অশোকের অপসারণ সংসদেও তুলবে বিজেপি
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণ চেয়ে এ বার সংসদেও সরব হবে বিজেপি। শনিবার লোকসভার বিরোধী দলনেতা সুষমা স্বরাজ নিজেই এ কথা জানিয়েছেন। তৃণমূল নেতৃত্বও এ দিন জানিয়েছেন, অশোকবাবুর অপসারণের দাবি সংসদে তুলবেন তাঁরা।
ইতিমধ্যেই অশোকবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগকারিণী ল ইনটার্নের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়ে দিল্লি পুলিশ যে চিঠি দিয়েছিল, তার জবাব দিয়েছেন ওই মহিলা। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, বাইরে থাকায় এ নিয়ে কিছু দিন পরে তিনি দিল্লি পুলিশের সঙ্গে কথা বলবেন।
অশোকবাবুকে তাঁর পদ থেকে সরানোর জন্য ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। রাজ্য মানবাধিকার চেয়ারম্যানের অপসারণ চেয়ে ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে পরপর দু’টো চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্ট যখন নিজে থেকে ব্যবস্থা নিতে পারবেই না, তবে কেন কমিটি গড়া এই প্রশ্ন তুলে কার্যত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ভূমিকার সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। বিজেপি নেতা অরুণ জেটলিও অশোকবাবুর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। শনিবার সেই সুর আরও চড়াল বিজেপি। দলের শীর্ষ নেত্রী সুষমা স্বরাজ এ দিন দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে ট্যুইট করে জানান, যিনি নিজেই মানবাধিকার ভঙ্গ করেন, তাঁর কোনও অবস্থাতেই মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে থাকার অধিকার নেই।
সব দলের চাপের মুখেও তিনি যে এখনই ইস্তফা দেবেন না, এমনকী, সে কথা ভাবছেনও না, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন অশোকবাবু। বলেছেন, “আমার ইস্তফার ব্যাপারে অনেকে অনেক কথা বলছেন। যদিও এ নিয়ে আমি কিছুই ভাবছি না।”
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অশোকবাবুকে সরাতে সরকার যে কোমর বেঁধে নেমেছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্যে। ওই কর্তা বলেন, “আমরা দু’টো চিঠি পাঠিয়েছি রাষ্ট্রপতি ভবনে। বৃহস্পতিবার পাঠানো চিঠিতে শুধুই ওই প্রশাসনিক পদ অপব্যবহারের অভিযোগ এবং তার ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ করার আর্জি ছিল। কিন্তু পরের চিঠিতে সর্বোচ্চ আদালতের তদন্তকারী কমিটির বক্তব্য তুলে ধরে তাঁর অপসারণেরই দাবি জানানো হয়েছে।”
নবান্ন সূত্রের খবর, সরকারি তহবিল থেকে বেতন নেওয়ার পাশাপাশি অশোকবাবুর বিরুদ্ধে সালিশির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ এনেছে রাজ্য প্রশাসন। রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠানো প্রথম চিঠিতে লেখাও হয়েছে সে কথা। রাজ্যের বক্তব্য, মানবাধিকার কমিশন স্বশাসিত হলেও তার চেয়ারম্যানের বেতন যে হেতু সরকার বহন করে, তাই তিনি সরকারি কর্মী (পাবলিক সার্ভেন্ট) হিসেবেই গণ্য হবেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২১ নম্বর ধারায় সরকারি কর্মীর সংজ্ঞা বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করা আছে। সেই ধারা অনুযায়ী এক জন সরকারি কর্মী বেতনের বাইরে অন্য কোনও ভাবে অর্থ উপার্জন করলে তা আইনবিরোধী বলেই মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশ।
ওই প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, সরকারি তহবিল থেকে বেতন নেওয়ার পরে যদি কমিশনের চেয়ারম্যান বা কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে অন্য পথে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ ওঠে, তা হলে রাষ্ট্রপতি নিজেই পদক্ষেপ করতে পারেন বলে মানবাধিকার রক্ষা সংক্রান্ত আইনে স্পষ্ট বলা আছে। নবান্ন সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠানো চিঠিতে সেই দাবি-ই জানিয়েছে রাজ্য।
অশোকবাবুর পাকিস্তান সফর নিয়েও নিজেদের অবস্থান ওই চিঠিতে স্পষ্ট করেছে রাজ্য। প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ, রাজভবনের অনুমতি ছাড়াই সে দেশের একটি বেসরকারি সংস্থার আমন্ত্রণে এ বছরের জুনে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন অশোকবাবু। ছিলেনও তিন দিন। সেই ঘটনাকে ভাল চোখে দেখেনি রাজ্য সরকার। প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ, ‘ফরেন কনট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট’ মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য রাষ্ট্রের আতিথেয়তা নেওয়া অপরাধ। পাকিস্তান সফরে গিয়ে অশোকবাবু সেই বিধি-ই ভেঙেছেন।
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও এ দিন জানান, নৈতিকতার কথা ভেবে চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা উচিত অশোকবাবুর। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার কি না, সে প্রশ্নের জবাবে অধীরবাবু বলেন, “এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে অম্বিকেশ মহাপাত্র বা শিলাদিত্য চৌধুরীকে গ্রেফতারের পরে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি যে সব সুপারিশ করেছিলেন তাতে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তাই বদলা নিতেই সরকার ব্যস্ত হয়েছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.