কম খাটুনির আম চাষে আগ্রহ মালদহের, খুশি ব্যবসায়ীরা
ধান, পাট চাষে খাটুনি অনেক। কিন্তু খাটার লোক কই। আজকালকার ছেলে -মেয়েদের চাষে আগ্রহ নেই। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের সুবাদে খেতমজুরও মেলা ভার। তাই তুলনায় কম পরিশ্রমের আম চাষে ঝুঁকছে মালদহ।
গত তিন বছরে মালদহের গাজল, রতুয়া, ইংরেজবাজার, কালিয়াচক, মানিকচক ব্লকের সাড়ে চার হাজারের বেশি কৃষক দেড় হাজার হেক্টর জমিতে (আগে ধান, গম বা পাট চাষ হত ) নতুন করে আম গাছ লাগিয়েছেন। চাষের এই প্রবণতায় জেলার কৃষি -কর্তাদের কপালে ভাঁজ পড়লেও খুশি জেলা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতর। খুশি আম ব্যবসায়ীরাও। ‘মালদহ ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে’র সভাপতি সুবোধ মিশ্রের মতে, “জেলায় ৬০ শতাংশ আম গাছের বয়স ৫০ -৬০ বছরের উপর। এই সমস্ত গাছের ফলন গুণগত মান কমতে -কমতে তলানিতে পৌঁছেছে। নতুন আম গাছ লাগানোটা তাই ইতিবাচক। আমের উপর নির্ভর অর্থনীতিও এর ফলে চাঙ্গা হবে।”
ফলনের হিসাব
• ২০০৯৯০ হাজার মেট্রিক টন
• ২০১০৩ লক্ষ মেট্রিক টন
• ২০১১২ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিক টন
• ২০১২১ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন
• ২০১৩৩ লক্ষ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন।
বস্তুত, আম চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ার মূল কারণটাও অর্থনৈতিক। গত পাঁচ -ছ’বছরে মালদহে ভাল আমের উৎপাদন হওয়ায় চাষিদের লাভ হচ্ছে। তাই আগ্রহ বাড়ছে। তা ছাড়া এক বার আম গাছ লাগানোর পর মাঝে -মধ্যে পরির্চযা করলেই চলে। আমের মুকুল আসার পর দু’-তিন মাস খাটতে হয় শুধু। ফলে কৃষক অন্য কাজও করতে পারেন। আম চাষের জন্য ন্যাশনাল হর্টিকালচার মিশন আর্থিক সাহায্য দেওয়ায় চাষিরা আরও বেশি করে উৎসাহ পাচ্ছেন।
ইংরেজবাজারের কাজীগ্রাম, বিনোদপুর, মানিকচক, রতুয়া কিংবা কালিয়াচক নম্বর ব্লকে এখন বিঘার পর বিঘা আম গাছ। পরানপুর গ্রামের মতিউর রহমানের বিঘা ধানের জমি। তার মধ্যে দু’বিঘা জমিতে বছর দু’য়েক আগে ৩০টি আমগাছ লাগিয়েছেন তিনি। মতিউর রহমানের সাফ কথা, “ধান চাষ করে যা খাটনি খরচ, সেই অনুযায়ী পয়সা নেই। দু’বিঘা জমিতে ধান চাষে খরচ হয়েছিল হাজার টাকা। ৩০ মন ধান বিক্রি করে হাজার টাকা পেয়েছি। তুলনায় আমে অনেক লাভ। খাটনিও কম। তাই ধীরে ধীরে ধান চাষ বন্ধ করে আম চাষ শুরু করেছি। আর কয়েক বছরের মধ্যেই সমস্ত জমিতে আম গাছ লাগিয়ে ফেলব।” রতুয়ার সফিউদ্দিন বলেন, “দু’বছর আগে মজুরের অভাবে সময় মতো ধান কাটতে পারিনি। দু’বিঘার মতো জমির ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দুই ছেলে বাইরে কাজ করে। এখন জমিতে খাটার মতো পরিবারে কেউ নেই। তাই বিঘা ধান জমিতে আমের গাছ লাগিয়েছি। ফলন শুরু হলে নিশ্চিন্ত।”
দিকে, ব্যাস্তানুপাতিক হারে ধান, পাট চাষ কমায় উদ্বিগ্ন জেলা কৃষি দফতর। উপ -কৃষি অধিকর্তা সজল ঘোষ বলেন, “এখন বহু কৃষক ধান, গম, পাট চাষ বন্ধ করে আম গাছ লাগাতে শুরু করেছেন। এর ফলে গত তিন বছর ধরে জেলায় কৃষি জমি কমছে। এই প্রবণতা বাড়তে থাকলে আগামী দিনে জেলায় ধান, গম পাটের উৎপাদন কমে যাবে। এটা যথেষ্ট চিন্তার।”
উল্টো দিকে, জেলা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের উপ -অধিকর্তা প্রিয়রঞ্জন সন্নিগ্রাহী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “মালদহে আম উৎপাদনের হার বেড়ে যাওয়া সাধারণ কৃষকদের মধ্যে আম চাষে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। স্থায়ী উপার্জনের আশায় ধান, গম, পাট চাষ বন্ধ করে অনেকেই আম চাষ শুরু করেছেন। গত তিন বছরে জেলায় দেড় হাজার হেক্টর আমের জমি বেড়েছে।”
ভাল -খারাপ বরাবরই আপেক্ষিক। গরমের দুপুরে হাতে আম পেলেই খুশি বাঙালি।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.