সারদা কাণ্ডে শনিবার বারাসত আদালতে তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং হাওড়া আদালতে সুদীপ্ত সেনকে হাজির করা হয়। বারাসত থানায় সাড়ে সাত মাস আগে দায়ের করা একটি অভিযোগের ভিত্তিতে কুণালবাবুকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজত দিল আদালত। অন্য দিকে প্রায় সাত মাস আগে সাঁতরাগাছি থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সুদীপ্তবাবুকে চার দিন পুলিশি হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এ দিন বারাসত আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মধুমিতা রায়ের এজলাসে তোলা হয় কুণালবাবুকে। গত ২২ এপ্রিল অর্চনা ঘোষ নামে সারদার এক আমানতকারী বারাসত থানায় অভিযোগ দায়ের (কেস নম্বর ৯০১) করেছিলেন।
সেই অভিযোগে সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন ছাড়াও কুণালবাবুর নাম ছিল বলে আদালতে জানান সরকার পক্ষের কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন দে। তিনি ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করেন। |
শনিবার হাওড়া আদালতে সুদীপ্ত সেন। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার। |
সারদা কাণ্ডে বারাসত থানায় প্রায় ১৫টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অচর্নাদেবীর অভিযোগে সাংসদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ-সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তের আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা পুলিশি হেফাজতের বিরোধিতা করে আদালতে বলেন, দীর্ঘদিন আগে অভিযোগ হলেও বারাসত থানা সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। অথচ গত আট মাসে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ কুণালকে একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাঁর কাছ থেকে নথিও বাজেয়াপ্ত করেছে।
পাশাপাশি, পুলিশ তাঁর মক্কেলকে দু’বার (হাওড়া ও বিধাননগর) নিজেদের হেফাজতে নিলেও বিশেষ কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। তা হলে ফের কেন পুলিশি হেফাজতের আবেদন করছে সরকার পক্ষ? ম্যাজিস্ট্রেট অবশ্য কুণালবাবুকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজত দেন।
শুক্রবারই হাওড়া আদালত কুণালবাবুকে ১৪ দিনের জেল হেফাজত দিয়ে তাঁর জন্য জেলে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু বারাসত থানার আবেদনের ভিত্তিতে গত কাল রাতেই হাওড়া থেকে তাঁকে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। কুণালবাবু এ দিন আদালতের বাইরে বলেন, “আমি চিটফান্ডে জড়িত নই। পুলিশ তদন্ত করছে। আমি সাধ্যমতো সহযোগিতা করছি। ওঁরা দেখুক কিছু পায় কি না।” গোপন জবানবন্দি নিয়ে তিনি অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি।
এ দিন বিধানভবনে রেল-প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী কুণাল প্রসঙ্গে বলেন, “ওঁকে লাল কার্পেট বিছিয়ে আদালতে আনা উচিত। সরকার সৎ হলে ওর গোপন জবানবন্দির ব্যবস্থা করত।” তিনি বলেন, “সারদা কাণ্ডে অসম, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীরা যেখানে সিবিআই-কে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, সেখানে এই রাজ্যে কেন ডাকা হচ্ছে না! অথচ বিরোধী থাকাকালীন এরাই (বর্তমান শাসক দল) সব চেয়ে বেশি সিবিআই তদন্তের দাবি করত।”
এ দিন অন্য একটি মামলায় সাঁতরাগাছি থানায় সারদার এক আমানতকারী সুকান্ত বেরার অভিযোগের ভিত্তিতে হাওড়া আদালতে পেশ করা হয় সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনকে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন সুকান্তবাবু। এই সুকান্তবাবুর দাদা জয়ন্ত বেরার অভিযোগের ভিত্তিতেই সম্প্রতি কুণাল ঘোষকে গ্রেফতার করেছিল সাঁতরাগাছি থানার পুলিশ।
আদালতে সরকার পক্ষের কৌঁসুলি পায়েল ঘোষ বন্দ্যোপাধ্যায় সারদাকর্তাকে দশ দিনের পুলিশি হেফাজতের রাখার আবেদন করেছিলেন। বিপক্ষের আইনজীবী পার্থ দত্ত এর বিরোধিতা করেন। পাশাপাশি, সারদা কর্তার অসুস্থতার বিবরণ দিয়ে জামিনের আবেদনও করেন তিনি। দু’পক্ষের সওয়াল জবাবের পরে মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অরুণকুমার নন্দী সুদীপ্ত সেনকে চার দিনের পুলিশি হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন। |