পণের টাকা পুরো জোগাড় করতে না পারায় পাত্র বিয়ে করতে আসেননি বলে অভিযোগ। সে অপমানে শুক্রবার আত্মহত্যা করেন ধূপগুড়ির বাসিন্দা পাত্রী বীথি সরকার (১৯)। বীথির বাড়ির লোক ওই পাত্র সত্য কুণ্ডুর নামে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ করেছেন। রবিবার ধূপগুড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয় গ্রিল কারখানার কর্মী সত্যকে। সত্যর অবশ্য দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা।
পুলিশ ও পারিবাবিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্যর পরিবার বীথির বাড়ি থেকে পণ হিসেবে ৫৫ হাজার টাকা ও একটি সোনার চেন দাবি করেছিল। বীথির পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাঁর বাবা দিনমজুর। তিনি কোনওমতে ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। তা শুনে, ‘বাকি টাকা না পেলে বিয়ে করতে যাব না’ বলে ফোনে জানিয়ে দেন সত্য। তারপরেই বীথি আত্মহত্যা করেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি।
বীথির বাবার দাবি, ধূপগুড়ি থানার পুলিশ প্রথমে তাঁর অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেছিল। স্থানীয় বিধায়ক সিপিএমের মমতা রায়ও রবিবার ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে দাবি করেন, তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের চাপেই পুলিশ অভিযোগ নথিভুক্ত করেনি। সেখান থেকেই জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারকে বিধায়ক ফোন করে ক্ষোভও জানান। বিধায়কের কথায়, “অভিযুক্ত পাত্র তৃণমূল কর্মী। তাকে বাঁচাতে ব্লক নেতারা পুলিশকে চাপ দিয়ে শনিবার এফআইআর করাতে দেয়নি।” জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশ অভিযুক্ত পাত্র-সহ তাঁর পরিবারের তিন জনের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে। পরে সত্যকে গ্রেফতারও করা হয়। তবে তাঁর বাবা, মা ও দাদা পলাতক।
পুলিশের দাবি, রোতেই অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, শনিবার রাতেই অভিযোগ রুজু করে আত্মহত্যার প্ররোচনা-সহ পণ চাওয়ার অভিযোগের মামলা রুজু হয়েছে। পাত্র ছাড়াও তার বাবা, মা, দাদার নামে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি অবশ্য বলেন, “কোনও চাপে এফআইআর ফেরানোর মতো ঘটনা ঘটেনি। শনিবার রাতেই মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত চলছে।” ধূপগুড়ির আইসি যুগলচন্দ্র বিশ্বাস জানান, অভিযুক্তের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
ধূপগুড়ির তৃণমূল নেতারা অবশ্য সিপিএম বিধায়কের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তৃণমূল নেতা গুড্ডু সিংহ বলেন, “ওটা বিধায়কের মনগড়া কথা। দলের কেউ অন্যায় করলে, আইন আইনের পথে চলবে। দল এর মধ্যে যাবে না। আর পুলিশকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
পুলিশ জানিয়েছে, ছ’মাস আগে ধূপগুড়ির ভোটপাড়া গ্রামের দিনমজুর পরিবারের মেয়ে বীথির বিয়ে ঠিক হয় ধূপগুড়ির নেতাজি পাড়ার বাসিন্দা সত্যর সঙ্গে। মেয়ের বিয়ে দিতে বীথির বাবা সম্প্রতি এক লক্ষ টাকা নিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে বাড়ি বন্ধক রাখেন বলে তাঁদের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে। গত মঙ্গলবার তিনি পাত্রের বাড়িতে গিয়ে ৪০ হাজার টাকা নগদ দিয়ে বিয়ের পর বকেয়া দেওয়ার আশ্বাস দেন। শুক্রবার আশীর্বাদ হওয়ার কথা ছিল। মেয়ের বাড়ির লোকজন অপেক্ষা করতে থাকেন। অভিযোগ, বিকালে সত্য টেলিফোন করে জানায়, ১৫ হাজার টাকা এবং সোনার চেন না পেলে বিয়ে করা সম্ভব নয়। এর পরে ওই দিন পাত্রীকে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয় বলে অভিযোগ। শনিবার সন্ধ্যায় বীথির বাবা পূর্ণ সরকার পাত্র-সহ চার জনের নামে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ জানাতে থানায় যান। কিন্তু পুলিশ তখন যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। মৃতার মা বুলবুলিদেবী বলেন, “অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি চাই।” সত্য শনিবার অবশ্য দাবি করেছিলেন, “টাকার কোনও কথা বলা হয়নি। বীথি কেন বিষ খেল জানা নেই। আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়।” |