রোহিণীর পথকর কমানোর দাবিতে রবিবারও বন্ধ থাকল দার্জিলিং-শিলিগুড়ি রুটের সমস্ত ট্যাক্সি চলাচল। এতে ছুটির দিনে দুর্ভোগে পড়েন পর্যটকেরা সহ কয়েক হাজার যাত্রী। এদিন সকাল থেকেই সারা দিনই শিলিগুড়ি জংশন ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ও দার্জিলিং চৌরাস্তার স্ট্যান্ডে যাত্রীদের উদ্বিগ্ন মুখে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার কোনও রাস্তাতেই এ দিন ট্যাক্সি চলেনি। শনিবারও এই রুটে ট্যাক্সি চলাচল বন্ধ ছিল। ১ ডিসেম্বর থেকে শিলিগুড়ি-দার্জিলিঙের রাস্তায় রোহিণীতে টোল গেট বসিয়ে পথকর আদায় করা শুরু করেছে জিটিএ। ট্যাক্সি চালকদের দাবি, যে হারে প্রতিটি গাড়ি পিছু কর নেওয়া হচ্ছে, তা অনেক বেশি। ওই কর ১০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তা না হলে ট্যাক্সি চালানো বন্ধ রেখে প্রতিবাদ আন্দোলন চলবে।
বিষয়টি শুনেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। তিনি বলেন, “জিটিএ সদস্যদের চালকদের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি। তাঁরাই বিষয়টি দেখছেন। আমি ১২ ডিসেম্বর শিলিগুড়ি ফিরব। তখন চালকদের সঙ্গে আলাদা করে বসে স্থায়ী সমাধান খোঁজার চেষ্টা করব।” এর মধ্যেই রবিবার সন্ধ্যায় ফের বৈঠকে বসেন ট্যাক্সি চালকেরা। আজ, সোমবারও তাঁরা ট্যাক্সি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তরাই চালক সংগঠনের সম্পাদক সবিন থাপা বলেন, “সোমবার দার্জিলিঙে টুরিস্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটির সঙ্গে ফের বৈঠক হবে। তারপরেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। ওই ১১ কিলোমিটার রাস্তার জন্য বারবার এত টাকা কর দেওয়া সম্ভব নয়।”
সম্প্রতি টোল গেটের কর নিয়ে ট্যাক্সি চালক এবং মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন জিটিএ-র ভারপ্রাপ্ত চিফ এক্সিকিউটিভ রমেশ আলে। বৈঠকের পরে তিনি এক সপ্তাহ সময় চেয়েছিলেন সমাধান সূত্র খুঁজে বার করার জন্য। |
তাতে প্রাথমিক ভাবে সম্মতিও মিলেছিল ট্যাক্সি চালকদের পক্ষ থেকে। কিন্তু শনিবার রাতেই সিদ্ধান্ত বদলে ফের দার্জিলিং-শিলিগুড়ি রুটে ট্যাক্সি ধর্মধট শুরু করেন চালকরা। এ দিন রমেশ আলে বলেন, “আমরা এক সপ্তাহ সময় চেয়েছিলাম। তা সত্ত্বেও তাঁর কেন ধর্মঘট ডাকলেন, তা খতিয়ে দেখতে শীঘ্রই বৈঠকে বসব। সুষ্টু সমাধান বার করা হবে।” তরাই ট্যাক্সি চালক সংগঠনের সহ-সভাপতি শ্যামল দাস জানান, সোমবারও ধমর্ঘট চলবে। প্রতি দিন শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়া ও আসার সময়ে ৩০ টাকা করে দুই দফায় কর নেওয়া হচ্ছে। আমার প্রতি তিন মাস অন্তর সরকারকে রোড ট্যাক্স দিই। এই অতিরিক্ত কর দেব না। দাবি মানা না হলে ট্যাক্সি ধর্মঘটের মেয়াদ বাড়তে পারে।” ইউনাইটেড ট্যাক্সি সিন্ডিকেটের সভাপতি কাঞ্চন গুরুঙ্গ বলেন, “শনি বার রাতে আমাদের কাছে তরাই ট্যাক্সি চালক সংগঠনের তরফে ফোন করে রবিবার ট্যক্সি না চালানোর অনুরোধ করা হয়। তাতে সম্মতি জানিয়েছি।” যাত্রী ও পর্যটকেরা দার্জিলিং ট্যাক্সি না মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হাকিমপাড়ার বাসিন্দা বিনয় মণ্ডল বলেন, ‘‘পরিবার নিয়ে একদিনের জন্য দার্জিলিং যাব ঠিক করেছিলাম। কিন্তু সেটা আর হল না।” অপর এক পর্যটক দিল্লির সুনীতা পাণ্ডে দার্জিলিং ও গ্যাংটক যাবেন বলে ঠিক করে শিলিগুড়ি এসেছিলেন। প্রথমে দু’দিন দার্জিলিঙে থাকার কথা থাকলেও তা বাতিল করে সরাসরি গ্যাংটকের গাড়ি ধরেন। শিলিগুড়ির একটি পর্যটন সংস্থার কণর্ধার সম্রাট সান্যাল বলেন, “ট্যাক্সি বন্ধ থাকায় পর্যটকদের হয়রানি বেড়েছে। আজ, সোমবারও গাড়ি বন্ধ থাকবে শুনেছি। ধর্মঘটের জেরে এদিন প্রাইভেট নম্বরের গাড়ি ঠিকমত চলাচল করতে পারেনি। জিটিএ কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা উচিত।”
জিটিএ থেকে প্রথমে ঠিক করা হয়, রোহিণীর টোল গেটে বাইকের জন্য ১০ টাকা, ট্যাক্সির জন্য ৩০ টাকা, প্রাইভেট ছোট গাড়ি ৪০ টাকা, বড় গাড়ি, মিনিবাস, পিক আপ ভ্যান ১০০ টাকা এবং ট্রাকের জন্য ১৫০ টাকা করে কর নেওয়া হবে। এই নিয়ে ক্ষোভ ছড়াতেই ট্রাকের জন্য ৮০ টাকা, পিক আপ ভ্যান, মিনিবাসের জন্য ৫০ টাকা করা হয়। বাকি গাড়িগুলির করের হার একই রাখা হয়। প্রতিবার একটি গাড়িকে উঠতে বা নামতে রোহিণী টোল গেটে ওই হারে কর দিতে হচ্ছে।
শিলিগুড়ি-দার্জিলিং রুটে সবচেয়ে সহজ পথ হল ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক। যা তিন বছর আগের ধসের কারণে বন্ধ রয়েছে। শিমুলবাড়ি, গাড়িধূরা হয়ে রোহিণীর রাস্তা ধরে শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং হয়ে দার্জিলিঙের দূরত্ব ৬৩ কিলোমিটার। মিরিক হয়ে দার্জিলিঙের দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার। লাপচু হয়ে ৯৫ কিলোমিটার। পাঙ্খাবাড়ি হয়ে আরও একটি রাস্তায় আছে যার দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার। কিন্তু বিপজ্জনক রাস্তা হওয়ায় সেই রাস্তাটিও কেবলমাত্র পাহাড় থেকে নামার জন্য ব্যবহার করা হয়। ঘুরপথে গাড়ি ভাড়া বেশি লাগায় রোহিণীর রাস্তা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। শনিবার মিরিক হয়ে কিছু গাড়ি চললেও এ দিন কোনও ট্যাক্সি চলেনি। |