লোকসভা ভোটের আগে ভাবমূর্তি বড় বালাই। তাই ত্রিশঙ্কু দিল্লিতে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে তার দায় যাতে নিতে না হয়, মূলত সে কথা ভেবেই অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সমর্থনের জোরালো ইঙ্গিত দিল কংগ্রেস। কিন্তু কেজরিওয়াল ফের জানিয়ে দিলেন, তাঁরা কংগ্রেস-বিজেপি কাউকেই সমর্থন দেবেন না, নেবেনও না। বরং চাইবেন পুনর্নির্বাচন। আবার ভাবমূর্তির কথা ভেবেই তলায় তলায় কোনও সমঝোতায় নারাজ বিজেপি। তাদের সাফ কথা, সরকার গড়ার অবস্থায় তারা নেই। গরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারলে আম আদমি পার্টিই সরকার গড়ুক। ফের ভোটে তৈরি তারাও। ফলে ভবিষ্যতে যা-ই হোক, সরকার গঠন নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত রইল দিল্লিতে।
তর্কযোগ্য ভাবে দিনের সব চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিবৃতি অবশ্য দিয়েছেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে দিল্লির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ। বলেছেন, “দিল্লির কিছু নেতার দাবি, সরকার গঠনের জন্য আম আদমি পার্টিকে বাইরে থেকে সমর্থন করা উচিত কংগ্রেসের। দিল্লির ৮ কংগ্রেস বিধায়ককে আজ বৈঠকে ডেকেছিলাম। তাঁদেরও একই মত। এই বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করছে হাইকম্যান্ড। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর সরকার গঠনের জন্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আমন্ত্রণ জানালেই কংগ্রেস আনুষ্ঠানিক ভাবে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।”
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সনিয়া গাঁধীর সবুজ সঙ্কেত না থাকলে এমন মন্তব্য করতে পারতেন না শাকিল। অথচ গত কালও শীলা দীক্ষিত বলেন, আপ-কে সমর্থনের প্রশ্নই ওঠে না। হাইকম্যান্ডের তরফেও বলা হয়েছিল, কেজরিওয়াল সমর্থন চাইলে ভেবে দেখা যাবে। কিন্তু আজ শাকিলের এই কথার পাশাপাশি হরিয়ানার কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা বলেন, “সরকার তৈরির জন্য আপ-কে সমর্থন করা উচিত কংগ্রেসের। এটা আমার ব্যক্তিগত মত।” আর এক নেতা বলেন, “সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে কংগ্রেস সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে সমর্থনের অবস্থান নিয়ে রেখেছে। ফলে আপ-কে সমর্থনের প্রস্তাব না দিলে সেই নীতির লঙ্ঘন হবে।”
তড়িঘড়ি এই অবস্থান কেন?
জবাবে কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্য, কেজরিওয়াল যদি শেষ পর্যন্ত সমর্থন নিতে রাজি হন, তা হলে তো কথাই নেই। লোকসভা ভোটের আগে এই বার্তাই যাবে যে, কংগ্রেসেরই গ্রহণযোগ্যতা বেশি। আর ‘আপ’ সমর্থন না নিলেও কংগ্রেসের অস্ত্র তৈরি রইল। তখন কেউ আর এই অনিশ্চয়তা বা রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলতে পারবে না। বরং কংগ্রেসই বার্তা দিতে পারবে যে, জনতার নির্বাচিত দলকে সমর্থনে তারা তৈরি ছিল। কিন্তু বিজেপি এবং আপ বিরোধী আসনে বসার জন্য প্রতিযোগিতা করছে। ফলে কংগ্রেসই একমাত্র বিকল্প। ভবিষ্যতে দিল্লিতে ফের নির্বাচন হলে স্থায়িত্ব-ইস্যুকে পুঁজি করেই ভোটে যাওয়া যাবে।
মজার কথা, আজ সন্ধ্যায় শাকিল ওই মন্তব্য করলেও বিকেলে কিন্তু আপ-কে সমর্থন-প্রসঙ্গে কংগ্রেস মুখপাত্র রাজ বব্বর বলেছিলেন, “বেগানি শাদি মে আবদুল্লাহ দিবানা।” অর্থাৎ, এখানে আমাদের কোনও কাজ নেই। কিছুটা কটাক্ষের সুরেই রাজ বলেন, “ওরা (বিজেপি ও আপ) যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণ করতে জোট সরকার গড়ুক। বিদ্যুতের বিল যদি ৩০ থেকে ৫০ % কমে যায়, ৭৫০ লিটার জল যদি বিনামূল্যে মেলে, তার চেয়ে ভাল কী হতে পারে!”
কিন্তু কেজরিওয়াল আজই আবার পাল্টা ‘প্রস্তাব’ দিয়েছেন, “একক বৃহত্তম দল হিসেবে বিজেপি সরকার গড়ুক কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে।” তবে এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা পুনর্নির্বাচনের জন্য তৈরি। সে ক্ষেত্রে আরও ভাল করে প্রচার করা যাবে। কিছু নতুন প্রার্থীও দেওয়া যাবে।
নাটক জমিয়ে বিজেপির তরফে দিল্লির প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিতিন গডকড়ী নতুন বিধায়কদের বলেছেন, “নিজেদের এখনও ভোট-প্রার্থী বলেই ভাবুন।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বিজয় গয়ালের বক্তব্য, “জোট গড়ার চেয়ে বরং বিরোধী আসনে বসব।” স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন না মিললে সরকার গড়তে না-এগোনোর পরামর্শ তাঁদের দিয়ে রেখেছেন নরেন্দ্র মোদী। কারণ, সেই ভাবমূর্তি। কারও কারও মতে, আরও একটি কারণও রয়েছে। আপ-এর সঙ্গে জোট সরকার গড়লে কেজরিওয়ালরা নিত্যনতুন দাবিতে তাঁদের চাপে রাখবেন বলেও আশঙ্কা রয়েছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের।
অতএব, সকলেই সাবধানী। আর দিল্লির সঙ্গী অনিশ্চয়তা।
|