সংশয় কাটাতে আসরে গৌতম
ঢিলেমি নয় তদন্তে, বোঝাতে চায় রাজ্য
গ্রেফতার হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোদালা কিরণকুমারের জামিন এবং কে জয়রামনকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠানোর পরে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসজেডিএ) কাণ্ডের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। সংশয় তৈরি হয়েছে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের তদন্তকারী অফিসারদের মধ্যেও। এই অবস্থায় মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব দাবি করেছেন, “কোনও বিতর্ক বা সংশয়ের অবকাশ নেই। কাউকে আড়াল করার প্রশ্নও নেই। তদন্ত শেষ করে যথাসময়ে চার্জশিট পেশ হবে। যাঁদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ মিলবে, তাঁদের কাউকে ছাড়া হবে না।”
যদিও ওই মামলায় যে সব নেতার নাম জড়িয়েছে, তাঁরা গ্রেফতার হলে লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেই। ইতিমধ্যেই দলীয় বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা, জলপাইগুড়ির সাংগঠনিক সভাপতি চন্দন ভৌমিককে জেরা করেছে পুলিশ। জেরা করা হয়েছে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক তথা দার্জিলিং জেলা সভাপতি (সমতল) শঙ্কর মালাকারকেও। এর পর অন্য অভিযুক্তরা যদি দলের একাধিক নেতার ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে সরব হন এবং তার জেরে পুলিশ যদি ওই নেতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চায়, তা হলে কী করা হবে প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
কিন্তু অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, জনমানসে এই ধারণা তৈরি হওয়া ঠেকানোই আপাতত শাসক দলের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ দিন সেই চেষ্টায় নেমে গৌতমবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, “উন্নয়নের টাকা নয়ছয় হয়েছে, এই অভিযোগ পাওয়া মাত্র মুখ্যমন্ত্রী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এফআইআর-এর নির্দেশ দেন। তখন কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও দল কোনও মিটিং-মিছিল করেনি।”
পুলিশ সূত্রেও বলা হচ্ছে, পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারদের নিয়ে বৈঠকের সময়ে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামনকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে টাকা উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সবুজ সঙ্কেত পেয়ে তদন্তে নেমে নগদ ৪ কোটি টাকা এবং একাধিক সরকারি কর্তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন প্রভূত সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমারকে গ্রেফতারের পর থেকে একের পর এক যে সব ঘটনা ঘটেছে, তাতে তাঁদের অনেকেই খানিকটা হকচকিয়ে গিয়েছেন।
তবে কিরণকুমার এই দুর্নীতিতে জড়িত বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেই পুলিশকর্তাদের দাবি। তদন্তকারী দলের অফিসারদের একাংশ জানান, কিরণকুমার এসজেডিএ-এর মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক থাকার
সময়েই একাধিক প্রকল্পের কাজে নয়ছয় হয়েছে বলে স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। যে প্রকল্পে কাজ না-করিয়ে ঠিকাদারদের টাকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে নথিপত্রে গোদালা কিরণকুমারের শতাধিক সই রয়েছে। প্রতিবারই জেরার সময়ে কিরণকুমার দাবি করেছেন, ইঞ্জিনিয়াররা কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে বলে রিপোর্ট দেওয়ায় তিনি টাকা দেওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছেন। তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে।
কিন্তু পুলিশ কর্তারা এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তাঁদের সন্দেহ, মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক সব জেনেই নথিপত্রে সই করেছিলেন। এমনকী, ওই মামলায় ধৃত এক ইঞ্জিনিয়ারের আইনজীবী পার্থ চৌধুরী বারেবারেই আদালতে সে কথা উল্লেখ করে, কেন কিরণকুমারকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। তাতে শুনানির সময়ে তদন্তকারী অফিসাররা বিব্রত হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
যে ৮টি প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে মামলা হয়েছে, তাতে যুক্ত প্রায় সব ঠিকাদারই গ্রেফতার হয়েছেন। তদারকিতে থাকা ইঞ্জিনিয়র মৃগাঙ্কবাবু, সপ্তর্ষি পাল ও প্রবীণকুমারও গ্রেফতার হয়েছেন। ধৃতদের একাংশের কাছ থেকে কিরণকুমারের ভূমিকা নিয়ে নানা তথ্য মিলেছে বলে দাবি তদন্তকারী অফিসারদের। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মৃগাঙ্কমৌলি সরকারের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি থাকার ব্যাপারে খোঁজখবরের সময়ে প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের ব্যাপারেও কিছু অভিযোগ পাওয়া যায়। সেই সময়ে হায়দরাবাদে গিয়ে বেশ কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে বলে একাধিক তদন্তকারী অফিসারের দাবি। সেই সব তথ্য জয়রামন নিয়মিত রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা। তার পরেও মামলা নিয়ে ধীরে চলার জন্য তাদের উপরে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল, অভিযোগ পুলিশের।
যদিও গৌতমবাবুর দাবি, “চাপাচাপির অভিযোগ ভিত্তিহীন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কথা জানিয়ে এফআইআর করা হয়। পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে।” তাঁর সংযোজন, “আমি কোনও দিন পুলিশ কমিশনারের কাছে মামলার ব্যাপারে কিছু জানতে চাইনি।”
কিন্তু কিরণকুমারকে গ্রেফতারের পরে যে ভাবে ডিআইজি পদমর্যাদার এক জন অফিসারকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠানো হয়েছে, যে ভাবে মালদহের জেলাশাসককে গোড়ায় চার দিনের জন্য হেফাজতে চেয়েও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর জামিনে সায় দিতে হয়েছে তাতে উচ্চ আদালতে মামলা বা সিবিআইয়ের হাতে তদন্ত গেলে কী জবাবদিহি করতে হবে তাই নিয়েই এখন চিন্তিত তদন্তকারী অফিসারেরা।
যদিও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর তির্যক মন্তব্য, “রাজ্য সরকার স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করেছে। ১১ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এত দিন সকলে চুপ করে থাকলেন। আর এখন সিবিআই তদন্ত চাওয়া হচ্ছে? সিবিআই কেন, এফবিআই-কে দিয়ে তদন্তের দাবিও তুলতে পারেন।”
ঝামেলায় গোদালা
সাত গেরো
৪০৯ ধারা— সরকারি পদের ফায়দা নিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ। যাবজ্জীবন।*
৪৬৭ ধারা— জাল নথি তৈরি। যাবজ্জীবন।*
৪৬৮ ধারা— প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাল নথি তৈরি। সাত বছর জেল, জরিমানা।*
৪৭১ ধারা— জাল নথিকে আসল বলা। সাত বছর জেল, জরিমানা।*
৪৭৭ (এ) ধারা— হিসেবের খাতায় মিথ্যে তথ্য দেওয়া। সাত বছর জেল।*
৪২০ ধারা—প্রতারণা। সাত বছর জেল।*
১২০ (বি) ধারা— ফৌজদারি ষড়যন্ত্র। যে ধরনের ষড়যন্ত্র, সেই অনুযায়ী সাজা।
*সর্বোচ্চ শাস্তি

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.