঠছে, তা-ও বিলের সঙ্গে গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া হবে। সিইএসসি সূত্রে বলা হয়, এই নতুন ব্যবস্থায় কোন কোন গ্রাহক দুপুরে মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুত্ খরচ করছেন, তার তালিকা তৈরি করতে পারবে ওই সংস্থা। সেই সব বাড়িতে খোঁজ নিয়ে সিইএসসি দেখবে, কেন এত বেশি বিদ্যুত্ খরচ হচ্ছে। এর ফলে যাঁরা কোনও রকম অনুমতি ছাড়াই বাড়িতে এসি লাগিয়ে নিয়েছেন, তাঁদেরও ঠিক ভাবে চিহ্নিত করা যাবে। চলতি বছরেই পরীক্ষামূলক ভাবে শহরের কয়েকটি এলাকায় এই নতুন বিলিং পদ্ধতি শুরু করতে চাইছে সংস্থা।
সংস্থার এক কর্তার মতে, গত বছর গ্রীষ্মে সিইএসসি এলাকায় এক দিন বিদ্যুতের চাহিদা হঠাত্ই ১৯০৪ মেগাওয়াট হয়ে যায়। লোডশেডিং না হলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাদের। কারণ এই ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে বিদ্যুতের উত্পাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সরবরাহ এবং সংবহনের (ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রান্সমিশন) ক্ষেত্রেও আরও উন্নত পরিকাঠামো এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। তার জন্য লগ্নি করতে হয় বহু কোটি টাকা।
অথচ, গরমের কয়েকটি দিনের জন্য ওই ধরনের পরিকাঠামো নির্মাণে কোটি-কোটি টাকা খরচ করার কোনও মানেই হয় না বলে সিইএসসি-র যুক্তি। তা ছাড়া, সংস্থা ওই খরচ করলেও তার বোঝা গিয়ে পড়বে গ্রাহকদের ঘাড়েই। সেই কারণেই দিন-রাতের বিভিন্ন সময়ে মাসুলের রকমফের করেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ভাবনা চলছে।
তা হলে গ্রীষ্মের দুপুরে সব চেয়ে বেশি চাহিদার সময়ে বিদ্যুতের কী দাম নেবে সিইএসসি? সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, সমীক্ষার কাজ শেষ হলে তবেই বোঝা যাবে ইউনিট প্রতি দাম কী হবে। কোন সময়ে বিদ্যুতের দাম কত হবে, তা সময়মতো জানতে পারবেন গ্রাহকেরা। |