|
|
|
|
ডেবরায় ধৃত বেড়ে ৪৩, মহিলারাও বাদ গেলেন না
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
তল্লাশি, পুলিশি টহল আর দফায় দফায় ধরপাকড় গত কয়েকদিনে এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেবরার লোয়াদা এলাকার রোজনামচা। গত ৫ ডিসেম্বর রাতে তৃণমূলের পার্টি অফিস পোড়ানো ও পরদিন দলের প্রতিবাদ মিছিলে হামলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে গোলমাল শুরু হয়েছিল। সংঘর্ষ বেধেছিল সিপিএম-তৃণমূলে। তারপর থেকে দফায় দফায় গ্রেফতার করা হচ্ছে সিপিএম নেতা-কর্মীদের। সোমবার সন্ধ্যায় ধৃত ১২ জন মহিলা-সহ ১৭ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থককে মঙ্গলবার মেদিনীপুর জেলা আদালতে হাজির করা হয়। তাঁদের সকলকেই এক দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক। এ দিন দুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে ঘটনার মূল অভিযুক্ত সিপিএমের লোয়াদা লোকাল কমিটির সম্পাদক রবীন দত্তকে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন সিপিএমের ৪৩ জন নেতা-কর্মী। এই অবস্থায় এলাকার অনেক সিপিএম কর্মী-সমর্থক এলাকার বাইরে রয়েছেন।
গোটা ঘটনায় ‘আইনের অপব্যবহারে’র অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “আইনের অপব্যবহার চলছে। আমাদের কর্মীরা অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে। পুলিশ আর গুন্ডাদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে কর্মী-সমর্থকদের গা ঢাকা দিতে হচ্ছে। আমরা আইনি পথেই লড়াই চালাব।” জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায় অবশ্য দাবি করেন, “পুলিশের তদন্তে যাদের নাম উঠে আসছে, তাদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সিপিএমের দলীয় ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” ডেবরা পুলিশেরও বক্তব্য, পুলিশ হেফাজতে থাকা ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ও তদন্তে উঠে নাম থেকেই ধরপাকড় চলছে।
ডেবরা ব্লকের লোয়াদা গ্রাম পঞ্চায়েতের চকবাজিত গ্রামে গত ৫ ডিসেম্বর রাতে তৃণমূলের পার্টি অফিস সিপিএমের লোকজন পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ৬ তারিখ দুপুরে এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল। সেই মিছিল চকবাজিত ছাড়িয়ে গোটগেড়িয়া গ্রামে ঢুকতেই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। তার জেরে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ বাধে। এলাকায় গিয়ে আক্রান্ত হন পুলিশকর্মীরা। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার পরে এলাকায় গিয়েছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষও। পুলিশ ১৪ জনের বিরুদ্ধে সুয়ো-মোটো মামলা রুজু করে। তৃণমূলের তরফে পৃথক দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়। সেই রাতেই গ্রেফতার হন সিপিএমের ডেবরা জোনাল সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডল-সহ দলের ১৫ জন নেতা-কর্মী।
সিপিএমের তরফে লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, তাঁরা পুলিশে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছেন। এ দিকে, ধরপাকড়ও চলতে থাকে। ৭ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন আরও ১০ জন। সকলেই সিপিএমের কর্মী-সমর্থক। এলাকার অধিকাংশ সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে ততক্ষণে তালা পড়ে গিয়েছে। তাঁরা ব্লকের অন্যত্র অথবা জেলা সদরে ঠাঁই নিয়েছেন। সোমবার গ্রেফতার হন আলো দাস, মধু হেমব্রম-সহ ১৭জন কর্মী-সমর্থক। তাঁদের মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে পুলিশ। আর মঙ্গলবার দুপুরে বালিচক থেকে ধরা হয় সিপিএমের লোয়াদা লোকাল কমিটির সম্পাদক রবীন দত্তকে।
সিপিএমের দাবি, তৃণমূলের পার্টি অফিস দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে পুড়েছে। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সেই ঘটনায় সিপিএম কর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে। আর মিছিলে হামলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিপিএম নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, গোটগেড়িয়ায় রবীন দত্তের বাড়ি ভাঙচুর করতে যাচ্ছিল মিছিলটি। তাই গ্রামবাসীরা তা প্রতিহত করেছেন। পুলিশের উপর হামলাতেও দলের কেউ জড়িত নয় বলে সিপিএম নেতারা দাবি করেছেন।
এ দিকে, গোটা ঘটনার ফায়দা তুলতে কসুর করছে তৃণমূল। জেলা জুড়েই সিপিএম এখন কোণঠাসা। তবে ডেবরার লোয়াদা এলাকায় তাদের কিছুটা হলেও দাপট ছিল। এই পরিস্থিতিতে লোয়াদায় সমর্থন অনুকূলে নেতা মরিয়া তৃণমূল। ইতিমধ্যে এই ঘটনা নিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে তারা প্রতিবাদ মিছিল করেছে। আজ, বুধবার লোয়াদার আঁকড়া গ্রামে প্রতিবাদ সভা ডেকেছে তৃণমূল। সেখানে জেলা সভাপতি দীনেন রায়, বিধায়ক মৃগেন মাইতি-সহ জেলার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। |
পুরনো খবর: সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত ডেবরায় আহত দু’পক্ষের ২৫, আক্রান্ত পুলিশও |
|
|
|
|
|