সেন্ট্রাল হলে মমতাকে ঘিরে সব দলেরই ভিড়
ট মাস পর দিল্লিতে পা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন নয় যে কোনও রাজনৈতিক সন্ধিস্থাপন করতে তাঁর এই সফর, এমন নয় যে কোনও রাজনৈতিক বিদ্রোহ ঘোষণা করতে দিল্লি এলেন তিনি। তবে লোকসভা ভোটের আগে-পরে সব রকম সম্ভাবনার জন্য তৈরি থাকার লক্ষ্যেই যে এই সফর, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
১৯৮৪ সালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পরাস্ত করে সংসদে প্রবেশ করেছিলেন মমতা। আজ অনেক উত্থানপতনের পরে তিনি যখন সংসদের সেন্ট্রাল হলে তাঁর পছন্দের পুরনো আসনটিতে এসে বসলেন, তখন তাঁকে ঘিরে কংগ্রেস থেকে বিজেপি, জগন্মোহন থেকে থাম্বিদুরাই যেন জোট রাজনীতির রামধনু।
মমতা সংসদে ঢুকতেই কাছে এলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। সঙ্গে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। মমতাকে আডবাণীর সস্নেহ প্রশ্ন, “কেমন আছ তুমি?”
“আমি ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? কমলাজি কেমন আছেন?”
পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যের সাম্প্রতিক সব ক’টি নির্বাচনে যে ভাবে তৃণমূল জিতেছে, সে জন্য অভিনন্দন জানালেন রাজনাথ। শুধু আডবাণী বা রাজনাথ নন, রবিশঙ্কর প্রসাদ থেকে শাহনওয়াজ হুসেন, প্রকাশ জাভড়েকর বিজেপির নানা স্তরের নেতা কথা বলে গেলেন মমতার সঙ্গে।
ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠল, তৃণমূল কি ফের এনডিএ-তে যোগ দিতে পারে? মমতার জবাব, “কোনও একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আদর্শগত মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু সেই দলের নেতাকে অশ্রদ্ধা করা, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয়। তা ছাড়া, নানা দলের সাংসদ আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত। তাঁদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই।”
ফের সংসদে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুকুল রায়। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
বস্তুত, আজ সব দলের সাংসদেরই কৌতূহলী ভিড় ছিল মমতাকে ঘিরে। তাঁকে দেখামাত্র প্রায় ছুটে চলে এলেন ওয়াইএসআর কংগ্রেস নেতা জগন্মোহন রেড্ডি। মমতার পাশে বসে পরামর্শ চাইলেন, তেলঙ্গানা নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব আনা উচিত কিনা। মমতা তাঁকে বললেন, লোকসভা ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। মানুষ কংগ্রেসকে পরিত্যাগ করেছে। অধিবেশনও আর বেশি দিন নেই। এখন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার কোনও মানে হয় না। এর পর রায়লসীমার কংগ্রেস সাংসদেরাও দল বেঁধে মমতার কাছে এসে পৃথক তেলঙ্গানার বিরুদ্ধে কথা বলেন। মমতা তাঁদের বলেন, তিনি রাজ্য ভাগ হওয়ার পক্ষে নন।
এই পর্ব শেষ হতেই মমতার সঙ্গে দেখা করতে এলেন এডিএমকে-র থাম্বিদুরাই, ডিএমকের একাধিক সাংসদ, সুনীল দত্তের মেয়ে কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়া দত্ত। সংসদীয় সৌজন্য মেনে দেখা করে গেলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথ। কথা হল আহমেদ পটেলের সঙ্গেও। তখনই খবর এল স্পিকার মীরাকুমার ডাকছেন। স্পিকারের ঘরে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এলেন মমতা।
তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গেও আজ জমিয়ে গল্প করলেন নেত্রী। তাপস পাল দাড়ি রাখছেন দেখে জানতে চাইলেন কোন ছবির জন্য এই সাজ। কাকলির ওভারকোট দেখে তাঁর সরস মন্তব্য এটা কি লন্ডনের ঠান্ডার কথা ভেবে কেনা! আজ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সেন্ট্রাল হলে বসেই স্থির হল, সন্ধ্যায় সুদীপের বাড়ি কেক কাটা হবে।
তবে শুধু নেতা-নেত্রীরা নন। মমতা এসেছেন খবর পেয়ে সংসদের নিরাপত্তা রক্ষী, ক্যান্টিনের কর্মীরাও ছুটে এলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। এক কথায় মমতা আজ স্বমহিমায় দাপিয়ে বেড়ালেন সংসদে।
সংসদে পুনর্মিলন সেরে মমতার গাড়ি ছুটল জামা মসজিদের দিকে। জামা মসজিদের ৭ নম্বর গেটে ইমাম সৈয়দ আব্দুল গাফুর শাহ বুখারি দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর অভ্যর্থনায়।
গত শনিবার তাঁর ছেলের বিয়ে ছিল। কিন্তু মমতা নিজে আসতে পারেননি। পাঠিয়েছিলেন মুকুল রায় ও ফিরহাদ হাকিমকে। আজ এসে মিষ্টিমুখ করলেন তিনি।
সেখান থেকে বেরিয়ে মুকুল রায়ের নর্থ অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে প্রশাসনিক কাজ সারলেন মুখ্যমন্ত্রী। এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী। বাংলাদেশ সীমান্তের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে জানালেন তিনি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কথা হল। কাল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে বিকেল চারটেয় রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন মমতা। মমতার এ বারের দিল্লি সফরের তাৎপর্য কী? আসলে এই সফরে কোনও প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও ব্যক্তিটি যখন মমতা তখন তা কিছুতেই অরাজনৈতিক হতে পারে না। ব্যক্তিগত সফরের আড়ালে আজ দিনভর আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে বোঝাপড়ার কাজ সারলেন মমতা। এমন নয় যে এখনই কোনও জোট গঠন হচ্ছে। কিন্তু তার সম্ভাবনা খুঁজে বার করাটাই ছিল মমতার লক্ষ্য। যদিও এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তাকে নস্যাৎ করে তিনি বলেছেন, লোকসভা ভোটের পরে কে কী রকম আসন পাবে, তার উপরেই সবটা নির্ভর করছে। মমতার কথায়, “বাচ্চা জন্মানোর আগেই কি তার নাম ঠিক করাটা সমীচীন!” কিন্তু একই সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এটাও বলেছেন যে, আঞ্চলিক দলগুলির উত্থানের সময় হয়ে গিয়েছে। যার ভিত্তি দেশ জুড়ে কংগ্রেস বিরোধিতার হাওয়া।
মমতা বলেন, “যখন কংগ্রেস জোট ছেড়েছিলাম, তখন অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আজ সে সবের জবাব স্পষ্ট। আমরা চলে আসার পরে সরকার একের পর এক জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। মানুষ মর্মাহত।”
চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটে আম জনতার সেই হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে জানিয়ে মমতার মন্তব্য, “কোনও ব্যক্তি বা নেতার নয়, চার রাজ্যে মানুষের জয় হয়েছে।” যে মন্তব্য পক্ষান্তরে নরেন্দ্র মোদীর সাফল্যের দাবিকে খানিকটা খাটো করল বলেই মনে হচ্ছে অনেকের।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.