এক জন ক্রিকেটবিশ্বের এক নম্বর ফাস্ট বোলার। গতিতে যতটা আগুন থাকে, শনিবার বুঝিয়ে দিলেন কথাবার্তাতেও ঠিক ততটাই থাকে!
অন্য জন ভারতের এক নম্বর ব্যাটসম্যান। জোহানেসবার্গে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ইনিংস বাদ দিলে ভারত যতটুকু যা পাল্টা যুদ্ধের খোঁজ পেয়েছে, পেয়েছে তাঁর ব্যাট থেকে।
ডেল স্টেইন এবং বিরাট কোহলি। রবিবাসরীয় ডারবান-যুদ্ধের চব্বিশ ঘণ্টা আগে মাঠের বাইরে যাঁদের ‘ধুন্ধুমার’ শুরু হয়ে গেল!
শনিবার ডারবানে সাংবাদিক সম্মেলনে স্টেইনগান যদি ভারতীয়দের আক্রমণ করে যান, যদি বলে দিয়ে থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকা ডারবানে আরও ভয়াবহ পেসে আতঙ্কিত করে ছাড়বে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপকে, তা হলে কিছুক্ষণ পরে কোহলিও এসে পাল্টাটা দিয়ে গেলেন। বাইশ গজে রবিবার প্রমাণ করতে পারবেন কি না, পরের প্রশ্ন। কিন্তু ভারতের সহ-অধিনায়ক শুনিয়ে রাখলেন স্টেইন কেন, ভারত কাউকেই ভয় পায় না!
এক দিক থেকে শুনতে ভালই লাগবে। কিন্তু ডারবানের উইকেট দেখলে কোহলির কথাবার্তায় কতটা ভরসা রাখতে ইচ্ছে হবে, সন্দেহ। এমনিতেই দক্ষিণ আফ্রিকার পিচের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম বলা হয় কিংসমিডের উইকেটকে। তার উপর এ বার যা পিচ প্রস্তুত হয়েছে, তাতে আউটফিল্ডের সঙ্গে আলাদা করা যাবে না। এতটাই সবুজ! সঙ্গে আবার মেঘলা আকাশ। মানে, সুইং বোলিংয়ের পক্ষে আদর্শ ব্যবস্থা। রক্ষে বলতে একটা। ডারবানে দিন-রাতের ম্যাচ নয়। সেটা হলে সমুদ্রের হাওয়ায় পরে ব্যাট করতে নামলে ব্যাটসম্যানদের জীবন সাধারণত দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তবে দিনের ম্যাচ হলেও ভারতীয়দের জন্য ঝাঁঝ কম বরাদ্দ থাকবে, স্টেইনের গোলাগুলিতে অন্তত তার প্রমাণ নেই। |
শর্ট বল খেলার গেমপ্ল্যান? নেটে কোচ-ক্যাপ্টেন। ডারবানে। ছবি: এএফপি। |
“ভারত আরও মারাত্মক বোলিংয়ের জন্য তৈরি থাকুক। আমরা এমন বল করব, যেটা ওদের ভয় পাইয়ে দেবে,” যুদ্ধের আগে হুঙ্কার দিয়েছেন স্টেইন। এখানে না থেমে আরও বলেছেন, “ভারতে তো হাঁটুর উপরে বলই ওঠে না। আর এটা মুম্বই নয়। এখানে রান করা অত সহজও হবে না। আশা করি, জো’বার্গে আমরা ভারতীয়দের কিছুটা অন্তত বোঝাতে পেরেছি ওদের জন্য এখানে কী ব্যবস্থা থাকবে। বলতে গেলে ওদের তো উড়িয়েই দিয়েছি আমরা।”
অতীতেও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেলে মাঠ ও মাঠের বাইরে নানা রকম তির্যক মন্তব্য অপেক্ষা করে থেকেছে ভারতীয়দের জন্য। একটা সময় অ্যালান ডোনাল্ড যা চালাতেন, ডেল স্টেইনের জমানাতেও সেটা এখন চলছে। যা শুনে পাল্টা উত্তর দিয়ে রাখলেন বিরাট কোহলি।
“আমার মনে হয় না ভারতীয় দলের কেউ কোনও কিছু নিয়ে ভয় পায় বলে। ব্যক্তিগত ভাবে যদি জিজ্ঞেস করেন, বলব কোনও ভয়ের ব্যাপার নেই। স্টেইন ভাল বোলার সবাই জানে। ওকে সামলানোর জন্য আমাদের ভাল খেলতে হবে, মাঠে সেটা করে দেখাতে হবে। এর মধ্যে ভয় পাওয়ার কোনও ব্যাপার নেই,” পরে সাংবাদিক সম্মেলন করতে এসে বলে দেন বিরাট। সঙ্গে স্টেইনের প্রশংসা করে পরবর্তী সংযোজন, “জো’বার্গে ও সত্যিই ভাল বল করেছে। আমরা যখন তিনশো উনষাট তাড়া করতে নামলাম, ও তিনটে মেডেন ওভার করে গেল। মিডল স্টাম্পে পড়ে অফস্টাম্পের পাশ দিয়ে বল আউটসুইং করে বেরিয়ে গেল। ভুল বললাম। ফিফথ স্টাম্পের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। ও রকম সুইং সামলানো খুব কঠিন। কিন্তু এটাও ঠিক বিশ্বে ওর মতো ও ভাবে বল সুইং করাতে খুব বেশি কেউ পারে না।” |
আঙুলে রক্ত আর পাঁজরে আইসপ্যাক চেপে খুব বেশি ক্রিকেটারকে আমি মাঠ ছেড়ে বেরোতে দেখিনি। জো’বার্গে দেখলাম। ভারত আরও মারাত্মক বোলিংয়ের জন্য তৈরি থাকুক। এমন বল করব, যেটা ওদের ভয় পাইয়ে দেবে।
স্টেইন |
ব্যক্তিগত ভাবে বলব, ভয়ের ব্যাপার নেই। স্টেইন ভাল বোলার সবাই জানে। ওকে সামলানোর জন্য আমাদের ভাল খেলতে হবে, মাঠে সেটা করে দেখাতে হবে। এর মধ্যে ভয় পাওয়ার কোনও ব্যাপার নেই।
কোহলি |
|
বিরাট প্রতিপক্ষের এক নম্বর অস্ত্রকে সম্মান দিচ্ছেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা পেসারের ভারতকে নিয়ে বিশেষ দয়াময়া দেখানোর ইচ্ছে নেই। বরং কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়ে স্টেইন বলে রাখছেন, “আঙুলে রক্ত আর পাঁজরে আইসপ্যাক চেপে খুব বেশি ক্রিকেটারকে আমি মাঠ ছেড়ে বেরোতে দেখিনি। জো’বার্গে দেখলাম। আমরা তো ওদের ভয় পাইয়ে ছেড়েছি। আমার অন্তত সে রকমই ভাবতে ইচ্ছে করছে। আর আমরা তো দিব্যি ব্যাট করে গেলাম ওখানে। বড় রান তুললাম। ভারতীয় বোলারদের দেখে মনে হল না, কোনও প্রভাব ফেলতে পারছে বলে। ওদের জন্য কিন্তু এটা ওয়েক আপ কল।” পরে অবশ্য গরগরে মেজাজে অল্প রাশ টেনে স্টেইন বলে দিলেন, ভারত কামব্যাক করতে পারে। তবে সম্ভবত সেটা টেস্টে। শিখর ধবন, বিরাট কোহলি, ধোনি শুধু এই তিনকে আপাতত সম্মান দেবেন তিনি। আর টার্গেট করবেন ভারতের মিডল অর্ডারকে! নামগুলো চাই? যুবরাজ সিংহ। সুরেশ রায়না। রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
স্টেইনের ভাষায় যাঁরা নাকি দক্ষিণ আফ্রিকান পেসের সামনে ব্যাট করতেই চাইছিলেন না! |