গভীর রাতে পাহাড় ও অভয়ারণ্যের মাঝের জাতীয় সড়কে গাড়ি নিয়ে তাড়া করে এক শেয়ারের ব্যবসায়ী এবং তাঁর বন্ধুকে মারধর করে নগদ টাকা এবং সোনার অলঙ্কার লুঠ করে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার রাতে ভক্তিনগর থানার ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের শালুগাড়া লাগোয়া কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, ডুয়ার্সের মংপং থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দুষ্কৃতীরা দুটি গাড়ি নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর গাড়িকে তাড়া করে। শেষে জাতীয় সড়কেই গাড়িটি আটকে লুঠপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ। আতঙ্কে সারারাত কাটানোর পরে বুধবার ওই ব্যবসায়ী ভক্তিনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ঘটনার পর রাতেই জিতেন্দ্র সিংহ নামের ওই ব্যবসায়ী তাঁর বন্ধু তথা এক আইনজীবীকে টেলিফোন করে সব জানান। তিনি রাতেই বিষয়টি এলাকার দায়িত্বে থাকা শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের সহকারি পুলিশ কমিশনার (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তাকে জানান। তার পরে পুলিশ তদন্তে নামে। এ দিন সহকারি পুলিশ কমিশনার বলেন, থানাকে দেখতে বলেছি। দুষ্কৃতীদের খোঁজ করার পাশাপাশি তদন্ত শুরু হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, জিতেন্দ্রবাবুর বাড়ি পুরসভার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের সেবক রোডের দশরথপল্লিতে। পানিট্যাঙ্কি মোড় লাগোয়া এলাকার একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে তাঁর শেয়ার ব্যবসার দফতর রয়েছে। জিতেন্দ্রবাবুর বাবা রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ ডুয়ার্সের নাগরাকাটার নয়া সইলি চা বাগানে কর্মরত ছিলেন। ৩০ নভেম্বর তিনি অবসর নেন। কিন্তু পা ভাঙা জন্য চাকরি জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তিনি মাস তিনেক কাজ করতে পারেননি। এই বেতনের টাকা তাঁর বকেয়া রয়েছে। গত মঙ্গলবার বেলা ২টার পর জীতেন্দ্রবাবু নিজের গাড়ি নিয়ে নাগরাকাটার ওই বাগানে বাবার বকেয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য যান। রাতে ফিরতে দেরি হবে বুঝে তিনি সঙ্গে তাঁর বন্ধু তথা একটি অটোমোবাইল সংস্থায় কর্মরত সুরজিত্ দেব-সহ আরও এক বন্ধুকে নিয়ে যান।
রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁরা নাগরাকাটা থেকে রওনা হন। জিতেন্দ্রবাবু জানান, সেবক হয়ে জাতীয় সড়ক ধরে তাঁরা ফিরছিলেন। মংপং থেকে লক্ষ করি একটি গাড়ি আমাদের পিছু নিয়েছে। রাতের রাস্তায় একসঙ্গে চলছে ভেবে গা করিনি। পরে মহানন্দা অভয়ারণ্যের রাস্তায় আরকেটি গাড়ি পিছু নেয়। আগের গাড়িটি পাশ কাটিয়ে চলে যায়। পরে দুটি গাড়িই অন্ধকারে দ্রুত চালিয়ে মিলিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টা নাগাদ সোরিয়া পার্ক এলাকার একটি আগে দেখি রাস্তা দখল করে দুটি গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। পাশ কাটিয়ে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের দিকে এগোতেই একটি গাড়ি রাস্তা আটকে দাঁড়ায়।
জিতেন্দ্রবাবুর অভিযোগ, “ওই গাড়ি থেকে পাঁচজন নেমে আসে। আমাদের গাড়ি থেকে মারধর করা হয়। ইতিমধ্যে আরেকটি গাড়ি থেকেও ২-৩ জন নেমে আসে। তার পরে আমাদের কাছে থাকা ১২ হাজার টাকা, সোনার মালা, আংটি নিয়ে ওঁরা পালায়। নিজেদের মধ্যে কথা বলার পর মোবাইলগুলি কোনও কারণে নেয়নি। বেশি কথা বললে গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।” তাঁর বন্ধু সুরজিত্বাবু বলেন, “গাড়ির জানলা দিয়ে কী হয়েছে জানতে চাইতেই তেড়ে এসে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বার করে। মুখও খোলা ছিল। ঘটনার পর অভয়ারণ্যের দিকেই ওরা চলে যায়। প্রাণে বেঁচে গিয়েছি।”
পুলিশ সূত্রের খবর, রাত ৯-১০ টা’র পর জাতীয় সড়কের ওই এলাকায় সাধারণত গাড়ি চলাচল কমে যায়। সিকিম এবং ডুয়ার্সগামী ট্রাক-সহ সামান্য কিছু গাড়ি চলাচল করে। বিশেষ করে প্রায় ছয় কিলোমিটার মহানন্দা অভয়ারণ্যের রাস্তাটি রাতে একেবারে সুনসান থাকে। সেবক ফাঁড়ি এবং ভক্তিনগর থানার টহলদারি ভ্যান জাতীয় সড়কে ঘুরলেও অনেক সময়ই তার দেখা মেলে না বলে অভিযোগ। এর সুযোগেই দুষ্কৃতীরা ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে তদন্তকারী অফিসারেরা মনে করছেন। জীতেন্দ্রবাবু’দের অবশ্য অভিযোগ, “পুলিশ প্রথম অবস্থায় অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে। খোঁজখবর করার পর তা অবশ্য নিয়েছে। এ দিন সকালেও থানার অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছি। কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছে।”
ওই ব্যবসায়ীর বন্ধু তথা আইনজীবী অভ্রজ্যোতি দাস বলেন, “থানা থেকে অভিযোগ নিতে নানা টালবাহানা করা হচ্ছিল। তাই এসিপিকে টেলিফোন করি। শহর লাগোয়া এলাকাতেই রাতে এমন হলে তো কেউ রাতে গাড়ি নিয়েও চলাফেরা করতে পারবে না।” |