সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যুর জন্য স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে এবং তদন্ত চেয়ে ব্লক অফিসের বাইরে অবস্থানে বসলেন এক দম্পতি। ঘটনাটি পুরুলিয়ার কাশীপুরের। শুক্রবার সকাল থেকে স্থানীয় কল্লোলী গ্রামের বাসিন্দা বৈদ্যনাথ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী মধুমিতা অবস্থান শুরু করেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তদন্তের আশ্বাস দেওয়ায় পরে ওই দম্পতি অবস্থান তোলেন।
ওই দম্পতির দুই মেয়ে আছে। গত মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর রাতে কলোল্লীতে কাশীপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন মধুমিতাদেবী। বৈদ্যনাথবাবু বলেন, “স্বাভাবিক ভাবেই প্রসব হয়েছিল। ৩ তারিখ সারা দিন আমার স্ত্রী ও সন্তান স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছিল। সে দিন সেবিকারা আমার ছেলেকে কয়েকটি ইঞ্জেকশন দেন। বুধবার, ৪ তারিখ ভোরে আমার স্ত্রী দেখে, বাচ্চা অনেকটা স্থির হয়ে গিয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, মধুমিতা কর্তব্যরত নার্সদের সব জানান। তাঁরা ওই চিকিত্সককে এবং বৈদ্যনাথবাবুকে খবর দেন। |
বৈদ্যনাথবাবু বলেন, “ওই চিকিত্সক আমার ছেলেকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে রেফার করেন। দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্সে সদর হাসপাতালে পৌঁছেও কিছু করতে পারিনি। ততক্ষণে ছেলে মারা গিয়েছে বলে জানিয়ে দেন হাসপাতালের চিকিত্সকেরা।” মধুমিতার দাবি, মঙ্গলবার চিকিত্সক একবারও তাঁর ছেলেকে দেখতে আসেননি। বৈদ্যনাথবাবুর অভিযোগ, “সদর হাসপাতালের চিকিত্সকেরা জানান, বাচ্চার ঠান্ডা লেগেছিল। আগের দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তারবাবু যদি একবারও বাচ্চাটাকে দেখতে আসতেন, তাহলে ওর যে ঠান্ডা লেগে অবস্থা এতটা খারাপ হয়েছে, তা বুঝতে পারতেন। একেবারে শেষ মুহূর্তে ওকে নিয়ে ছুটতে হত না। এই ঘটনায় কর্তব্যরত চিকিত্সকের গাফিলতি রয়েছে। তিনি সময়মতো পরীক্ষা করলে আজ সন্তানকে হারাতে হত না।” স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের কাছে ঘটনার তদন্ত চেয়েছেন বৈদ্যনাথবাবু। তাঁর দাবি, তদন্তে কারও গাফিলতি প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “আমার কাছে ওই দম্পতি তাঁদের সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যুর জন্য চিকিত্সকের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। আমরা অভিযোগ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নজরে এনেছি। তাঁকে তদন্ত করার অনুরোধও জানানো হয়েছে।” কাশীপুরের বিডিও তপন ঘোষাল বলেন, “ওই দম্পতি আমার অফিসের সামনে অবস্থানে বসেছিলেন। আমি তাঁদের দাবি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানিয়েছি। পরে অবশ্য তাঁরা অবস্থান তুলেছেন।”
কাশীপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক নেতাজি সিংহ সর্দারের অবশ্য দাবি, “ওই প্রসূতি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি থাকলেও আগের দিন বাচ্চার অবস্থার বিষয়ে আমাদের কাছে কিছু জানানো হয়নি। কোনও স্বাস্থ্যকর্মীকেও তাঁরা জানাননি। যখন জানিয়েছেন সঙ্গে সঙ্গেই চিকিত্সক এসে তাঁর সন্তানকে দেখেছেন।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। তদন্ত শেষ করে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। কারও গাফিলতি প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |