বিধানসভার ৭৫ বর্ষ-সমাপ্তির অনুষ্ঠান বিরোধীশূন্য হওয়ার দিকেই এগোল আরও এক ধাপ। দুই বিরোধী পক্ষ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের বিধায়কেরা আজ, বুধবার বিশেষ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে বিধানসভায় যাবেন। কিন্তু প্ল্যাটিনাম জুবিলির অনুষ্ঠানে তাঁদের না দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। আলিমুদ্দিনে মঙ্গলবার বৈঠক করে বামফ্রন্ট নেতৃত্ব একমত হয়েছেন, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ এবং সরকারের ‘অগণতান্ত্রিক আচরণে’র প্রতিবাদ জানিয়ে ওই অনুষ্ঠানে না যাওয়াই ভাল। তবে সেই সিদ্ধান্তে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর বসানোর ভার দেওয়া হয়েছে বাম পরিষদীয় দলের উপরে। পাশাপাশি, কংগ্রেস তাদের পুরনো অবস্থানই বজায় রেখেছে।
বামেদের মধ্যে সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক গোড়া থেকেই অনুষ্ঠান বয়কটের পক্ষে ছিল। আপত্তি ছিল সিপিআই, আরএসপি, ডিএসপি-র। বিধায়ক-সংখ্যার বিচারে সিপিএম এবং ফ ব-ই অবশ্য পাল্লায় ভারী। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের উপস্থিতিতে এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকে সিপিআই এবং আরএসপি নেতৃত্ব তাঁদের অবস্থান অনেকটাই নরম করেছেন। তাঁদের মত ছিল, রাষ্ট্রপতি বা লোকসভার স্পিকারের মতো অতিথিদের সামনে বিধানসভার অনুষ্ঠানের ওই মঞ্চ ব্যবহার করেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসা উচিত। দুই মতের সমন্বয় রাখার জন্যই শেষ পর্যন্ত বাম নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আজ অনুষ্ঠান শুরুর আগে বাম পরিষদীয় দল বৈঠক করে বিধানসভার স্পিকারকে চিঠি দেবে। কোন পরিস্থিতিতে তাঁরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন না, সেই কথাই চিঠিতে ব্যাখ্যা করা হবে। এতে বয়কট করাও হবে, আবার প্রতিবাদ জানানোও হবে। তবে ‘বয়কট’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাইছেন না বাম নেতারা।
এই অনুষ্ঠানে যোগদানের প্রশ্নে বামফ্রন্ট যখন দু’বার বৈঠক করল, তখন তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিল না কেন? এই প্রশ্নের জবাবে এ দিন আলিমুদ্দিনে বৈঠকের পরে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “বামফ্রন্টের কাউকে তো আমন্ত্রণ জানায়নি! আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কে? যাঁরা নির্বাচিত বিধায়ক, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।”
বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ দিনও সব বিধায়ককে ৭৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে হাজির থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কেউ না-এলে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষমেশ আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে কি না, তার কোনও স্পষ্ট উত্তর এ দিন পর্যন্ত কারও কাছ থেকেই পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, প্ল্যাটিনাম জুবিলির সমাপ্তি উপলক্ষে বিধানসভা ভবন ফুল এবং আলোয় সেজে উঠলেও বিরোধীদের অনুপস্থিতি অনুষ্ঠানের ঔজ্জ্বল্য অনেকটাই ম্লান করে দিতে পারে।
কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব দিল্লি থেকে বলেছেন, “অনুষ্ঠানে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। আমাদের আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।” সোহরাব ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বিষয়টি দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীকেও জানিয়েছেন। অনুষ্ঠান বয়কট করলেও আজ অবশ্য কংগ্রেসের সব বিধায়ককেই বিধানসভায় আসতে বলা হয়েছে। পরিষদীয় দলে আলাপ-আলোচনার পরে তবেই হাজিরা খাতায় সই করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে কংগ্রেস। সমাপ্তি অনুষ্ঠান বয়কট করেও হাজিরা খাতায় সই করে ভাতা নেওয়া অনৈতিক বলে কংগ্রেস বিধায়কদের একাংশের অভিমত।
|