মহাকরণে কেরোসিন উদ্ধারের ঘটনায় নবান্নের বড়কর্তারা ষড়যন্ত্রের ছায়া দেখেছিলেন। তদন্তে নেমে এক জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। কিন্তু তিন দিন তদন্ত চালিয়েও ষড়যন্ত্রের সমর্থনে কোনও প্রমাণ তাদের হাতে আসেনি বলে প্রশাসন-সূত্রের খবর।
মহাকরণে কেরোসিন ছড়ানোয় শনিবার রাতে পুলিশ হুগলির শ্রীরামপুরের বাসিন্দা জ্যোতির্ময় নন্দীকে গ্রেফতার করেছে। তিনি কীটনাশক ছড়ানোর কাজ করেন। এখন তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে কোন ধারায় মামলা চালানো হবে?
তদন্তকারী এক অফিসার মঙ্গলবার দাবি করেন, মহাকরণে স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি ঘরে কোরেসিন রেখে যাওয়ার ঘটনায় ধৃত ব্যক্তির গাফিলতি ছিল, যার জেরে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এর প্রেক্ষাপটে পুলিশ এখন জ্যোর্তিময়ের বিরুদ্ধে সেই গাফিলতির অভিযোগেই মামলা চালাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এবং পুলিশ-সূত্রের ইঙ্গিত, ষড়যন্ত্রের প্রমাণ না-মিললেও পরশু, শুক্রবার ধৃতকে আদালতে তোলা হলে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করবে পুলিশ।
পুলিশ-সূত্রের খবর: মহাকরণ, ভবানী ভবন-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে কীটনাশক ছড়ানোর কাজ করেন জ্যোতির্ময়। তদন্তে প্রকাশ, প্রতি শুক্রবার তিনি কীটনাশকের সঙ্গে কেরোসিন তেল মিশিয়ে মহাকরণের জে ব্লকে পাবলিকেশন বিভাগে স্প্রে করতেন। কিন্তু মহাকরণে প্রবেশের কোনও বৈধ অনুমিতপত্র তাঁর কাছে ছিল না। বিনা অনুমতিতে কী ভাবে তিনি পুলিশের চোখ এড়িয়ে একতলা-দোতলা-তিনতলায় অবাধে ঘুরে বেড়িয়েছেন, তা নিয়ে ওখানে ডিউটি করা পুলিশ-কর্তাদের কাউকে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
পুলিশমহলেরই একাংশের বক্তব্য: মহাকরণে এখন ভিভিআইপি-রা না-থাকলেও নিরাপত্তায় গাফিলতি থাকা উচিত নয়। সে ক্ষেত্রে গেটে মোতায়েন পুলিশকর্মীদের চোখ এড়িয়ে কেরোসিন নিয়ে জ্যোতির্ময় ঢুকলেন কী ভাবে, তা-ও তদন্ত করে দেখা উচিত।
জ্যোতির্ময়কে গ্রেফতার করে পুলিশ অবশ্য ইতিমধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। জ্যোতির্ময়ের পরিবারের তরফেও তাঁর মুক্তির আবেদন জানানো হয়েছে। যদিও পুলিশের দাবি, তাঁর সঙ্গে আগাগোড়া মানবিক ব্যবহার করা হচ্ছে, এমনকী, থানায় সর্বক্ষণ তাঁকে লক-আপেও রাখা হচ্ছে না। “আমরা ওঁর সঙ্গে যথেষ্ট মানবিক ব্যবহার করছি।” এ দিন বলেন লালবাজারের এক কর্তা। রবিবার জ্যোতির্ময়কে যখন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হয়েছিল, তাঁর হয়ে কোনও আইনজীবী দাঁড়াননি। এ দিন অবশ্য বেশ কয়েক জন আইনজীবী তাঁর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। |