|
|
|
|
কার হাতে, কোন পথে, হাতড়াচ্ছে কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১০ ডিসেম্বর |
নেতা না নীতি?
কার ভুলে চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটে এত বড় বিপর্যয়, তা বাছতে গিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে বিভ্রান্তি এবং দিশাহীনতা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। নেতৃত্বের দোষ-গুণ নিয়ে দলের অন্দরে টানাপোড়েনের মধ্যেই লোকসভা ভোটের আগে জনতার মন পেতে আরও বেশি করে ভর্তুকি-নীতির উপরে জোর দেওয়ার দাবি উঠে গেল কংগ্রেসের অন্দরে।
ইউপিএ সরকারের দু’টি মেয়াদে জনতার মন পেতে মূলত সনিয়া গাঁধীর চাপে একের পর এক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে কংগ্রেস। কিন্তু তাতে কোষাগারে যতটা টান পড়েছে, ততটা কর্মসংস্থান হয়নি। উল্টে বেড়েছে মূল্যবৃদ্ধি আর বেকারি। ফলে জমেছে ক্ষোভ। এমনকী সনিয়ার সাধের খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প প্রথম যে দু’টি রাজ্যে চালু হয়েছিল, সেই দিল্লি এবং রাজস্থানেও প্রায় মাটিতে মিশে গিয়েছে কংগ্রেস। ভোট বিপর্যয়ের পরে এই দিকটিতেও আঙুল উঠেছিল। কংগ্রেসের অন্দরেও অনেকে বলেছিলেন, এ ভাবে জনমোহিনী নীতি নিয়ে কোষাগার শূন্য করার থেকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটা বেশি জরুরি। বিপর্যয়ের পর্যালোচনায় বসে লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে সেই জনমোহিনী নীতিকেই আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরার কথা শোনা গেল কংগ্রেসের অন্দরে।
তা হলে কি ভর্তুকি-রাজেই ফিরবে কংগ্রেস? অনেকের বক্তব্য, সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে প্রচার করেই গত লোকসভা ভোটে সাফল্য পেয়েছিল কংগ্রেস। এ বারে মূল সমস্যা হল সরকারের সংস্কার নীতি। পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের মতো সিদ্ধান্ত মানুষ মানেননি। তা ছাড়া আর্থিক ঘাটতি কমাতে গিয়ে সরকার যে ভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই করছে, তাতেও হিতে বিপরীত হয়েছে। গত কাল কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর ডাকা পর্যালোচনা বৈঠকে একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ভরাডুবির নেপথ্যে মূল্যবৃদ্ধি একটা বড় কারণ। কোষাগারের হাল ফেরাতে অর্থমন্ত্রী হিসেবে পি চিদম্বরম যে সব পদক্ষেপ করেছেন, তারও সমালোচনা করেছেন অনেকে। এই নেতাদের এখন দাবি, ভোটের আগে কমানো হোক পেট্রোল-ডিজেলের দাম। ভর্তুকি মূল্যে বরাদ্দ রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়িয়ে ১২টি করার দাবিও উঠেছে।
কিন্তু তাতেও কি হাল ফিরবে? এই সরকারই তো একশো দিনের কাজ, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে। আলোচনায় উঠছে সে কথাও। অনেকেই বলেছেন, চার রাজ্যের ভোটে খাদ্য সুরক্ষা, জমি আইন, একশো দিনের কাজ নিয়ে ঢালাও প্রচার করেছিলেন রাহুল। কিন্তু তা যে হালে পানি পায়নি, তা স্পষ্ট। দলের একাধিক নেতা আজ বলেন, আসলে প্রচারের দিশাটাই ঠিক নেই। লোকসভা ভোটে নতুন কিছু নিয়ে নামতে হবে। সেই ‘নতুন কিছু’টা কী? বলতে পারছেন না কেউই!
নীতির মতোই নেতৃত্ব নিয়েও চরম বিভ্রান্তি কংগ্রেসের অন্দরে। হারের কারণ এবং দায়ভার নিয়ে কংগ্রেসে চাপানউতোর এতটাই যে, লোকসভা ভোটের ইস্তাহার তৈরি থেকে শুরু করে প্রার্থী মনোনয়নের সব কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন ভাবে শুরু করার দাবিও জোরালো হচ্ছে দলের মধ্যে। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীই যাতে লোকসভা ভোটে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন, সে দাবিও উঠছে।
কংগ্রেস পরিবারে অশান্তি কোথায় পৌঁছেছে, তার প্রমাণ আজ মিলেছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মণিশঙ্কর আইয়ারের কথায়। কোনও রাখঢাক না করে আইয়ার বলেন, “২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে মনমোহন সিংহকে প্রধানমন্ত্রী করাই উচিত হয়নি।” পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেসের উচিত এ বার বিরোধী আসনে বসা। সেই সুযোগে নতুন করে দলকে সাজাতে পারেন রাহুল গাঁধী।
মণিশঙ্করের মন্তব্যকে তাঁর ব্যক্তিগত মত বলে উড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় মন্ত্রিসভার কংগ্রেস সদস্য শ্রীকান্ত জেনার মতো নেতারা বলেন, ২০০৯ সালে মনমোহনের ভাবমূর্তি নিয়ে সমস্যা ছিল না। কিন্তু পরবর্তী কালে একের পর এক ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী মৌন থাকাতেই সমস্যা বেড়েছে। তাঁর বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর পদটি একেবারেই একটি রাজনৈতিক পদ। ইন্দিরা গাঁধী থেকে শুরু করে অটলবিহারী বাজপেয়ী বারবার তার প্রমাণ দিয়েছেন।
এই অবস্থায় মনমোহনের নেতৃত্বে আর ভোটে যাওয়ার যে কোনও প্রশ্ন নেই, তা স্পষ্ট। তা হলে কে? গত কালই দিগ্বিজয় সিংহ, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ারা দাবি তুলেছিলেন, এখনই রাহুলের নাম প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়া হোক। কিন্তু কেরল কংগ্রেসের নেতা পি সি চাকো আজ বলেন, “দিগ্বিজয়ের কথার কোনও গুরুত্ব নেই। লোকসভা ভোটের আগে সনিয়াই দলকে
নেতৃত্ব দেবেন। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে ঘোষণা করারও প্রয়োজন নেই।”
ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও এই মতকে সমর্থন করেন। একই সঙ্গে দলের প্রচার কৌশল নিয়েও প্রশ্ন তুলে তিনি জানান, কংগ্রেসের এখন আগ্রাসী প্রচার করা উচিত। ওই মন্ত্রীর কথায়, “ঠিক যে ভাবে নরেন্দ্র মোদী করছেন। মোদীর বক্তৃতায় কোনও সারবস্তু নেই। কিন্তু তাতেই তিনি জনতার মন পাচ্ছেন। যা রাহুল পারছেন না।”
রাহুলের নেতৃত্বে যে ভাবে প্রার্থী বাছাই হচ্ছে, তা নিয়েও কথা উঠছে কংগ্রেসের অন্দরে। দাবি উঠছে, প্রার্থী বাছাইয়ে এমন নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হোক, যাঁরা মাঠে নেমে রাজনীতি করেন। দলের এক মুখপাত্রের মন্তব্য, “এ বারে যে ভাবে প্রার্থী বাছাই হয়েছে, তা লোকসভা ভোটে করলে পঞ্চাশটিও আসন জুটবে না!”
সব মিলিয়ে এক বিপুল চ্যালেঞ্জের সামনে সনিয়া গাঁধী। শেষ পর্যন্ত তিনি পারবেন কি?
এখন সেটাই দেখার।
|
পুরনো খবর: কংগ্রেস নেতৃত্বকে দুষে ময়দানে পওয়ার, অন্যরাও |
|
|
|
|
|