এসজেডিএ-এর দুর্নীতি মামলা নতুন মোড় নেওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলির চাপানউতোরে ক্রমশ তাতছে শিলিগুড়ি। বৃহস্পতিবার কংগ্রেস ও বামেদের তরফে সিবিআই তদন্তের দাবিতে নানা আন্দোলনের জেরে দিনভর শিলিগুড়ির জনজীবন কিছুটা বিপর্যস্ত হয়। শিলিগুড়ি আদালত চত্বরে আইন অমান্য আন্দোলনের সময়ে পুলিশের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের ধস্তাধস্তির সময়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই সময়ে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি (সমতল) শঙ্কর মালাকার, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা কনক দেবনাথ-সহ আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীদের পুলিশ গ্রেফতার করে। সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেওয়া হয় তাঁদের।
ঘটনাচক্রে, এসজেডিএ-র বোর্ড সদস্য শঙ্করবাবুকেও দুর্নীতি মামলার ব্যাপারে পুলিশ জেরা করেছে। সিপিএম ও কংগ্রেসের একাংশের পক্ষ থেকে কার্যত শঙ্করবাবুকেও গ্রেফতারের দাবিও করা হয়েছে। তৃণমূলের তরফে খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও দুর্নীতি মামলায় শঙ্করবাবুর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ফলে, এসজেডিএ মামলার গতিপ্রকৃতি আগামী দিনে কোন পথে এগোতে পারে তা নিয়ে সংস্থার অন্দরেই বিতর্ক তুঙ্গে পৌঁছেছে। |
শিলিগুড়ি আদালত চত্বরে কংগ্রেসের আইন অমান্য। |
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আন্দোলনের সময়ে বারেবারেই সিবিআই তদন্ত দাবি করা হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কনক দেবনাথ বলেন, “এসজেডিএ-এর দুর্নীতি মামলায় গোদালা কিরণকুমারকে গ্রেফতার করায় পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামনকে ‘কম্পালসরি ওয়েটিং’-এ পাঠানো হল। সারদা কাণ্ডেও তৃণমূল নেতাদের ভূমিকা নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তাই সিবিআই তদন্ত দাবি করছি।” শঙ্করবাবুর সংযোজন, “এতদিন জয়রামনের মতো অফিসার তদন্ত করছিলেন বলে তেমনভাবে মুখ খুলিনি। এখন এর শেষ দেখে ছাড়ব।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য কংগ্রেসের আন্দোলনকে ‘লোক দেখানো’ বলে কটাক্ষ করেছেন। গৌতমবাবু বলেন, “যখন দিনের পর দিন দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তখন সকলে চুপচাপ ছিলেন কেন? আমরা নিজেরাই সব জেনে মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি। মুখ্যমন্ত্রী কোনও দুর্নীতি বরদাস্ত করেন না। সে জন্য সঙ্গে সঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের কে সিপিএমের ঘনিষ্ঠ, বাম নেতার আত্মীয় তা সকলেই জানেন। কংগ্রেসের সঙ্গেও ওই বাম নেতাদের যোগসাজশ রয়েছে। সে জন্য এখন লোক দেখানো আন্দোলন হচ্ছে।” কিন্তু, কংগ্রেস-সিপিএম যোগসাজশের অভিযোগের যুক্তি কি? জবাবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর অভিযোগ, “শিলিগুড়ি পুরসভায় সংখ্যালঘু কংগ্রেস বোর্ডকে বামেরা সমর্থন করছে। সে জন্য এসজেডিএ কাণ্ডে রাজ্যের ভূমিকাকে খাটো করতে দুপক্ষ একযোগে পথে নেমেছে।” সেই সঙ্গে তাঁর যুক্তি, “এসজেডিএ কাণ্ডে পুলিশ যাদের জেরা করেছে তাঁরা সবাই যদি অভিযুক্ত হন, তা হলে কংগ্রেস নেতা শঙ্করবাবুও অভিযুক্ত। তা ছাড়া এসজেডিএ’র কাজকর্মে কোথাও কোনও সমস্যা হচ্ছে বলে বোর্ড মিটিংয়ে তিনি কোনও প্রশ্ন কখনও তোলেননি কেন?” |
এসজেডিএ দফতরের সামনে সিপিএমের মহিলা সমিতির বিক্ষোভ। |
এ দিন বেলা ১১টা থেকে মহানন্দা সেতু লাগোয়া এয়ারভিউ মোড়ে জমায়েত হন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। ভিড়ে জন্য হিলকার্ট রোডে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। প্রায় ২ ঘণ্টা শহরের যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে যায়। মিছিল করে আদালত চত্বরে গিয়ে আইন অমান্য করেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে পুলিশ শঙ্করবাবু ছাড়া কনকবাবু, সুবীন ভৌমিক, বিধায়ক সুনীল তিরকি, দার্জিলিং লোকসভা যুব কংগ্রেসের সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরী-সহ অনেককেই গ্রেফতার করেন।
ঘন্টাখানেক পরেই এসজেডিএ দফতরে বিক্ষোভ দেখান সিপিএমের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। এসজেডিএ চত্বরে ঢোকার গেটে পুলিশ তাদের আটকালে তারা জবরদস্তি করেন। ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে পড়েন তাঁরা। তাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ অবশ্য এসজেডিএ-তে ঢোকার দরজায় তাদের আটকে দেয়। এর পর সিবিআই তদন্তের দাবিতে, প্রাক্তন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য-সহ অন্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হন রত্না চৌবে, স্নিগ্ধা হাজরা, বেবি ঘোষদের মতো নেত্রীরা। জয়রামনকে কেন অপসারণ করা হল সেই প্রশ্নও তোলেন তাঁরা। এসজেডিএ কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিতে চাইলেও পুলিশ অবশ্য তাদের ঢুকতে দেয়নি। এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী বলেন, “স্মারকলিপি দেওয়ার ব্যাপারে কেউ আমাকে কিছু জানায়নি।” |