সুদূর মিজোরামে কাজে গিয়ে জঙ্গিদের হাতে অপহৃত হয়েছেন এলাকারই এক তরতাজা যুবক। সোমবার সেই অপহৃত টেলিকম কর্মী দীপ মণ্ডলকে উদ্ধারের দাবিতে দলমত নির্বিশেষে পথে নামলেন বাঁকুড়ার ইন্দাস থানা এলাকার আমজনতা। রীতিমতো প্ল্যাকার্ড হাতে এলাকায় মিছিল করে তাঁরা ইন্দাসের বিডিও এবং থানার ওসি-কে স্মারকলিপিও দিলেন।
নিখোঁজ হওয়ার পর নয় দিন কেটে গেলেও ইন্দাসের দিবাকরবাটির ওই যুবকের হদিশ পায়নি পুলিশ-প্রশাসন। গত ২৩ নভেম্বর মোবাইল টাওয়ার তৈরির কাজ তদারকি করতে মিজোরামের মামিত জেলার ডাম্পারেংপুই গ্রামে গিয়েছিলেন দিল্লির একটি বেসরকারি সংস্থার আধিকারিক দীপ মণ্ডল। সেখানেই অজ্ঞাতপরিচয় জঙ্গিরা তাঁকে এবং গাড়ি চালক সাংলিয়ানথাঙ্গাকে অপহরণ করে। অস্ত্র দেখিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য গাড়ির চালক লালজামলিয়ানাকেও। মিজোরাম পুলিশের দাবি, অপহরণকাণ্ডে ব্রু জঙ্গি অথবা ত্রিপুরার এনএলএফটি জঙ্গি সংগঠনের হাত রয়েছে। তদন্তকারীদের আশঙ্কা, ২৫ নভেম্বর জঙ্গলের পথে তিন অপহৃতকেই বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকারি ভাবে গত সোমবার দীপের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানতে পারেন তাঁর পরিবার। তার পর থেকেই কার্যত দিশেহারা ওই যুবকের পরিবার। অবিলম্বে ঘরের ছেলেকে খুঁজে বের করার দাবিতে এ বার রাস্তায় নামলেন তাঁর বন্ধু, শিক্ষক, পাড়াপড়শি থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা। |
পরিবার সূত্রের জানা গিয়েছে, গত বছর ইন্দাস কলেজ থেকে বিএ পাশ করে দীপ কলকাতায় সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পিসতুতো দাদা অর্ণব মণ্ডলের কাছে কাজ শিখে একটি টেলিকম সংস্থায় যোগ দেন। দুর্গাপুজোর আগে তিনি দিল্লির সংস্থা ‘টেলিকম নেটওয়ার্ক সলিউশনে’র কলকাতা অফিসে কাজে যোগ দেন। পুজোর সময় বাড়িতে এসেছিলেন। পরে ওই সংস্থা তাঁকে গুয়াহাটি যেতে বলে। ভাইফোঁটার দিন গত ৫ নভেম্বর দুপুরে বাড়িতে খাওয়াদাওয়া সেরে দীপ গুয়াহাটি রওনা দেন। সেখান থেকেই তিনি মোবাইল টাওয়ার মেরামতির কাজে মিজোরামের মামিট জেলায় যান। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ন’টায় দীপের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল তাঁর একমাত্র বোন মধুমন্তী ওরফে রিমার। বোনকে দীপ বলেছিলেন, ‘দিন চারেক বাদেই গুয়াহাটি ফিরে যাব’। অপহরণের খবর পাওয়ার পর গত বুধবারই দীপের পিসতুতো দাদা অর্ণব মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে যান ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটে। সেখানে তাঁরা দীপকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার জন্য লিখিত আর্জিও জানানো হয়। কিন্তু সোমবার অবধি দীপের হদিশ দিতে ব্যর্থ দেশের পুলিশ-প্রশাসন।
এ দিনের মিছিলে সামিল হয়েছিলেন ইন্দাস কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। ছিলেন দীপের গৃহশিক্ষক থেকে স্কুলের শিক্ষকশিক্ষিকা, বন্ধু থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সকলেই। মধুমন্তীর হতাশা, “এত দিন পেরিয়ে গেল, অথচ পুলিশ-প্রশাসন দাদার কোনও সন্ধানই দিতে পারছে না। দাদা কোথায়, কেমন ভাবে আছে তাই তো আমরা বুঝতে পারছি না।” দীপকে খুঁজে বের করতে প্রশাসন সক্রিয় হোক, এটাই এখন তাঁদের দাবি। মিছিলে দীপের জন্য পা মিলিয়ে হেঁটেছেন ইন্দাসের গৌতম অধিকারী, বিশ্বরূপ ভট্টাচার্যরা। দু’দনেই বলেন, “দীপ অত্যন্ত ভাল ছেলে। ভীষণ মিশুকে। ছেলেটা কাজে গিয়ে উধাও হয়ে গেল! ওকে খুঁজে বের করাটা পুলিশ-প্রশাসনের অবশ্য কর্তব্য। আমরা এই দাবিতেই দলমত নির্বিশেষে সকলে সরব হয়েছি।” একই দাবি জানিয়েছেন দীপের গৃহশিক্ষক সুকুমার মাঝিরও।
এ দিন ইন্দাসের বিডিও পুষ্পেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দীপকে উদ্ধারের দাবি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা স্মারকলিপি দিয়েছেন। বিষয়টি ঊধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” অন্য দিকে, বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশকুমার বলেন, “দীপ মণ্ডলের খোঁজে মিজোরাম পুলিশের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। নিখোঁজ তিন জনেরই খোঁজ চলছে বলে সেখানকার পুলিশ জানিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কারও খোঁজ মেলেনি।” |