নেহেরু গোল্ড কাপের পরে ফিফার উদ্যোগে ফের শিলিগুড়িতে দু’টি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ম্যাচ হল। শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ভবিষ্যতে আরও আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল ম্যাচ করাতে আরও কিছু পরিকাঠামো দরকার বলে মনে করছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন।
সম্প্রতি ভারতের দু’টি ম্যাচ হয় ফিলিপিন্স ও নেপালের সঙ্গে। তখন শিলিগুড়ি এসেছিলেন এআইএফএফ প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানান, এই মাঠে ফুটবলারদের জন্য প্রয়োজন উন্নত ‘ড্রেসিং রুম’। আন্তর্জাতিক ম্যাচের ক্ষেত্রে স্টেডিয়াম ছাড়াও অনুশীলনের জন্য ভাল মাঠ দরকার। দর্শক আসনের উপর শেড তৈরির মতো পরিকাঠামোর গড়ার প্রস্তাবও দেন তাঁরা। এ সব বিষয়ে স্টেডিয়াম কমিটি এবং স্থানীয় মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তাঁরা কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইটের ব্যবস্থা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে আরও সে সব পরিকাঠামো প্রয়োজন সে সব কাজ করার ক্ষেত্রেও আমরা ভেবেছি।” কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে বড় ম্যাচের আয়োজন হলে শিলিগুড়ির কাছাকাছি রানিডাঙায় এসএসবি মাঠ, কদমতলায় বিএসএফ মাঠ অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সে সব জায়গায় ড্রেসিং রুমের ব্যবস্থা নেই। ওই মাঠগুলির পরিস্থিতিও ভাল নয়। ওই সব মাঠ সংস্কার এবং পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁরা কথা বলছেন। তা ছাড়া দুই মাইল এলাকায় সেনাবাহিনীর মাঠ, ও কামরাঙাগুড়ি এলাকায় এনএইচপিসি’র মাঠ রয়েছে। |
সেগুলি সংস্কার করে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে তাঁরা উদ্যোগী বলে জানান মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ সচিব তথা স্টেডিয়াম কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা অরূপরতন ঘোষ। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ড্রেসিং রুমের পরিকাঠামো উন্নয়নের। অনুশীলনের জন্য ভাল মাঠের ব্যবস্থা করতেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
গত বছর সেপ্টেম্বরে ফেডারেশন কাপের সময় মাঠের মাঝে ক্রিকেট পিচ থাকা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। তা নিয়ে অভিযোগ তোলেন ফুটবলার থেকে সুভাষ ভৌমিক, ট্রেভর মর্গ্যানের মতো বিভিন্ন দলের কোচেরাও। তবে সেই পরিস্থিতি এখন বদলেছে। তার পরেই ক্রিকেট পিচ হঠিয়ে দিতে তত্পর হয় স্টেডিয়াম কমিটি এবং শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ। ক্রিকেট পিচ তুলে দেওয়ায় মাঠের জৌলুস ফিরেছে। তবে ফুটবলারদের সাজঘর উন্নত মানের করে তোলা যায়নি। ফেডারেশনের সহসভাপতি (সিনিয়র) সুব্রত দত্ত বলেন, “বর্তমানে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে যে সাজঘর রয়েছে সেগুলিতে পর্যাপ্ত শৌচাগার নেই। প্রতিটি দলের সাজ ঘরে এক সঙ্গে কয়েক জন ফুটবলারের জন্য সেই ব্যবস্থা থাকা দরকার। তা ছাড়া ‘ম্যাসাজ’-এর দুটি ঘর, ফুটবলারদের ‘লকার’ করতে পারলে ভাল হয়। এ সব পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।” স্টেডিয়ামে শেড তৈরি করে দর্শকদের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে পারলে ভাল হয়। অনুশীলনের মাঠও উন্নত ধরনের হওয়া দরকার বলে জানান সুব্রতবাবু।
প্রথম ম্যাচের শেষে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের মাঠের প্রশংসা করেন ফিলিপিন্স-এর কোচ মাইকেল ওয়েইজ এবং দলের এক ফুটবলার গ্রেটউইচ ক্রিস্টোফার। তাঁরা বলেন, “খুবই ভাল মাঠ। এ ধরনের মাঠ আরও কয়েকটি থাকলে ফুটবলের উন্নতিতে তা সহায়ক হবে।” মাঠের প্রশংসা করেন ভারতীয় কোচ উইম কোভারম্যান্স কিংবা সুনীল ছেত্রীর মতো ফুটবলাররাও।
সুব্রতবাবু জানান, তাঁরাও চান ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আরও বেশি আন্তর্জাতিক মানের ম্যাচ কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে হোক। তিনি বলেন, “ফুটবলারদের থাকার ভাল হোটেল শিলিগুড়িতে রয়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের মাঠও ভাল। ফ্লাডলাইটের ব্যবস্থাও রয়েছে। ফুটবলারদের উন্নত ধরনের ড্রেসিং রুম, অনুশীলনের জন্য ভাল ফুটবল মাঠ দরকার। এক দিনে দু’টি ম্যাচ খেলাতে ৪টি ড্রেসিং রুম দরকার। বাগডোগরা বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হলে আন্তর্জাতিক ম্যাচের আয়োজন করার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা মিলবে। বিদেশের দলগুলি এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়।” তিনি জানান, সাংবাদিকদের সুবিধার জন্য ‘ওয়াই-ফাই’ ব্যবস্থা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, থাকা দরকার। স্টেডিয়াম কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ওয়াইফাই-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। |