প্রতিবাদীদের ঠেকাতে পথে পুলিশ নামিয়েও শেষমেশ পিছু হটল ইউক্রেন প্রশাসন। গত তিন সপ্তাহ ধরে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল এই দেশ। আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল রাজধানী কিয়েভের ইন্ডিপেনডেন্স স্কোয়ার। কনকনে ঠান্ডায় এখানেই তাঁবু খাটিয়ে থাকছেন প্রতিবাদীরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে ওই এলাকা ফাঁকা করতে হামলা চালায় এক বিশাল পুলিশ বাহিনী। তবে বুধবার সকালে আর দেখা মিলল না তাদের।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাকি রুশ নেতৃত্বাধীন কাস্টমস ইউনিয়ন, কোন দলে নাম লেখাবে ইউক্রেন এখনও ঠিক হয়নি তা। দেশবাসীর অভিযোগ, তাঁদের ঠকিয়ে তলে তলে পুতিনের দেশের সঙ্গেই হাত মেলাতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ।
রাজধানী কিয়েভের রাস্তাঘাট আপাতত ঢেকে সাদা বরফের চাদরে। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৮ ডিগ্রি নীচে। তাতে বিদ্রোহের পারদ কিন্তু নামছে না মোটেই। গত রবিবারই রাতে ইন্ডিপেনডেন্স স্কোয়ারে এক জমায়েতে সামিল হয়েছিলেন হাজার দশেক লোক। প্রতিবাদীদের রোষের কবল থেকে রেহাই পাননি লেনিনও। সে দিনই মুখ থুবড়ে পড়েছিল এগারো ফুট উঁচু এক লেনিন মূর্তি। রাস্তাঘাট, প্রধান সরকারি দফতর বিদ্রোহীরা নিজেদের কব্জায় আনলেও এত দিন তাদের উৎখাত করার চেষ্টা করেনি প্রশাসন।
মঙ্গলাবার রাতেই পুলিশের সঙ্গে প্রথম সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিদ্রোহীরা। ইন্ডিপেনডেন্স স্কোয়ার লাগোয়া রাস্তা ফাঁকা করতে করতে ক্রমশ বিক্ষোভকারীদের বেশ খানিকটা কোণঠাসাও করে ফেলে তারা। এ দিকে পুলিশের মোকাবিলা করতে তত ক্ষণে মানবশৃঙ্খল গড়ে তুলেছেন প্রতিবাদীরা। পপস্টার রুসলানা থেকে বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ক্লিটসচকো, আক্রমণ না করতে ক্রমাগত আবেদন জানাচ্ছেন মঞ্চ থেকে। হাতাহাতিতে দু’পক্ষের লোকজনই জখম হয়েছেন কমবেশি। আটক করা হয়েছে ন’জনকে।
তবে বিদ্রোহীদের উপর বিশেষ বল প্রয়োগ করেনি ইয়ানুকোভিচের পুলিশ। পরে সরকারি তরফে জানানো হয়েছে, অন্যদের অসুবিধের কথা মাথায় রেখেই রাস্তাঘাট ফাঁকা করতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বিদ্রোহীদের উপর চড়াও হতে নয়। পুলিশকে তাই সংযত থাকার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিয়েভের সিটি হলের বাইরেও কাল রাতে জড়ো হয় পুলিশের একটি বিশাল দল। এখানেই আপৎকালীন হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। বুধবার সকালে সেখান থেকেও তুলে নেওয়া হয় পুলিশ।
সরকারের যুক্তি অবশ্য শান্ত করতে পারেনি প্রতিবাদীদের। বিরোধী দলের নেতা ক্লিটসচকো যেমন বলেছেন, বিজ্ঞানের নিয়মই এটা যে চাপ যত বাড়বে, প্রতিবাদও বাড়বে পাল্লা দিয়ে। পুলিশের পিছু হটাকে নিজেদের জয় হিসেবেই দেখছেন তাঁরা।
ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ দিশা ঠিক করতে ইতিমধ্যেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশ দফতরের প্রধান ক্যাথরিন অ্যাশটন, আমেরিকার উপ-বিদেশসচিব ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। রাতের অন্ধকারে বিদ্রোহীদের উপর পুলিশি হানার
কড়া নিন্দা জানিয়েছেন দু’জনেই। মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি
বুধবার জানান, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে পুলিশের ব্যাটন বা বুলডোজার চালানো যেমন সমর্থন করা যায় না তেমনই তা গণতন্ত্রের জন্যও তা অস্বাস্থ্যকর।
|