লহরের পরে দু’সপ্তাহ-ও পেরোল না। ফের বঙ্গোপসাগরে জন্ম নিল নতুন এক ঘূর্ণিঝড়! মলদ্বীপের আবহবিদেরা এর নাম দিয়েছেন, মাদি। মৌসম ভবন জানিয়েছে, শনিবার সকালে গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়েছিল মাদি। বিকেলে তা প্রবল-ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চারটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় তৈরি হল বঙ্গোপসাগরে।
অক্টোবর মাস থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পরপর চারটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার ঘটনা বিরল বলেই দাবি করছেন আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ দশক আগে ১৯৬৬ সালে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে চারটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। তারও আগে ১৯২২ সালে এমনটা হয়েছিল।
গত ২৪ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত হয়েছিল ঘূর্ণিঝড়, লহর।
পরে এই লহরই প্রবল থেকে অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়েছিল। তার দুই পূর্বসূরি পিলিন ও হেলেনের মতো অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলের দিকেই ধেয়ে এসেছিল সে। কিন্তু ওই ধেয়ে আসার পথেই লাগাতার বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল লহর।
বঙ্গোপসাগরে একের পর এক ঘূর্ণিঝড় থাবা বসাচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের শীতেও। নভেম্বরে পরপর দু’টি ঘূর্ণিঝড়ের (হেলেন ও লহর) জন্য এ রাজ্যে প্রবল বাধার মুখে পড়েছিল উত্তুরে হাওয়া। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, বঙ্গোপসাগরের এই নতুন অতিথির জন্য ফের বাধার মুখে পড়তে পারে শীত।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে মেঘ ঢুকতে পারে। উপকূলীয় জেলাগুলিতে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, শীতকালে আকাশ মেঘলা হওয়া মানেই উত্তুরে হাওয়ার পথে বাধা তৈরি হওয়া। এর ফলেই শীতের পথে নতুন করে বাধা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। কত দিন এমন পরিস্থিতি চলবে, তা নিয়েও কিন্তু সন্দেহ রয়েছে আবহবিদদের মধ্যে। কেন?
আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমিতে ঢুকে দুর্বল না হওয়া পর্যন্ত তার প্রভাব কাটে না। মাদি-র ক্ষেত্রে স্থলভূমিতে ঢোকাটাই নিশ্চিত করতে পারছেন না মৌসম ভবনের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এ দিন রাত পর্যন্ত চেন্নাই থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে মাদি। আজ, রবিবার গভীর রাতে শক্তি বাড়িয়ে অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিতে পারে সে। কিন্তু তার পরে কোন দিকে ছুটে যাবে, তা এখনও পরিষ্কার হয়নি।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী বলেন, “মাদি ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারের থেকেও কম গতিতে এগিয়ে আসছে। আপাতত তার অভিমুখ ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূলের দিকে রয়েছে। কিন্তু সোমবার তার মুখ ঘুরে যেতে পারে।” বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে কিছু পরিবর্তনের ফলেই এমনটা হয় বলে তিনি জানান।
কিন্তু কেন ঘনঘন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে?
আবহবিদেরা বলছেন, সমুদ্রতলের তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠলেই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে। তার সঙ্গে পারিপার্শ্বিক বায়ুপ্রবাহ, জলীয় বাষ্পের পরিমাণএই বিষয়গুলিও জড়িত থাকে। মৌসম ভবনের ঘূর্ণিঝড় বিভাগের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চলতি মরসুমে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রতলের সামান্য কিছুটা বেড়েছে। আর এই সমুদ্রতল বাড়ার ফলেই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে ইঙ্গিত মিলেছে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংস্থা, ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-এর রিপোর্টেও। আবহবিজ্ঞানীরা জানান, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে আগামী দিনে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়তে পারে বলে আইপিসিসি-র বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। |