আজ ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। গত আড়াই দশক ধরে ‘প্রতিবন্ধীরা আলোকিত হোন’ বলে বছরের পর বছর ঢাকঢোল পিটিয়ে চলেছে সরকার। কিন্তু বাস্তব? বিশ্ব প্রতিবন্ধী বর্ষ (১৯৮১) উদ্যাপনের আশার বাণী এত বছর পরেও লাল ফিতের বাঁধন থেকে মুক্তিলাভ করেনি।
বিগত বামফ্রন্ট সরকার বেশ কয়েক বছর আগে ঘোষণা করেছিল, মূক, বধির আর দৃষ্টিহীনদের শিক্ষাদানের জন্য মহকুমা ও ব্লক স্তরে পৃথক পৃথক ভাবে সরকারি স্কুল খোলা হবে। সরকারি উদ্যোগে এই ধরনের বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক’টি খোলা হয়েছিল তা পূর্বতন সরকারের কর্তারাই ভাল জানেন!
এক জন প্রতিবন্ধীকে শিক্ষার আলো পেতে গেলে আজও নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। সরকার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের যে শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে, যথাযথ সময়ে প্রচারের অভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে তা খুবই কম পৌঁছয়। অর্থের অভাবে মাঝপথে অনেককে পড়াশোনা বন্ধ করে নিরুপায় হয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করতে হয়। দরিদ্র পরিবারের বহুসংখ্যক ছাত্রছাত্রী শুধুমাত্র সরকারি ব্যবস্থার উপরই নিভর্র্রশীল। দুঃখের বিষয়, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও জানেন না এই ধরনের শিক্ষাবৃত্তি সরকার আদৌ দেয় কি না। |
এ রাজ্যে সত্তর শতাংশ মানুষের বসবাস গ্রামাঞ্চলে। স্বভাবত বেশির ভাগ প্রতিবন্ধী গ্রামবাসী। তাঁদের ক্ষমতার মূল্যায়নের পর পেশাগত পথ-নির্দেশ দিয়ে সুপরিকল্পিত ভাবে তৃণমূল স্তরে গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচিগুলিতে যুক্ত করা জরুরি। যা পরিকাঠামো আছে, তার সাহায্য নিয়েই অনেক কিছু করা যায়।
প্রতিবন্ধী কল্যাণ শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের সমাজ কল্যাণ দফতরে সীমাবদ্ধ নেই। এতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শ্রম, অর্থ, পরিবহণ, পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়নের মতো দফতরগুলিরও ভূমিকা রয়েছে। তারা পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে উদ্যোগ নিলে এই অবহেলিত ও অসহায় মানুষের অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ার কথা নয়।
এ বার আইন বিষয়ে দু’একটি কথা। কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিবন্ধীদের নৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার জন্য ‘প্রতিবন্ধীদের জন্য আইন (১৯৯৫)’ প্রণয়ন করে। সেটি রূপায়িত হয় ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬। ১৫টি শাখায় ৭৪টি উপধারার মধ্য দিয়ে সাত ধরনের প্রতিবন্ধী এই আইনে সমস্ত রকমের সুযোগ-সুবিধা ও স্বাধিকার অর্জনে সমর্থ হবেন। যেমন, ১) দৃষ্টিহীন, ২) ক্ষীণদৃষ্টি ক্ষমতাসম্পন্ন, ৩) দৈহিক প্রতিবন্ধী, ৪) মূক ও বধির, ৫) কুষ্ঠ আক্রান্ত, ৬) মানসিক প্রতিবন্ধী এবং ৭) মানসিক অসুস্থ। এই আইনের ফল হিসেবে গঠিত হয়েছে ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন তহবিল’। প্রসঙ্গত, সংসদে উত্থাপিত এই প্রতিবন্ধী বিলকে অনুমোদন করাতে যিনি জাতীয় স্তরে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করতে আইনের অধিকার তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। এর জন্য সর্বাগ্রে দরকার ঠিক পরিসংখ্যান, সর্ব স্তরে পুনর্বাসন, পরিষেবা, কর্মবিনিয়োগ এবং এ ধরনের মানবিক কাজে পরিবেশ রচিত করে বেশি করে প্রশিক্ষক তৈরি করা। সে কাজ শুরু হলে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস সার্থক হবে।
চৈতন্যময় নন্দ। মুগবেড়িয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
|
টিভি চ্যানেলের রিয়ালিটি শোয়ের অডিশনের জন্য অনেক বার লাইনে দাঁড়িয়ে আমার ও আমার স্ত্রীর তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। (‘গেম শো-র অডিশন বন্ধ শুনেই মারমুখী দিদিরা’, ৭-১১) ভোরবেলা লাইনে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার পর মাত্র এক বারই ‘নাম কা ওয়াস্তে’ অডিশন দিতে পেরেছিলাম, বাকি সময় অডিশন না দিয়েই ফিরতে হয়েছে। চোখের সামনে দেখেছি, নিরাপত্তা রক্ষীরা কী নির্লজ্জ ভাবে টাকা নিয়ে বেআইনি ভাবে অনেককে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। বাকিরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে শুধু অপেক্ষা করছে। তার মধ্যে শিশু, বালক, কিশোর, তরুণ, প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া সবাই আছেন। শো-এর কর্তারা বরং এস এম এস-এর মাধ্যমে প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রার্থীকে বাছাই করে অডিশনের জন্য ডাকুন। তা হলে প্রার্থী ও কর্তৃপক্ষের উভয়ের সম্মান রক্ষিত হবে এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যাবে।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল। কোন্নগর, হুগলি |