নদীখাত সাত ফুট নেমে গিয়ে জরদায় এখন জলপ্রপাত
ছিল তিরতির করে বয়ে চলা অতি সাধারণ একটি নদী। নদীর বালি পাথরের খাত হঠাৎ ফুট সাতেক গভীরে তলিয়ে যাওয়ায় আচমকা জলপ্রপাত তৈরি হয়েছে। ময়নাগুড়ির জল্পেশ মন্দির সংলগ্ন জরদা নদীগর্ভের এই নেমে যাওয়ার কারণ জানতে গবেষক মহলে শুরু হয়েছে অনুসন্ধান।
জল্পেশ মোড় থেকে সামান্য এগিয়ে ডান দিক দিয়ে বয়ে গিয়েছে জরদা। কথিত রয়েছে, পুরাণে ‘জটোদ্ভবা’ নামেই পরিচিত এই নদী। দু’পাশের কৃষি এলাকা এই নদীর জন্য কয়েক বছরে পাল্টে গিয়েছে। জল্পেশ মোড়ের পর থেকে আচমকাই নদীর প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা অন্তত সাত ফুট নীচে নেমে গিয়েছে। তারপরে এই নদীখাত আবার আস্তে আস্তে উপরে উঠেছে। ভুস্কারডাঙা গ্রামের ঠিক যেখান থেকে নদী অনেকটা নীচে বইতে শুরু করেছে। সেখানে উপর থেকে প্রবল শব্দে ঝাপিয়ে পড়ছে জলধারা ভূ-বিদ্যায় ‘নিক ফল্স’ নামে পরিচিত ওই জলপ্রপাত দেখতে উৎসবের মেজাজে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন। আসছে স্কুল ফেরত পড়ুয়ারাও।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ রায় সরকার জানান, সম্প্রতি এক দিন আচমকা নদীর গর্জন শুনে লোকজন চমকে ওঠে। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মাঝ নদীর অন্তত ৫০ ফুট এলাকা বসে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এর পর থেকে প্রতিদিন নদী গর্ভ তলিয়ে যাওয়ার এলাকা বাড়ছে। এখন তা এক কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়েছে। মনে হচ্ছে মাঝ নদীতে কেউ নালা কেটেছে। পরিস্থিতি দেখে আতঙ্কিত স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা হরিমাধব সরকার ও শঙ্কর দেবনাথের মতো অনেকে।

জরদা নদীতে তৈরি হওয়া গর্ত দেখতে ভিড় করেছে স্কুলপড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।
ভূ-বিদ্যার গবেষকরা জানান, মালভূমি অঞ্চলের নদীতে ওই ঘটনা দেখা গেলেও উত্তরবঙ্গে বিরল। নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, “সাধারণত যথেচ্ছ ভাবে বালি পাথর উত্তোলন, বেড়ে চলা দূষণ এবং জলস্তর নেমে গতিশীল ভারসাম্য নষ্ট হলে নদী বক্ষ বসে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।” ময়নাগুড়ি কলেজের ভুগোল বিভাগের প্রধান মধুসূদন কর্মকার জানান, “উত্তরবঙ্গের কোনও নদীতে এমন ঘটনা আগে দেখা যায়নি। কারণ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।” একই ভাবে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল বিভাগও কারণ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান বিভাগের প্রধান সুবীর সরকার।
জলস্তর যে নামছে সেটা নদী সংলগ্ন এলাকার কুয়ো, নলকূপের বেহাল দশাতে স্পষ্ট। শীত পড়তে বেশিরভাগ বাড়ির কুয়োর জল শুকিয়ে যেতে বসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দশ বছর আগেও বারোমাস জল পাওয়া যেত। শুধু তাই নয় আগে ২৫ ফুট পাইপ বসিয়ে কলে জল মিলেছে। এখন সেখানে ৪০ ফুট গভীরে পাইপ বসাতে হচ্ছে। নদী বক্ষ থেকে এমন ভাবে বালি পাথর তুলে নেওয়া হয়েছে যে শুধু মাটির স্তর পরে রয়েছে। জলে ভাসছে থার্মোকলের টুকরো, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের মতো আবর্জনা। কল্যাণবাবু বলেন, “নদী কত সইবে? সে ভেঙেচুরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবেই।” কিন্তু শুনছে কে? যেখানে নদী গর্ভ তলিয়েছে তার কিছুটা দূরে ট্রাক নামিয়ে বালি তুলতেও সম্প্রতি দেখা গিয়েছে। যদিও ময়নাগুড়ির বিডিও সংহিতা তলাপাত্র জানান, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রচুর মানুষ প্রতিদিন ভিড় করছেন ওই এলাকায়। অনেকে ছবি তুলছেন। শীতের দিনে ওই এলাকা একরকম পিকনিকের জায়গাই হয়ে গিয়েছে। ময়নাগুড়ির যুগ্ম বিডিও সমরেশ রায়ের কথায়, “আমরা এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। দরকার হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলে কলকাতা থেকেও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসা হবে। এর মধ্যে আমরা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.