বন্ধ হোক হিংসা, শান্তি ফিরুক। তাইল্যান্ড প্রশাসন তা-ই চাইছে। আর সেই কারণেই বিক্ষোভকারীদের আজ প্রতিবাদ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ঢুকতে দিয়েছে পুলিশ। যাকে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারীরা দেখছেন তাঁদের আংশিক জয় হিসেবেই।
প্রাথমিক এই শান্তি প্রক্রিয়ায় লাভবান হচ্ছেন বিদেশি পর্যটকরা। পর্যটনই এ দেশের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস। বিক্ষোভে মার খাচ্ছিল সেই ব্যবসা। টানা ন’দিনের বিক্ষোভে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। তাই রাজনৈতিক সঙ্কট দ্রুত মেটানোর জন্য চাপ তৈরি হচ্ছিল তাইল্যান্ড প্রশাসনের উপরে। যে কারণে বিনা বাধায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এ দিন ঢুকতে দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের।
এই মুহূর্তে পর্যটকদেরই অগ্রাধিকার দিতে চাইছে তাইল্যান্ড সরকার। মঙ্গলবার ট্যুরিজম অথরিটি অফ তাইল্যান্ড (ট্যাট) পর্যটকদের জন্য এক গুচ্ছ নির্দেশ ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছে। যাতে বলা হয়েছে, সরকারি অফিস, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এবং সংসদ চত্বর জুড়ে যে ১৪টি রাজপথ গিয়ে মিশেছে, সেই পথ এড়িয়ে চলতে। ট্যাট-এর পরামর্শ, ‘সরকারি যানবাহন ব্যবহার করুন। যেখানে বেশি ভিড়, সেই জায়গা এড়িয়ে চলুন।’ ১৪টি প্রধান রাস্তা বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকায় অন্য রাস্তায় ব্যাপক যানজটে জেরবার হচ্ছেন মানুষ। ব্যাঙ্কক ঘুরে ফেরার সময় যানজটে আটকে উড়ান ধরতে পারেননি অনেকে। তাঁদের জন্য বিমানবন্দরে আলাদা কাউন্টারও খোলা হয়েছে। |
বিক্ষোভের আঁচ কমাতে যথেষ্ট তৎপর সরকার। পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে দেওয়ার পরে আন্দোনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর দফতর চত্বরে ঢুকে পড়েন। পুলিশ জানায়, কোনও বলপ্রয়োগ করা হবে না। অথচ এই দফতরে ঢোকার জন্য গত সপ্তাহান্তেই যথেষ্ট বেগ পেতে হয় বিক্ষোভকারীদের। পুলিশও ছিল মারমুখী। আর এ দিন সেই পুলিশই গোলাপ তুলে দিয়েছে বিক্ষোভকারীদের হাতে। হঠাৎ কী কারণে তাইল্যান্ড সরকারের এই ভোলবদল? পর্যটন ব্যবসা তো বড় কারণ বটেই। তা ছাড়া, বৃহস্পতিবার রাজা ভূমিবল অদুল্যদেজের ৮৬ তম জন্মদিন। সেই উপলক্ষে সব রকম উত্তেজনা-বিক্ষোভে আপাতত ইতি টানতে চাইছে সরকার। ২৯ নভেম্বর থেকে ব্যাঙ্ককে রয়েছেন কলকাতার চৌরঙ্গির বাসিন্দা রাজেশ গিদওয়ানি। শহরের কেন্দ্রস্থল পাতুনাম থেকে ফোনে রাজেশ বলেন, “সারা দিন দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছি। তবে রাস্তাঘাট তুলনায় বেশ ফাঁকা। শপিং মলগুলিতেও লোকজন নেই।”
১১ ডিসেম্বর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে তাইল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বহরমপুরের সমীর সরকারের। কিন্তু অশান্ত অবস্থার জন্য বাতিল করেছেন সফর। পর্যটন সংস্থার অধিকর্তা ইন্দ্রজিৎ সরকার বলেন, “গত মাসে পর্যটক নিয়ে গিয়েছিলাম। ডিসেম্বরে আর ঝুঁকি নিতে চাই না।” অন্য একটি ভ্রমণসংস্থার কর্তা পিনাকী মিত্র বলেন, “চলতি মাসে তাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য ১২ জন নাম লিখিয়ে অগ্রিম দিয়েছেন। কিন্তু আমরা সফর বাতিল করতে বাধ্য হলাম।” যএয়ারওয়েজের জেনারেল ম্যানেজার সিঙ্গটোরোজ ভাচাইয়া বলেন, “বৃহস্পতিবার তাইল্যান্ডের রাজার জন্মদিন। তার আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
|