জাতীয় পার্টির নেতা হুসেইন মহম্মদ এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট আরও জটিল হল। এ দিকে বিএনপি ও তাদের শরিক জামাতে ইসলামি নির্বাচন বয়কট করে অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনায় মঙ্গলবারও দেশের নানা জায়গায় অন্তত ৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতেই কাল ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া ও এরশাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ভারতের বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, অচলাবস্থা নিরসনে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য খালেদা ও এরশাদের কাছে আর্জি জানাতে পারেন সুজাতা।
পাঁচ বছর আওয়ামি লিগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের শরিক থাকার পরে আসন্ন নির্বাচনে একলা লড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন এরশাদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গড়েছেন, তাতেও এরশাদের দলের ৫ জন পূর্ণমন্ত্রী ও ২ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। আজ সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে এই প্রাক্তন সেনাপ্রধান তথা স্বৈরশাসক হঠাৎই জানিয়ে দেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করার পরিস্থিতি না থাকায় তাঁর দল লড়বে না। জাতীয় পার্টির যে শ’খানেক প্রার্থী ইতিমধ্যেই মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন, তাঁদের তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় বিএনপি-র কর্মীরা অনেক জায়গায় মিস্টি বিলি করলেও দলের নেতারা জানিয়েছেন, বারে বারে অবস্থান পাল্টানো এরশাদকে তাঁরা বিশেষ ভরসা করছেন না। তাঁর দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভায় থাকবে বলে জানিয়েছেন এরশাদ। তবে এরশাদের ঘোষণাকে ‘প্রথমিক ভাবে স্বাগত’ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি-র মুখপাত্র সালাউদ্দিন আহমেদ।
আওয়ামি লিগ অবশ্য এরশাদের ঘোষণাকে হালকা করেই দেখেছে। দলের নেতা যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ওদায়েদুল কাদের বলেন, “উনি এ বেলা যা বলেন, ও বেলা তার উল্টো বলেন। এ বারেও তার অন্যথা হবে না।” ২০০৮-এর নির্বাচনে মহাজোটের শরিক হিসেবে ৪৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৭টি আসন জিতেছিল এরশাদের জাতীয় পার্টি। বিএনপি জিতেছিল ২৯টি। মহাজোট সূত্রের খবর, এ বার আওয়ামি লিগের কাছে ৬০ থেকে ৬৫টি আসন দাবি করে না-পাওয়াতেই প্রথমে ‘একলা চলো’ ও পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছেন এরশাদ। আওয়ামি লিগ নেতা তোফায়েল আহমেদও আজ ইঙ্গিত দিয়েছেন, আসন নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে মিটমাট হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের এই হিংসা ও অস্থিতিশীলতা ভারতের পক্ষে দুশ্চিন্তার। ইতিমধ্যেই বরিশাল, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, কুষ্ঠিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের ওপর পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। দিল্লির আশঙ্কা, নিরাপত্তার অভাবে বাংলাদেশে থেকে বহু মানুষ, বিশেষত সংখ্যালঘুদের একটা অংশ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসতে চাইবেন। গা-ঢাকা দিতে দুষ্কৃতীরাও অনুপ্রবেশ করতে পারে। ২০০৬-এ এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশে সেনাদের মদতে একটি শক্তি অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করেছিল। এ বারও সেই আশঙ্কা থেকেই যায়। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা সফরে এসে বিদেশমন্ত্রী আবুল হোসেন মাহমুদ আলি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া খালেদা জিয়া ও এরশাদের মতো বিরোধী নেতা-নেত্রীদের সঙ্গেও দেখা করে নয়াদিল্লির অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন ভারতের নতুন বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ। দু’দিনের সফর সেরে বৃহস্পতিবার দিল্লি ফিরে বাংলাদেশের আশু পরিস্থিতি নিয়ে ভারত সরকারের কাছে একটি রিপোর্টও তাঁর দেওয়ার কথা। তার পরে শুক্রবারই ঢাকা এসে সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা চালাবেন রাষ্ট্রপুঞ্জের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্ডেজ তারানকো। এর আগে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে দু’দুটি চিঠি পাঠিয়ে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন।
|
যশোরে বাসে ইট, বন্ধ বাণিজ্য
নিজস্ব সংবাদদাতা • বনগাঁ |
ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে আসার পথে মঙ্গলবার হামলা হল দু’টি ভারতীয় বাসে। জখম হন এক মহিলা। একটি বাসের জানলার কাচ ভাঙে। অন্যটির কাচে চিড় ধরে। পাশাপাশি এ দিনই দুপুরের পরে পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সীমান্ত-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। শুল্ক দফতরের ডেপুটি কমিশনার শুভেন দাশগুপ্ত বলেন, “বাংলাদেশের বেনাপোল শুল্ক দফতরের কর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, ওখানকার টার্মিনাসে আর ট্রাক রাখার জায়গা নেই। ফলে, তারা আর ট্রাক ঢোকার অনুমতিপত্র (কার পাস) দিতে পারবে না। বুধবারও বাণিজ্য হবে কি না সন্দেহ।” পেট্রাপোল শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যশোরেই দু’বার বাস দু’টিতে হামলার চেষ্টা হয়। দুপুর ২টো নাগাদ বাস দু’টি চাঁচরা মোড়ে পৌঁছলে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। তাতেই ভাঙে কাচ। বাস দু’টি বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ পেট্রাপোল বন্দরে এসে পৌঁছয়। জানলার ধারে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন নারায়ণগঞ্জ ফেরত খিদিরপুরের মমতাজ বেগম। ইটের ঘায়ে তাঁর বাঁ হাতের কব্জি থেঁতলে রক্ত বেরোয়। তাঁর কথায়, “হাতটা মাথায় না থাকলে মাথাটাই ফাটত।” ওই বাসেই কোলের শিশু ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কলকাতায় এসেছেন ঢাকার পপি। তিনি বলেন, “হঠাৎ একটি ইট পায়ের কাছে এসে পড়ল। অল্পের জন্য বাচ্চাটা রক্ষা পেয়েছে।”
পুরনো খবর: অবরোধ বাড়ল ৭২ ঘণ্টা |