|
|
|
|
দেওয়ালে লেগে যাওয়া পিঠ বনাম রুটিরুজি সন্ধানীদের লড়াই
রতন চক্রবর্তী • কলকাতা |
পরিসংখ্যান কি কোনও ম্যাচের ফলকে প্রভাবিত করে? যদি করে, তা হলে আজকের ম্যাচে ফেভারিট র্যান্টি মার্টিন্সের ক্লাব।
কারণ, গত পাঁচ বছর আই লিগে মোহনবাগান হারাতে পারেনি বেগুনি ব্রিগেডকে।
কোনও ফুটবলারের ‘লাক: কি সেই টিমের কপাল খুলে দিতে পারে? যদি পারে, তা হলে আজকের ম্যাচে চিজোবা ক্রিস্টোফারের কপালের জোরে করিম বেঞ্চারিফার ভাগ্য ফিরতে পারে।
কারণ, এ বছর প্র্যাক্টিস ম্যাচ এবং কলকাতা লিগ মিলিয়ে ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে তিনটি ম্যাচ খেলেছেন ক্রিস্টোফার। তিন ম্যাচেই পুরনো ক্লাব পিয়ারলেসের জার্সিতে গোল করেছেন বাগানের নতুন বিদেশি।
করিম বেঞ্চারিফা বনাম এলকো সতোরির স্ট্র্যাটেজির যুদ্ধের আগে গঙ্গাপারের ক্লাব থেকে যুবভারতী র্যান্টি মার্টিন্স, ওডাফার মতো তারকাকে সরিয়ে রেখে তাই ক্রিস্টোফার নিয়েই বৃহস্পতিবার আলোচনা বেশি। কারণ, এই নাইজিরিয়ানের কলকাতা লিগের ফর্ম ১৮ ম্যাচে ১২ গোল!
“কলকাতা লিগ আর আই লিগ এক নয়। এখানে গোল করা খুবই কঠিন। সব টিম রক্ষণ জমাট করে নামছে। দেখছেন না, এ বার স্ট্রাইকাররা কত কম গোল পাচ্ছে,” বলার সময় ‘গোলমেশিন’ র্যান্টির গলায় বিপক্ষে সদ্য সই করা স্বদেশীয় ফুটবলারকে কোনও রকম পাত্তাই না দেওয়ার মনোভাব।
ক্রিস্টোফার-ই কি বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরাতে শুরু করলেন র্যান্টির ভেতর? ঠিক বোঝা গেল না। তবে মোহনবাগান ম্যাচে নামার আগে ইউনাইটেডের সেরা স্ট্রাইকারের মন্তব্য কিন্তু সতীর্থদের তাতিয়ে তোলার পক্ষে যথেষ্ট। “আরে আমাকে মার্কিং করতে গেলে আমাদের অন্য প্লেয়াররা গোল করে যাবে। আমরা কিন্তু টিম গেম খেলি। কারও একার উপর পুরো টিম দাঁড়িয়ে নেই,” র্যান্টি শেষ লাইনটা বলার সময় অলক্ষে ভেসে ওঠে যেন একটাই মুখ প্রতিদ্বন্দ্বী দলের ওডাফা।
“আমি টিম মিটিংয়ে বলেছি একা ওডাফার উপর তোমরা সবাই নির্ভর করছ কেন? টিমের সবারই টিমকে কিছু দেওয়ার আছে, সেটা দাও। একা ওডাফার উপর নির্ভর করে থেকো না,” অনুশীলনের পর এ দিন বলছিলেন ওডাফার দলের কোচ করিম। |
|
র্যান্টি-এরিক বনাম ক্রিস্টোফার-ওডাফা যুদ্ধে শেষ হাসি কার?
বৃহস্পতিবার প্রস্তুতিতে শান দু’পক্ষের। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
দু’কোটির ওডাফার ফিটনেসের অবস্থা এখনও তেমন আশাপ্রদ নয়। গোলের চেষ্টায় মোহন-অধিনায়ক মরিয়া বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু তাঁর শরীর পুরো চলছে না। এ দিন অনুশীলনে দেখা গেল, চলতি বলে গোল করতে গিয়ে বেশিরভাগই ব্যর্থ হচ্ছেন ওডাফা।
তাঁকে অবশ্য তেমন গুরুত্বই দিচ্ছেন না ইউনাইটেডের ডাচ কোচ। “ওডাফার জন্য আলাদা মার্কিং রাখার প্রয়োজন নেই। অনুপমরাই তো কলকাতা লিগের এই ম্যাচটায় ওকে গোল করতে দেয়নি। মোহনবাগানে নানা সমস্যা চলছে। চাপটা তাই ওদের, আমাদের নয়,” বলছিলেন এলকো। পাশাপাশি ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে তাঁর চমকপ্রদ মন্তব্য, “ইস্টবেঙ্গল আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল। অনেক শক্তিশালী। মোহনবাগান নয়। অনেক পিছিয়ে।”
ওডাফাদের ক্লাবে এখন প্রতিদিন পেপ-টক চলছে। বড় কর্তারা আগের দিন বক্তৃতা দিয়ে এ দিন উধাও। শুনশান তাঁবুতে সেই জায়গাটা নিলেন আধা-সিকি কর্তারা। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে কোনও ভিড় নেই বাগান তাঁবুতে। নেই কোনও ফুটবলারের নামে স্লোগান। টিকিট কাউন্টারে মাছি তাড়াচ্ছেন কর্মীরা।
মোহন-কর্তারা আলোচনার সময় মরক্কান কোচকে প্রশ্ন করেছিলেন, ডাবল ডিফেন্সিভ স্ক্রিন নিয়ে কেন টিম নামানো হচ্ছে? তীব্র চাপে থাকা করিম তাই এই ম্যাচে আক্রমণাত্মক দল সাজাচ্ছেন র্যান্টি-এরিকদের বিরুদ্ধে। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে ওডাফা-ক্রিস্টোফারের সঙ্গী হচ্ছেন বর্ধমানের ছেলে রাম মালিক। মাঝমাঠে ডেনসন, কাতসুমি, মণীশ ভার্গব। করিম বললেন, “আমি ফর্মেশন ভাঙা-গড়া করি। এই ম্যাচে তিন পয়েন্টই চাইছি।” তার আগেই অবশ্য এ দিন করিমের পছন্দ করে আনা আরও দুই ফুটবলার নিকোলাও বর্জেস আর ব্রাঙ্কোকে নাইজিরিয়ান এরিকের মতোই ছেঁটে ফেলল বাগান।
করিমের উল্টো অবস্থা এলকোর। ফুরফুরে। টিমের আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যেও পুরো টিমকে চাঙ্গা রেখেছেন। বাগানে যখন মিটিং আর মিটিং, তখন অনুশীলনের আগে প্রজেক্টরে পুণে ম্যাচের সিডি দেখিয়ে বেলো-হারুনদের ভুল শুধরে দিতে দেখা গেল ইউনাইটেড কোচকে। হাতে লালকমল ভৌমিক-সহ প্রচুর বিকল্প ফুটবলার। ফলে ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে দল সাজাচ্ছেন ডাচ কোচ। “আমি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে পছন্দ করি। মাটিতে বল রেখে, প্রচুর পাস খেলে আমার ছেলেরা। তুলে তুলে খেলা আমার পছন্দ নয়,” চোখ টিপে বলছিলেন এলকো। কটাক্ষটা যে বিপক্ষের ব্যর্থ স্ট্র্যাটেজিকে, বুঝতে অসুবিধা হওয়া কথা নয়।
দু’দলের কোচের ফর্মেশন এবং মনোভাবে পরিষ্কার, লড়াইটা হবে মাঝমাঠে। মাঝমাঠ যার, ম্যাচ তার।
করিম-ব্রিগেডের লড়াই বেঁচে থাকার। ঘন অন্ধকার থেকে আলোর রেখা খোঁজার। সেখানে এলকোর জোড়া লড়াই। জেতার স্ট্র্যাটেজি তৈরি তো করতে হচ্ছেই। পাশাপাশি ক্লাবের তীব্র আর্থিক সঙ্কটের সময় ‘ভিটামিন এম’ ছাড়াই ফুটবলারদের মোটিভেট করতে হচ্ছে। বিশেষ করে নিয়মিত মাইনে না পাওয়া প্লেয়ারদের। ইউনাইটেডের যা করুণ আর্থিক অবস্থা, যে কোনও দিন ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে ক্লাবের। এই অবস্থায় একটা টিম কী ভাবে খেলছে সেটাই আশ্চর্যের। স্পনসর পাওয়ার শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন কর্তারা। ইস্টবেঙ্গলকে থামিয়ে দেওয়ার পর বাগান-জয় তাদের হয়তো লাইফলাইন দেবে, আশায় আলো-নবাবরা।
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মোহনবাগান না, রুটিরুজির খোঁজে লড়াই চালানো ইউনাইটেডকাদের শেষ পর্যন্ত সাহায্য করেন ‘ফুটবল ঈশ্বর’ সেটাই দেখার।
|
শুক্রবারে
আই লিগ ফুটবল
মোহনবাগান: ইউনাইটেড স্পোর্টস (যুবভারতী ৫-৩০)
চার্চিল: বেঙ্গালুরু এফসি (গোয়া)
শিলং লাজং: সালগাওকর (শিলং)।
|
পুরনো খবর: ওডাফাকে ফিরে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন র্যান্টিও |
|
|
|
|
|