অসতর্কতার ফলে কী ঘটতে পারে, তাঁদের সকলেরই জানা। নিয়ম মানতে অনীহা দেখানোয় জরিমানা হতে পারে, তা-ও অজানা নয়। তবু হেলমেট না পরার অভ্যাসে খামতি নেই মোটরবাইক আরোহীদের।
২০০৮ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, দুর্গাপুরে প্রায় ৬৫ শতাংশ মোটরবাইক চালক হেলমেট পরেন না। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট গঠন এবং তার ঠিক চার মাস পরে পৃথক ট্রাফিক পরিকাঠামো চালু হলে কিছু ধরপাকড় শুরু হয়। তাতে হেলমেট না পরার অভ্যাস আগের তুলনায় খানিক কমলেও একেবারে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, হেলমেট না পরে মোটরবাইক চালানোর জন্য মাসে গড়ে শ’দেড়েক মামলা রুজু হয়।
মোটরবাইক আরোহীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, হেলমেট না পরার কারণ হিসেবে নানা জন নানা রকম সওয়াল করছেন। তবে তাঁরা প্রায় সকলেই জানান, মোটরবাইক চালাতে গিয়ে তাঁদের পরিচিত কেউ না কেউ দুর্ঘটনায় পড়েছেন। হেলমেট থাকায় তাঁদের অনেকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন, হেলমেট না থাকায় অনেকে আবার বড় চোট পেয়েছেন। তবু নিজের মাথায় হেলমেট পরতে প্রবল অনীহা বহু আরোহীরই। এই মোটরবাইক চালকদের যুক্তি, হেলমেট পরলে মাথা ভারী মনে হয়। গরমে মাথায় খুব ঘাম হওয়ায় অস্বস্তি হয়। তা ছাড়া, দু’পাশে দেখতেও সমস্যা হয়। কখনও কখনও পিছনের গাড়ির আওয়াজ শুনতে অসুবিধা হয় বলেও অনেকের দাবি। |
রাতের দিকে সামনের গাড়ির আলো হেলমেটের কাচে পড়ে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ায় বিপদের আশঙ্কা থাকে বলেও কেউ কেউ মনে করেন। অনেক মহিলা আরোহীর আবার যুক্তি, বড় চুলের উপরে হেলমেট চাপাতে সমস্যা হয়।
দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মোটরবাইক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মাসে গড়ে ১০ জন ভর্তি হন। দেখা গিয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই হেলমেট না পরার ফলে বিপদ ডেকে এনেছেন। শহরের বাকি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলির হিসেব ধরলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। দুর্গাপুরের দ্য মিশন হাসপাতালের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বসু বলেন, “সব শহরেরই এটি একটি সমস্যা। আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।”
১৯৮৮ সালের ‘মোটর যান আইন’-এর ১২৯ ধারা অনুযায়ী, এ দেশে শিখ সম্প্রদায়ভুক্তেরা ছাড়া মোটরবাইক চালানোর সময়ে সবার জন্য হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। যেমন তেমন নয়, সেই হেলমেট হতে হবে ‘ইন্ডিয়ান ব্যুরো অব স্ট্যান্ডার্ড’-এর মান অনুযায়ী। ধরা পড়লে পুলিশ মোটরবাইক আরোহীকে আদালতে পাঠায়। সেখানে ১৭৭ ধারায় শাস্তির বিধান রয়েছে আর্থিক জরিমানা।
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মোটর ভেহিক্যালস দফতর মাঝে-মাঝে বিশেষ অভিযান চালায়। হেলমেট না পরার জন্য ধরা পড়লে ওই দফতরের আধিকারিকেরা ১৭৭ ধারায় তৎক্ষণাৎ জরিমানা করতে পারেন। তবে শুধু জরিমানা করে এই প্রবণতা দূর করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন দুর্গাপুরের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনিমেষ সিংহরায়। তিনি বলেন, “মাথায় হেলমেট থাকলে দুর্ঘটনার কবলে পড়লেও ক্ষতি অনেক কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আরোহীরা নিজেরা তা না বুঝলে শুধু আইন দিয়ে এই মানসিকতা দূর করা কার্যত অসম্ভব।”
পুলিশ অবশ্য তৎক্ষণাৎ জরিমানা করতে পারে না। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের বিভিন্ন রাস্তায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অনেকেই আগাম খবর পেয়ে সেই সমস্ত রাস্তা এড়িয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যান। পুলিশের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, আগেও মাসে গড়ে এ সংক্রান্ত শ’দেড়েক মামলা রুজু হত। তবে এখন মোটরবাইক ও স্কুটির সংখ্যা বেড়েছে। সেই হিসেবে মামলার হার না বাড়ায় হেলমেট পরার অভ্যাস খানিকটা বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়, ধরপাকড়ের পাশাপাশি এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। সে জন্য প্রতি বছর পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে নিয়ম করে মাইকে প্রচার, মিছিল করা, পোস্টার সাঁটানোর মতো উদ্যোগ হয়। তবে এই সব উদ্যোগ যে যথেষ্ট নয়, বোঝা যায় রাস্তায় বেরোলেই। |