খন্দ-পথ, পর্যটক হারাবে কি শুশুনিয়া
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুশুনিয়া-বিহারীনাথ পাহাড়কে ঘিরে পর্যটনের বিকাশের পরিকল্পনার কথা বার বার ঘোষণা করলেও দুই পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তার হাল ফেরাতে পারেনি জেলা প্রশাসন। বাঁকুড়া শহর ছুঁয়ে শুশুনিয়া ও বিহারীনাথ যাওয়ার রাস্তার অনেকখানি ভেঙে গিয়েছে। খানাখন্দে ভরে ওঠা এই রাস্তায় মাঝে মধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে। ফি বছর শীতে বাঁকুড়া জেলা তো বটেই, পুরুলিয়া, বর্ধমান-সহ দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলা থেকেও শুশুনিয়া ও বিহারীনাথ পাহাড়তলিতে পিকনিক করতে বহু মানুষ আসেন। কিন্তু শীতের শুরুতে এখনও ওই রাস্তার হাল না ফেরানোয় পর্যটনের উপর রুটি রুজি যাঁদের নির্ভর করে সেই সব মানুষদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। কিন্তু পূর্ত দফতর জানিয়েছে, রাস্তাটি ঢেলে সংস্কার করার পরিকল্পনা থাকলেও জানুয়ারি মাসের আগে তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। পূর্ত দফতরের এক জেলা আধিকারিক বলেন, “বাঁকুড়া শালতোড়া রাস্তাটির জন্য ৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। টেন্ডারও ডাকা হয়েছে। জানুয়ারিতে কাজ শুরু হবে।”
শুশুনিয়া পাহাড়তলির শিল্পীদের হাতে তৈরি পাথরের মূর্তির সুনাম রয়েছে। পর্যটকদের অনেকেই বাড়ি ফেরার পথে ব্যাগ ভর্তি করে প্রিয়জনদের উপহার দেওয়ার জন্য ওইসব মূর্তি কেনেন। তা ছাড়া পিকনিক করতে আসা মানুষজনদের জল, জ্বালানি এনে দেওয়া-সহ নানা কাজ করে অনেকে রোজগার করেন। কিন্তু রাস্তার ওই হাল তাঁদের এ বার ভাবাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানকার পর্যটনের বিকাশের জন্য একাধিক সরকারি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেও রাস্তার দশা দেখে এই জেলারই অনেকে শীতে পাহাড়ে যেতে নাক কোঁচকাচ্ছেন।
বাঁকুড়া শহর থেকে ছাতনাগামী রাস্তা ৮ নম্বর রাজ্য সড়ক ধরে শুশুনিয়া ও শালতোড়ার বিহারীনাথ পাহাড়ে যেতে হয়। রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরেই খানা খন্দে ভরে যাতায়াতের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ঝাঁটিপাহাড়ি, খড়বনা, বারবাখড়া, শালবনি, আঁচুড়ি, ছাতনা এলাকায় রাস্তার উপর থেকে পিচ সরে গিয়ে পাথর বেরিয়ে পড়েছে। আলগা হয়ে যাওয়া পাথরে পিছলে যাচ্ছে গাড়ির চাকা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাস্তাটি সংস্কারের দাবিতে আগে আন্দোলন করেছে। কয়েক মাস আগে রাস্তার খানাখন্দে মোরাম ফেলে পূর্ত দফতর। কিন্তু তাতেও সুবিধা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। আঁচুড়ির বাসিন্দা ভাড়াগাড়ির চালক বাপি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শীতের মরশুম শুরু হলেই শুশুনিয়া, বিহারীনাথ দেখতে বহু মানুষ আসেন। কিন্তু রাস্তার এই অবস্থার কথা একবার পর্যটকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাঁরা আগ্রহ হারাবেন।” ভাড়া গাড়ির চালকরা জানাচ্ছেন, রাস্তার ওই অবস্থায় গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে বলে তাঁরা অনেকেই পর্যটকদের ওই দুই পর্যটনকেন্দ্রে নিয়ে যেতেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী বাসিন্দারাও সমস্যায় পড়েছেন। এলাকার এক ভাড়া গাড়ির চালক বিবেক দত্তের অভিজ্ঞতা, “বহু রোগীকে এই রাস্তা দিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে হয়। গর্তে ভরা রাস্তায় গাড়ির ঝাঁকুনিতে রোগীদের খুব কষ্ট হয়। সম্প্রতি মোরাম ফেলে কয়েকটি বড় গর্ত ভরাট করা হয়েছিল। কিন্তু গাড়ির চাপে মোরাম সরে গিয়েছে। বদলে মোরামের ধুলোয় চারপাশ ভরে থাকছে। এ কারণে দুর্ঘটনাও বাড়ছে।” বাঁকুড়া জেলা বাসমালিক সমিতির সম্পাদক দীপক সুকুল বলেন, “শুশুনিয়া, বিহারীনাথ যাওয়ার রাস্তার যা হাল, তাতে এ বার আমাদের বাস চালানোই বন্ধ করে দিতে হবে দেখছি। প্রায় দিনই গাড়ি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। পর্যটকদের গাড়ি ‘বুকিং’ করার আগ্রহও কম দেখছি।”
শেষবার জেলা সফরে এসে এই জেলার জন্য পর্যটন দফতরের কাজ কর্মে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীকে তিনি জেলার পর্যটনের বিকাশে বিশেষ দৃষ্টি দিতে বলেন। তারপরেও কেন এমন হাল?
অরূপবাবু বলেন, “শুশুনিয়া বিহারীনাথ যাওয়ার রাস্তা কিছুটা খারাপ হলেও যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েনি। দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।” তাঁর আরও দাবি, জেলার রাস্তা উন্নয়নের কাজ চলছে। পর্যটন ক্ষেত্রগুলির উপর তাঁরা বিশেষ নজরও দিয়েছেন। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানান, নতুন করে রাস্তাটি করার পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন রাস্তাটি কয়েক মিটার বাড়িয়ে ১০ মিটার করা হবে। বাঁকুড়া শহরের মাচানতলা মোড় থেকে তারা এই কাজ শুরু করবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.