|
|
|
|
তিন-তিনটে টার্মিনাস, তবুও রাস্তার ধারে ট্যাঙ্কারের সারি |
অমিত কর মহাপাত্র • হলদিয়া |
তিন-তিনটে টার্মিনাস। তারপরেও হলদিয়ার রাস্তায় দাঁড়িয়ে লরি-সহ বড় বড় ট্যাঙ্কার। সঙ্কীর্ণ রাস্তায় শ্লথ হচ্ছে গাড়ির গতি। যানজটের ফাঁসে আটকে নাভিশ্বাস উঠছে হলদিয়াবাসীর।
ট্যাঙ্কার চালকদের বক্তব্য, টার্মিনাসে উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। ভারী গাড়ির চাকা বসে যায় মাটির জমিতে। তুলনায় শক্ত রাস্তা অনেক ভাল। টার্মিনাসের মতো নির্দিষ্ট ভাড়া গুণতে হয় না, মাঝে-মধ্যে ট্রাফিক পুলিশদের ‘সন্তুষ্ট’ করলেই চলে। বন্দরে জাহাজে ঢুকেছে শুনলে তড়িঘড়ি পৌঁছনোও যায়। অগত্যা রাস্তা দখল করেই নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে লরি। যানজট হচ্ছে, দুঘর্টনা বাড়ছে। দেখেও দেখে না পুলিশ-প্রশাসন।
হলদিয়া বন্দরে জাহাজে আসা তেল ও গ্যাস ট্যাঙ্কারে করেই পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি দিন গড়ে হলদিয়ায় পাঁচশো থেকে হাজার ট্যাঙ্কার
যাওয়া-আসা করে। বিভিন্ন কারণে বন্দরে সময়মতো জাহাজ না আসায় ট্যাঙ্কারের ভিড় বাড়ে। অনেক সময় বাধ্য হয়েই ট্যাঙ্কারগুলিকে এক থেকে চার দিন পর্যন্ত রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ ছাড়াও হলদিয়ার বিভিন্ন শিল্প সংস্থার মাল পরিবহণের জন্য শহরে কয়েক হাজার লরি ও ট্যাঙ্কার আসে নিয়মিত। সেগুলিও রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকে। সব মিলিয়ে এইচপিএল লিঙ্ক রোডে মঞ্জুশ্রী মোড় থেকে সিটি সেন্টার, ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে সিটি সেন্টার থেকে ব্রজলালচক পর্যন্ত রাস্তার একাংশ লরির দখলে।
অথচ টার্মিনাসগুলো গড়ের মাঠ। এই পরিস্থিতি কেন? |
|
হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল লিঙ্ক রোডের ধারে এভাবেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ট্যাঙ্কার। —নিজস্ব চিত্র। |
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনটির মধ্যে এইচপিএল লিঙ্ক রোড লাগোয়া ইন্ডিয়ান অয়েল পেট্রোনাসের পরিকাঠামো ভাল হলেও বাইরের ট্রাক সাধারণত ঢুকতে পারে না সেখানে। বাকি হাতে থাকল লিঙ্ক রোডের ধারে রিজেন্ট পার্কের টার্মিনাস ও সিটি সেন্টারের কাছে শুভেন্দু বেরা অ্যান্ড কোং। দু’টোরই পরিকাঠামো যথোপযুক্ত নয় বলে দাবি ট্যাঙ্কার চালকদের। রিজেন্ট পার্কের টার্মিনাসটি প্রায় ১০ একর জমির উপর। থাকতে পারে হাজার খানেক ট্যাঙ্কার। কিন্তু এখন যা পরিকাঠামো তাতে দু’শোর বেশি ট্যাঙ্কার থাকে না। ট্যাঙ্কার প্রতি ভাড়া আয়তন অনুযায়ী ৪০-১০০ টাকা। ট্যাঙ্কার চালকদের বক্তব্য, টাকা নিলেও পরিকাঠামো তৈরি করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। জমির বেশিরভাগটাই মাটির। শৌচাগার ও আলো পর্যাপ্ত নয়। আবার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ট্যাঙ্কার কম আসে বলে ব্যবসা হয় না। তাই পরিকাঠামোর মানোন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি।
শুভেন্দু বেরা অ্যান্ড কোং-এর টার্মিনাসে প্রায় ৬০০টি ট্যাঙ্কার থাকার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু অনেকটা জমি মাটির বলে ট্যাঙ্কার ঢুকতে চায় না। মোরাম দেওয়া অংশে খানা-খন্দ ও ধুলোর পুরু স্তর। শৌচাগার বেহাল। জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ট্যাঙ্কার প্রতি ৯০ থেকে সাড়ে তিনশো টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরি হয় বলে অভিযোগ আছে।
তাই ট্যাঙ্কার চালকদের পছন্দ পাকা রাস্তা। বিহার থেকে আসা ট্যাঙ্কার চালক বিনোদ যাদব বলেন, “চার বছর ধরে এই লাইনে ট্যাঙ্কার চালাচ্ছি। কোনও দিন কোনও টার্মিনাসে ঢুকিনি। ওরা টাকা নেয়। কিন্তু পরিষেবা তেমন নেই। আমরা কয়েকজন দল বেঁধে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়াই।”
উত্তরপ্রদেশের রামসেবক যাদব গত ৯ বছর ধরে ট্যাঙ্কার নিয়ে যাতায়াত করছেন হলদিয়ায়। তিনি বলেন, “যে দু’টো টার্মিনাসে ঢোকা যায়, সেগুলোর মেঝে কাঁচা। গর্ত হয়ে আছে যত্রতত্র। বর্ষায় কাদা হয়। অন্য সময় ধুলো ওড়ে। তুলনায় রাস্তায় অনেক ভাল থাকি আমরা।”
কিন্তু ট্যাঙ্কার চালকদের ভাল থাকার জেরে শহরবাসীর যে নাভিশ্বাস উঠছে, খোঁজ রাখে কে?
লরির জন্য দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকতে হয়। বিপজ্জনক ভাবে ট্যাঙ্কারের পাশে স্টোভ চালিয়ে রান্না চলে। দুর্ঘটনা শুধু সময়ের অপেক্ষা। রাস্তাও খারাপ হচ্ছে দিন-দিন।
হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক পি উলাগানাথন বলেন, “২৫ কোটি টাকা খরচ করে প্রায় ছ’কিলোমিটার এইচপিএল লিঙ্ক রোড তৈরি করেছে পর্ষদ। সেই রাস্তায় ভারী ট্যাঙ্কার দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় স্থায়িত্ব নষ্ট হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”
টার্মিনাসগুলির পরিকাঠামোর উন্নতি করলেই তো সমস্যা মেটে। পর্ষদ সেই সমস্যা মেটাচ্ছে না কেন? উলগানাথনের আশ্বাস, “টার্মিনালের পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে।” আর টার্মিনাস কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “পুলিশ ট্যাঙ্কারগুলিকে টার্মিনাসে আনা বাধ্যতামূলক করুক। আমরা পরিকাঠামোর উন্নয়ন করব।”
হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি আশ্বাস দেন, “কড়া নজরদারির জন্য ট্রাফিক টিম তৈরি করা হচ্ছে। টার্মিনাল বা পার্কিং জোনে গাড়ি না রাখলে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশের কড়া পদক্ষেপের অপেক্ষাতেই তো রয়েছেন হলদিয়াবাসী। |
|
|
|
|
|