ইস্টবেঙ্গল কোচ আর্মান্দো কোলাসোর সাফল্যের গ্রাফ পুণেতে নিম্নমুখী করে দিয়েছিলেন তিনি। ইউনাইটেডকে এক তরফা হারিয়ে করিম বেঞ্চারিফার সাফল্য গ্রাফ যখন উঠতে শুরু করেছে ঠিক তখনই সবুজ-মেরুন পালতোলা নৌকার সামনে হাজির সেই মূর্তিমান!
আই লিগ টেবলে নবম স্থানে থাকা (১২ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট) করিমের মোহনবাগান বুধবার পারবে কি সেই ইউসুফ ইয়াকুবুর চ্যালেঞ্জ উপড়ে ফেলতে? গোল করলেই তাঁর বিখ্যাত ‘স্নেক ডান্স’ দর্শকদের উপহার দেন ইয়াকুবু। বলছেন, “গোল করলে কল্যাণীতেও ‘স্নেক ডান্স’ দেখাব।”
মঙ্গলবার দুপুরে অনুশীলন সেরে হোটেলে ফেরার পথে ইয়াকুবুর কথা শুনেই বাগান কোচের গলায় সম্ভ্রম। “কমপ্লিট ফুটবলার। মুম্বই এফসি-র সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সটা দেখুন। ইয়াকুবু একাই তো ইস্টবেঙ্গল, পুণে এফসি-কে হারিয়ে দিয়ে গেল। ও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে না। আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে।”
মুম্বই এফসি কোচ খালিদ জামিলও যে ‘ইয়াকুবু এফেক্ট’-এর দৌলতেই বলছেন, “ওডাফার জন্য গেমপ্ল্যান তৈরি। ওকে ফাঁকা জায়গা দেব না। ওরা ইয়াকুবুকে জালবন্দি করতে চাইলে ঠকবে। ও জানে বিপক্ষের জাল কেটে কী ভাবে বেরিয়ে আসতে হয়।”
আর এর পর ইয়াকুবু যা বলছেন তা শুনে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের পিলে চমকে যেতে পারে। শেষ বিকেলে টিম হোটেলের লবিতে রাখা সান্তাক্লজের পাশে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে তাঁর মন্তব্য, “ক্রিস্টোফারকে ইচ্ছা থাকলেও দেখা হয়নি। তবে ওডাফা দুর্দান্ত। করিমও ঝানু ট্যাকটিশিয়ান। কিন্তু মন বলছে, কাল আমরাই জিতব। আল্লা আমাকে দিয়ে একটা গোলও করাবেন।” |
মোহনবাগানের সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে সেই ১৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করলেও গোল পার্থক্যে লিগ টেবলে সপ্তম স্থানে রফি, ক্লাইম্যাক্স, প্রদীপদের মুম্বই এফসি। লিগের প্রথম পর্বে এক গোলে মুম্বইয়ের দলটিকে হারিয়েছিল মোহনবাগান। ঘরের মাঠেও সেই অমূল্য তিন পয়েন্ট তুলতে মরিয়া রাম মালিকরা।
সালগাওকরে থাকার সময় ইয়াকুবুর সঙ্গে ঘর করেছেন করিম। তিনি ভাল ভাবেই জানেন, ইয়াকুবুর অফ দ্য বল দৌড়, চটজলদি টার্নিং, জটলার মধ্যে ‘বল স্ক্রিনিং’ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অবলীলায় তিন-চার জনকে কাটিয়ে গোলে নিখুঁত ভাবে বল রাখার দক্ষতা। তাই এ দিন অনুশীলনে ইয়াকুবুকে বোতলবন্দি করার জন্য চার ব্যাক এবং দলের হোল্ডিং মিডিও ডেনসনকে নিয়ে জোনাল মার্কিংয়ে জোর দিলেন। মোদ্দা কথা, ইয়াকুবু বল ধরলেই ডিফেন্ডার ছাড়াও মাঝমাঠ থেকে এক জন নেমে এসে বাঁধা দেবেন। দলে কোনও পরিবর্তন নেই। ইউনাইটেড ম্যাচের মতোই র্যান্টির পর ইয়াকুবুদের মাত করতে করিমের ছক সেই ৪-৪-২। কিন্তু শেষ বেলায় যে ডেনসন গোড়ালিতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন! বাগান শিবির যদিও আশাবাদী, ডেনসনের খেলার ব্যাপারে। তবে যদি একান্তই না খেলতে পারেন তার জন্য তৈরি রাখা হচ্ছে আইবরকে।
ইউনাইটেড ম্যাচে গোলে ফেরা বাগান অধিনায়ক যদিও এ দিন মুখ খোলেননি। কিন্তু সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে অভিষেক ম্যাচেই জোড়া গোল করে হঠাৎই তারকা বনে যাওয়া ক্রিস্টোফার কিন্তু বলে গেলেন, “আরে ইয়াকুবু, ক্রিস্টোফার বা ওডাফা নয়। এটা টিম গেম।” পরক্ষণেই যদিও বলে ফেললেন, “মাঠে তো নামি গোল করে দলকে জেতাতেই।” আদর্শ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর উদাহরণ টেনে বলছেন, “রোনাল্ডোও তো চার বছর ধরে ফিফার বর্ষ সেরা ফুটবলার হতে হতেও হয় না। হতাশ হয় কি? আমিও চার বছর পরিশ্রমের পর যখন বড় দলে এসেছি তখন সেরাটাই দিতে চাই। ধর্মগুরু ডেভিড ওলাবোনি ইতিবাচক ভাবতেই শিখিয়েছেন।”
ধর্মগুরুর বাণী, কিংবা ওডাফার গোলের জন্য আকুতির বদান্যতায় কল্যাণীতে বুধবার ‘সাপের নাচন’ বন্ধ হবে কি? জানতে অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টা। |