উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত-শহর বনগাঁর অন্যতম প্রধান সমস্যা যানজট। যার মূল কারণ, শহর জুড়ে অনুমতিহীন ভ্যানরিকশার দাপাদাপি। এ বার সেই সব ভ্যানের দাপট রুখতে উদ্যোগী হল বনগাঁ পুরসভা। বৃহস্পতিবার থেকে পথে নেমেছেন পুরকর্মীরা। পুরসভার অনুমতিহীন ভ্যানের চালকদের তাঁরা প্রথমে সতর্ক করছেন, তার পরে হচ্ছে জরিমানা। এর পরেও যদি শহরে ভ্যান-চালকেরা অনুমতি না নিয়ে ঢোকেন, তা হলে তাঁদের ভ্যান পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা।
তৃণমূল পরিচালিত বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, “শহরকে যানজটমুক্ত করতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুরসভার অনুমতি ছাড়া ভ্যান শহরে চলতে দেওয়া হবে না। যে সব ভ্যান-চালকের অনুমতি নেই, তাঁদের মধ্যে থেকে বেছে পর্যায় ক্রমে অনুমতি দেওয়া হবে। ভাড়ার নির্দিষ্ট তালিকা তৈরি করা হবে। নানা জায়গায় গজিয়ে ওঠা অস্থায়ী ভ্যানস্ট্যান্ডও সরানো হবে।” |
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে চলার জন্য অনুমতিপত্র রয়েছে ১২০০ ভ্যান-চালকের। কিন্তু রোজ শহরে ভ্যান চলে কয়েক হাজার। পথে বেরিয়ে যানজটের কবলে পড়াটা এই শহরের মানুষের কাছে অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। তার প্রধান কারণ যত্রতত্র ভ্যানের দাপাদাপি। ভ্যান-চালকদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও হামেশাই ওঠে। এ জন্য যাত্রীদের সঙ্গে ভ্যান-চালকদের বচসাও হয়। সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন যশোহর রোডে। বনগাঁবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, শহরকে যানজটমুক্ত করতে হলে অনুমতিহীন ভ্যানের দাপাদাপি বন্ধ করতে হবে।
সেই কাজেই বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে পুরকর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়েন। শুক্রবার সকালে পুরকর্মীদের ত্রিকোণ পার্ক এলাকায় বনগাঁ-চাকদহ সড়কে অনুমতিহীন ভ্যান আটক করতে দেখা যায়। ওই সব ভ্যান-চালকের নাম-ঠিকানাও লিখে নেওয়া হয়। সতর্ক করা সত্ত্বেও দ্বিতীয়বার ভ্যান নিয়ে শহরে ঢোকার জন্য কয়েক জন চালককে ৩০০ টাকা জরিমানাও করা হয়।
পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে ছ’দিন এই অভিযান চলবে। অনুমতিহীন ভ্যানের চালকদের প্রথমে সতর্ক করা হবে। তার পরে ৩০০ টাকা জরিমানা। তার পরে তাঁরা নিষেধ না শুনলে ভ্যান পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পঞ্চায়েত থেকে অনুমতি নিয়েও ওই এলাকা থেকে আসা ভ্যানগুলিকে যাত্রী নামিয়ে বা তুলেই ফিরে যেতে হবে। শহরে তারা ভাড়া খাটতে পারবে না। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, বাংলাদেশের বহু যুবক চোরাপথে এ দেশে ঢুকে সারাদিন বনগাঁয় ভ্যান চালিয়ে রোজগার করে রাতে চোরাপথে ফিরে যায়। নতুন ব্যবস্থায় তাদেরও আটকানো যাবে। পুরসভার এই উদ্যোগে খুশি অনুমতিপত্র রয়েছে, এমন ভ্যান-চালকদের। তাঁরা মনে করছেন, এই ব্যবস্থায় তাঁরা উপকৃত হবেন। তাঁদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। রোজগার বাড়বে। সাধারণ মানুষও পুরসভার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। |