ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরে কেটে গিয়েছে ছ’বছর। আর দেরি না করে আগামী মার্চের মধ্যে ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টের আধুনিকীকরণের কাজ শেষ করে আনুষ্ঠানিক ভাবে উৎপাদন শুরু করতে চান সেল কর্তৃপক্ষ। গত সপ্তাহে স্টিল প্ল্যান্টের আধুনিকীকরণের কাজকর্ম দেখতে এসে বার্নপুরে ইস্কোর আধিকারিকদের তেমনই জানিয়েছেন সেলের চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর বর্মা।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সেলের ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টের আধুনিকীকরণের জন্য বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রতি বছর এখানে ২৯ লক্ষ টন গরম গলিত লোহা তৈরি হবে। এ জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন একটি ‘টুইন হার্থ ব্লাস্ট ফার্নেস’। আধুনিক ইস্পাত কারখানার উপযোগী একটি কোকওভেন বিভাগ ইতিমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। প্রায় সাত মিটার লম্বা ৭৪টি ওভেন যুক্ত এই বিভাগে বছরে দু’লক্ষ টনেরও বেশি কোক তৈরি হচ্ছে। সেলের অন্য ইস্পাত সংস্থাতেও এই কোক সরবরাহ করা হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। গত বুধবার কারখানা পরিদর্শনে এসে সেলের চেয়ারম্যান জানান, এটি একটি সুসংহত ধারাবাহিক ইস্পাত প্রকল্প। উন্নত যন্ত্রাংশ বসানো হয়েছে। তাঁর সঙ্গে এই কারখানা পরিদর্শন করেন সেলের ডিরেক্টর (কারিগরি) এসএস মহন্ত এবং ডিরেক্টর (প্রজেক্ট) টিএস সুরেশ। কারখানার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন চেয়ারম্যান। |
সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “মার্চের আগেই আধুনিকীকরণের কাজ পুরোপুরি শেষ করার উপরে জোর দিয়েছেন চেয়ারম্যান। এ জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজে গতি আনা হয়েছে।” বার্নপুর ইস্কোর জেনারেল ম্যানেজার পদমর্যাদার এক আধিকারিক জানান, চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এমনিতেই সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা এক বছর আগে পেরিয়ে গিয়েছে। আর যেন কোনও ভাবে দেরি না হয়। প্রায় তিন দশক রুগ্ণ থাকার পরে ২০০৭ সালের গোড়ায় এই কারখানার আধুনিকীকরণের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রক। সে বছর ২৪ ডিসেম্বর আধুনিকীকরণের ভিত্তিপ্রস্তরের জন্য বার্নপুরে আসেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কিন্তু বাস্তবে কাজ শুরু হয় আরও প্রায় দেড় বছর পরে। কারণ, এ জন্য প্রয়োজনীয় ৩৯৬ একর জমি অধিগ্রহণ পর্ব শেষ করতে ইস্কো কর্তৃপক্ষকে কাঠখড় পোড়াতে হয়। সমস্ত বাধা কাটিয়ে এখন প্রায় শেষের মুখে আধুনিকীকরণের কাজ। ইস্কোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার জানান, আধুনিকীকরণের পাশাপাশি সামাজিক কর্তব্যপালনের অঙ্গ হিসেবে আশপাশের গ্রামগুলিতে উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। এলাকার কর্মহীনদের আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের সহযোগিতায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
ইস্কোর আধুনিকীকরণের কাজ শেষ করে উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায় দিন গুণছেন এলাকার শিল্প-বাণিজ্য মহলও। দক্ষিণবঙ্গের ন’টি জেলার শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের যৌথ সংগঠন ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দত্ত জানান, ইস্কোর নতুন ব্লাস্ট ফার্নেস থেকে নির্গত বর্জ্যগুলি এলাকার সিমেন্ট শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করবে। তিনি জানান, দক্ষিণবঙ্গের ক্ষুদ্র সিমেন্ট শিল্প সংস্থাগুলিকে বেশি দাম দিয়ে অন্য ইস্পাত কারখানা থেকে উপকরণ আনতে হয়। ইস্কোর নতুন বিভাগের উৎপাদন শুরু হলে হাতের কাছেই সেই উপকরণ মিলবে। এ ছাড়া নানা অনুসারী শিল্পও আর্থিক ভাবে লাভবান হবে। কম খরচে হাতের কাছেই পণ্য সরবরাহ করতে পারবেন সে সব শিল্পসংস্থার মালিকেরা। তাই নতুন বছরে উৎপাদন শুরু হলে লাভের আশা দেখছেন তাঁরাও। |