জেলাশাসকের পর কে পুলিশের জালে, জল্পনা
বার কার পালা? এসজেডিএ দুর্নীতি মামলায় গোদালা কিরণকুমারের গ্রেফতারের পরে এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সব মহলে।
আলোচনায় যে সব নাম উঠে আসছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, মাটিগাড়া নকশালবাড়ির তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা তৃণমূল নেতা রঞ্জন শীলশর্মা, তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সাংগঠনিক সভাপতি চন্দন ভৌমিক। সকলেই এসজেডিএ-র সদস্য। ওই মামলায় এঁদের জেরাও করেছে পুলিশ। রুদ্রনাথবাবু, রঞ্জনবাবু, চন্দনবাবু এবং শঙ্করবাবু গোড়া থেকেই নিজেদের সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। এখনও তা-ই বলছেন।
ঘটনা হল, তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণকুমার একাধিক বার জেরার সময়ে পুলিশকে সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছেন। তিনি যে যুক্ত নন, তা-ও দাবি করেছেন। কিন্তু তার পরেও তাঁকে গ্রেফতার করায় শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তা নিয়ে নানা মহলে নানা দাবি, প্রশ্ন উঠেছে।
যেমন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা দীর্ঘদিন এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান পদে থাকা অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, “মামলায় যাঁদের জেরা করা হয়েছে, তাঁদের সকলকেই গ্রেফতার করা দরকার।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী জানান, এসজেডিএ-তে তিনি যে পরিমাণ টাকা (দাবি অনুযায়ী প্রায় ১২২ কোটি টাকা) রেখে এসেছিলেন, তার সিংহ ভাগই উন্নয়নের নামে নয়ছয় হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। অশোকবাবুর যুক্তি, “ওই টাকা নয়ছয় হয়ে থাকলে তার দায় বোর্ড সদস্যদের কেউ এড়াতে পারেন না। বিশেষত, যাঁরা সরাসরি টাকা খরচের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে সন্দেহে পুলিশি জেরার মুখে পড়েছেন, তাঁদের ধরা না হলে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।”
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ওই মামলার এখনও পর্যন্ত কাদের জেরা করা হয়েছে? গ্রেফতারই বা হয়েছেন কত জন? এ বছর মার্চে এসজেডিএ-র তরফে দুর্নীতির অভিযোগে প্রথম এফআইআর হয়। নানা খাতে অন্তত ৬০ কোটি টাকা নয়ছয়ের আশঙ্কা করেন এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ। তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথম দফায় ঠিকাদার সংস্থার এক কর্মী-সহ দফতরের বাস্তুকার প্রবীণ কুমারকে গ্রেফতার করে। একে একে গ্রেফতার হন দফতরের দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র মৃগাঙ্কমৌলি সরকার এবং সপ্তর্ষি পাল, ঠিকাদার শঙ্কর পাল, ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরো নামে একটি ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে দেবব্রতবাবু। টিভি ক্যামেরা বসানোর সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদার সুব্রত দত্ত, নানা প্রকল্পের যুক্ত একাধিক ঠিকাদার সংস্থার প্রতিনিধি অজয় মৈত্র এবং তাপস বসুও গ্রেফতার হন।
ইতিমধ্যে রঞ্জনবাবু, চন্দনবাবু, রুদ্রনাথবাবুর পাশাপাশি জেরা করা হয় দার্জিলিঙের কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি শঙ্কর মালাকারকেও। ধৃতদের আইনজীবীদের একাংশ নানা সময়ে কোর্টে সরব হন এই দাবিতে যে, বাকিদের জেরার পর কেন ধরা হয়নি। কোর্টে বারেবারে ওঠে গোদালার নাম। এ নিয়ে পুলিশ প্রশ্নের মুখে পড়ে। পুলিশ সূত্রের খবর, বিষয়টি এমন পর্যায়ে যায়, শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কে জয়রামন তৎকালীন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে ‘অস্বস্তি’র কথা জানান।
সরকারি সূত্রের খবর, সে সময়ে ডিএম-সহ অন্য প্রভাবশালী নেতা-কর্তাদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়ার পক্ষে মত দেন প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের একাংশ। কিন্তু কংগ্রেসের একাংশ ও বামেরা শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গ জুড়ে আন্দোলনে নামে। মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দার্জিলিং সফরের আগে শিলিগুড়ির নানা এলাকায় কিরণকুমার-সহ যাঁদের জেরা করা হয়েছে, তাঁদের গ্রেফতারের দাবিতে প্রচুর হোর্ডিং, ব্যানার দেওয়া হয়। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী তথা তৃণমূলের নেতা মুকুল রায়ের নজরেও পড়ে। দলীয় সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটের আগে ওই ধরনের প্রচার হলে সরকারের ভাবমূর্তি বিপন্ন হতে পারে বলে তৃণমূলে কথা হয়। দলে বর্তমান এসজেডিএ চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তৃণমূলের খবর, যে হেতু গৌতমবাবু মামলার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি আদায় করেছিলেন, তাই তাঁর ‘প্রকৃত উদ্দেশ্য’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দলের একাংশ।
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই তদন্ত এগোচ্ছিল। ইতিমধ্যে গ্রেফতারের পরে ৯০ দিন কেটে যাওয়ায় অনেকেই জামিন পেয়েছেন। বাকিদেরও জামিনের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। ফলে, চার্জশিট দেওয়ার জন্য পুলিশের উপরে চাপ বাড়ছিল। তাই পুলিশের তরফে কয়েক জন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন, চার্জশিট দিতে গেলে মামলায় অন্য যাঁদের জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ মিলেছে, তাঁদের গ্রেফতার না করা হলে আদালতে প্রশ্ন উঠতে পারে।
এই অবস্থায় গোদালাকে গ্রেফতারের ঘটনায় মামলায় যাঁদের জেরা করা হয়েছে, তাঁদের অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সিপিএম-কংগ্রেস তো বটেই, তৃণমূলেরও অনেকে এ দিন পুলিশের কাছে জানতে চান, এর পরে কে?
কিন্তু যিনি মামলাটি এতটা এগিয়েছেন, সেই কে জয়রামনকেই তো সরানো হল। ফলে মামলা কোন দিকে এগোবে, সেটাই প্রশ্ন। পুলিশ কমিশনারের বদলির সমালোচনা করে বাম-কংগ্রেস জানিয়েছে, মামলায় যুক্ত সকলকে গ্রেফতারের দাবিতে তারা জোর আন্দোলন করবে। সিপিএমের দার্জিলিং জেলার কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “মামলায় যুক্তরা যেন কেউ ছাড় না পান, সেটা নিশ্চিত করতে আন্দোলন করব।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “মামলা পুলিশের হাতে। এটা প্রশাসনিক ব্যাপার। কিছু বলব না।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.