স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশ রক্ষার কাজে নিজেকে সমর্পণ করবেন। সেনার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু বাধ সেধেছিলেন বাবা বিশ্বনাথ নন্দী আর মা চিত্রাদেবী। বিপদসঙ্কুল পেশায় ছেলেকে ছেড়ে দিতে তাঁদের মন কেঁদেছিল। পেটের তাগিদে তাই এত দিন সরকারি বিভিন্ন দফতরে কীটনাশক ছড়িয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন তাঁদের ছেলে জ্যোতির্ময়। কিন্তু সেই কাজই যে তাঁর জীবনে এত সঙ্কট ডেকে আনবে ভাবতে পারছেন না তিনি।
মহাকরণে কেরোসিন মেশানো কীটনাশক ছড়িয়ে গ্রেফতার হওয়ার পরে জামিন পেয়ে শুক্রবার বাড়ি ফিরে তিনি বলেই ফেললেন, “যে কালি লাগল, কেউ কি আর কাজ দেবেন? এ জন্য কেউ দায়ী নয়। সবই আমার কপালের ফের।”
শ্রীরামপুরের চাতরা মান্নাপাড়ার রামকৃষ্ণ পল্লির বাসিন্দা জ্যোতির্ময়। আদালতের নির্দেশে বাড়ি ফিরলেও আট ফুট বাই দশ ফুট ঘর থেকে এ দিন শুধুই শোনা গিয়েছে তাঁর কান্না। তাঁর আক্ষেপ, “সরকারি নথি বাঁচানোর তাগিদেই কাজ করতাম। সাতটা বছর বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে কাজ করেছি। মহাকরণের বিভাগীয় কর্তাদের কাছেও প্রিয় ছিলাম। কিন্তু কী যে হল!”
তবে, জ্যোতির্ময় যাই ভাবুন না কেন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে, তাঁর পাশে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত এ দিন সন্ধ্যা থেকেই আসতে শুরু করেছে রামকৃষ্ণপল্লির বাড়িতে। দুর্গাপুরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ অরুণকুমার ভৌমিক নিজেই যোগাযোগ করেছেন জ্যোতির্ময়ের পরিবারের সঙ্গে। তাঁর স্ত্রী অপর্ণাকে তিনি কথা দিয়েছেন প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্যের। এলাকার যুবক গুরুপ্রসাদ সোম বলেন, “আমরা ওঁর পরিবারের পাশে আছি। ওঁকে প্রয়োজনে সব রকম সাহায্য করব। ওঁর মতো সৎ, নির্লোভ আর পরিশ্রমী ছেলে এই সময়ে বিরল।”একই ইচ্ছে প্রকাশ করলেন এলাকারই অপর এক যুবক সুরেশ বাদুড়ি।
কিন্তু জ্যোতির্ময়ের আশঙ্কা, ‘লক আপ ফেরত’ মানুষকে আর কেউ সরকারি বা বেসরকারি কোনও জায়গাতেই ঠাঁই দেবেন কি না! আশঙ্কা, অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে, অশক্ত বাবা-মাকে নিয়ে আগামী দিনে তাঁর জন্য কী অপেক্ষা করছে! দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জ্যোতির্ময়ের এখন একটাই আর্জি, আদালতের রায়ে যখন তিনি জামিনে মুক্ত, তখন সরকার তাঁর জন্য একটা কিছু করুন। রোজগারের কোনও দিশা দেখান। জ্যোতির্ময়ের এই নতুন লড়াইতে সামিল হতে চান তাঁর প্রতিবেশী সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুপম বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত সামন্তদের মতো অনেকেই । প্রয়োজনে জ্যোতির্ময়ের হয়ে সরকারের কাছে দরবার করতেওও তাঁরা প্রস্তুত। |