চালে লেভির বাঁধন খুলতে চায় কেন্দ্র, গররাজি রাজ্য
থায় বলে, মাছে-ভাতে বাঙালি। মাছ জুটুক না-জুটুক, তার রোজকার পাতে ভাতের জোগানে অন্তত যাতে কোনও মতেই টান না-পড়ে, সে জন্য দিল্লির উদ্যোগে জল ঢালতে কোমর বাঁধছে রাজ্য সরকার।
প্রথমত রাজ্যবাসীকে ন্যায্য মূল্যে চাল সরবরাহের দায়িত্ব, উপরন্তু রয়েছে খাদ্য-সুরক্ষা নিশ্চিত করার তাগিদ। কেন্দ্র চালকলের উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নিতে চাইলেও এই দুই কারণে রাজ্যের তাতে ঘোরতর আপত্তি। এ বিষয়ে রাজ্যের কঠোর মনোভাবের কথা দিল্লিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেওয়ার তোড়জোড়ও চলছে বলে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত।
রাজ্যের চালকলগুলোয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ বলবৎ রয়েছে দু’ভাবে। প্রথমত, চালকল বসানোর জন্য মালিকদের রাজ্য খাদ্য দফতরের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। দ্বিতীয়ত, রাইস মিলে উৎপাদিত চালের ৫০ ভাগ রাজ্য সরকারের কাছে বেচতে হয়, কেন্দ্র-নির্ধারিত দামে। কেন্দ্রীয় সরকার ফি বছর চালের যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস) বেঁধে দেয়, মিল-মালিকেরা সেই দরেই তাঁদের উৎপাদনের অর্ধেক রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দিতে বাধ্য। যাকে বলে লেভি আদায়। “লেভি আদায় করে বাজারে চালের জোগান অব্যাহত রাখা যায়, দামও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।” বলছেন রাজ্যের খাদ্য-কর্তারা।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ বার এই লেভি-ব্যবস্থাটাই তুলে দিতে চাইছে। এই উদ্যোগের বিরোধিতায় রাজ্যের পাল্টা যুক্তি, চালকলের উপরে সরকারি লাগাম আছে বলেই এখনও চালের দাম মধ্যবিত্তের আয়ত্তে। নচেৎ আম-বাঙালির রোজকার নুন-ভাত জোটানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। অন্য দিকে কেন্দ্র তা মানতে নারাজ। কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের প্রস্তাব: যাঁরা সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকতে ইচ্ছুক, সেই সব মালিকের চালকলই শুধু সরকার নিয়ন্ত্রণ করুক। স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করতে চান যাঁরা, তাঁদের উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণ না-থাকাই বাঞ্ছনীয় বলে মনে করছেন দিল্লির কর্তারা।
সেই মতো কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী কে ভি টমাস গত ২১ নভেম্বর রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে চিঠি দিয়েছেন। চিঠির প্রস্তাব: লেভি আদায় প্রক্রিয়ায় সরকারি ভূমিকা প্রত্যাহার করা হোক। চিঠিতে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘বিভিন্ন মহল থেকে মন্ত্রকের কাছে এই মর্মে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে যে, লেভি আদায় বাধ্যতামূলক করার কোনও যুক্তি নেই। যাঁরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরকারকে লেভি দিতে চাইবেন, শুধু তাঁদের এই প্রক্রিয়ায় সামিল করা হোক। যাঁরা চাইবেন না, সরকার তাঁদের জোর করতে পারবে না। ফলে লেভি দিতে অনিচ্ছুক মিল-মালিকেরা উৎপাদিত সামগ্রী নিজেদের ইচ্ছে মতো বিক্রি করতে পারবেন।’
প্রস্তাবটি সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতামত জানতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী। বস্তুত চালকল থেকে লেভি আদায় প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটানোর লক্ষ্যে দিল্লির তৎপরতা শুরু হয়েছে বেশ ক’মাস আগেই। রাজ্য খাদ্য-সূত্রের খবর, গত জুনে কেন্দ্র প্রস্তাব দিয়েছিল, রাইস মিলে উৎপাদিত চালের সর্বাধিক ২৫ ভাগ লেভি হিসেবে আদায় করা হোক। কিন্তু সে প্রস্তাব ধোপে টেকেনি। দফতর-সূত্রের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, উত্তরপ্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশও তার বিরোধিতা করেছিল।
এর পরেই এসেছে নতুন চিঠি। তবে কেন্দ্রের উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, চালকলে এ হেন ‘বিনিয়ন্ত্রণ নীতি’র তীব্র বিরোধিতায় এ বারও রাজ্য প্রস্তুত। “এ বছরে ২২ লক্ষ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তার ৮ লক্ষ টন আসার কথা লেভি বাবদ। কেন্দ্র যদি লেভি আদায়ের সরকারি ক্ষমতাই কেড়ে নেয়, তা হলে ধান-চাল সংগ্রহের প্রক্রিয়া মাঠে মারা যাবে।” বলছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। তাঁর মন্তব্য, “এমন প্রস্তাব কী ভাবে মানব? মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তাঁর পরামর্শ মেনে কেন্দ্রকে মতামত পাঠানো হবে।”
এবং লেভি বহাল রাখতে রাজ্য সরকারের এত গরজের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খাদ্যমন্ত্রী চাহিদা-জোগানে ভারসাম্যের যুক্তিই দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “রাজ্য সরকার লেভির চাল সংগ্রহ করে বলেই বাজারে জোগান ঠিক থাকে, দাম থাকে নাগালে। নিয়ন্ত্রণ উঠে গেলে চালকল-মালিকেরা এ রাজ্যের চাল বিনা বাধায় অন্য রাজ্য বা পড়শি রাষ্ট্রে রফতানি করতে পারবেন। ফলে দাম অনেকটাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।” জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, “আলু নিয়ে যে অভিজ্ঞতা হল, তাতে চাল নিয়ে আর ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। একটা সময়ের পরে সরকার আলু রফতানি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। লেভি আছে বলেই চালের দাম গত ক’বছরে লাগামছাড়া হতে পারেনি।”
কেন্দ্রের প্রস্তাবের পিছনেই বা যুক্তি কী? এক দিকে তারা যখন খাদ্য-সুরক্ষা আইন চালু করছে, অন্য দিকে চালের উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণ রদের উদ্যোগ কেন?
কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের এক মুখপাত্রের ব্যাখ্যা, এর মূলে খাদ্যদ্রব্যে নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহারের নীতি। যার অঙ্গ হিসেবে ইতিমধ্যে চিনি বিনিয়ন্ত্রিত হয়েছে। এ বার লক্ষ্য চাল। সেটা কার্যকর হলে নীল কেরোসিন তেলের ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
চিনি-চাল কেরোসিনেই অবশ্য শেষ নয়। “ধীরে ধীরে তৈলবীজ আর ডালেও যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার চেষ্টা হবে,” বলছেন দিল্লির মুখপাত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.