বেপরোয়া মনোভাবই ডেকে আনল গ্রেফতারি
মাত্র চার দিন আগে তিনিই মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছিলেন মালদহে। দু’দিন পর বিদায় জানাতেও এসেছিলেন এয়ারস্ট্রিপে। সেই মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার গ্রেফতার হলেন শনিবার বিকেল চারটেয়। এবং সঙ্গে সঙ্গে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অর্থ নয়ছয়ের তদন্তের দিকে নজর ঘুরে গেল গোটা দেশের। খোদ জেলাশাসককে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হতে হয়, এমন মামলা দুর্নীতির দীর্ঘ ইতিহাসেও আগে ঘটেনি।
গ্রেফতারের আগে দীর্ঘ জেরা পর্ব চলে গত দু’দিন ধরে। প্রথমে শুক্রবার সাত ঘণ্টা জেরা। তার পরে শনিবার দুপুর থেকে ফের জেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, এই জেরার সময় বারবার ধৈর্য হারাচ্ছিলেন গোদালা। পুলিশ অফিসারদের উপর বিরক্তি প্রকাশ করে তাঁদের প্রতি নানা আপত্তিকর উক্তি করছিলেন বলে অভিযোগ।
২৮ নভেম্বর। মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা রওনার আগে মালদহের পুরনো
বিমানবন্দরে তাঁর সঙ্গে জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার। — ফাইল চিত্র।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, মালদহের জেলাশাসক বারবার বলছিলেন: ‘ক্ষমতা থাকলে আমাকে গ্রেফতার করে নিন।’ তাঁর এই মেজাজ হারানোর ফলেই ক্রমশ বিরক্তি বাড়তে থাকে পুলিশ অফিসারদের। শেষ অবধি তাঁকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে আদালতে যাওয়ার সময়ে গোদালা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। গোদালার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, তাঁকে এ দিন ফাঁসানো হয়েছে।
গোদালার বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ অবশ্য এ দিনই নতুন উঠল না। নিজের পদমর্যাদা ব্যবহারের চেষ্টা করে তিনি আগাগোড়াই পুলিশের প্রতি উপেক্ষার ভাব দেখিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে কোনও সূত্রই পুলিশকে দিতে রাজি হননি। অথচ তদন্তকারী এক পুলিশ কর্তা জানান, “নথিপত্র থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যে ঘটনাগুলি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে, সেগুলি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা গোদালা কিরণকুমারেরই ছিল। তিনি কী করেছেন, তা কাগজপত্রেই স্পষ্ট।”
এই কেলেঙ্কারি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয় চলতি বছরের মার্চে। ওই সময় তদন্ত শুরু হয় ডেভেলপমেন্ট অথরিটির বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয় নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে। একাধিক লোককে গ্রেফতারও করা হয়।
গোদালাকে প্রথম জেরা করা হয় জুলাইয়ে। সেপ্টেম্বরে শিলিগুড়ি কমিশনারেটে ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। তখন জেরা করার সময়েই পুলিশ কমিশনার জয়রামন তাঁর মুখের উপর বলে দিয়েছিলেন, ‘আপনাকে গ্রেফতার করা ছাড়া উপায় নেই।’ কমিশনারেট সূত্রে জানা যাচ্ছে, সে দিন জুনিয়র অফিসারদের সঙ্গে গোদালার ব্যবহার দেখে ক্ষুব্ধ হয়েই ও কথা বলেছিলেন জয়রামন। সে যাত্রায় অন্য অফিসাররা নিরস্ত করেছিলেন কমিশনারকে। এমনকী, তৎকালীন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।
এ দিন দুপুরে জেরা শুরুর পর থেকে বারে বারেই বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন গোদালা, জানাচ্ছেন পুলিশ অফিসাররা। ‘এত কথা না বলে যা করার করুন, আমি কোনও অপরাধ করিনি,’ এমন দাবিও করতে থাকেন তিনি। জয়রামন যখন তাঁকে বলেন, ‘আপনাকে গ্রেফতার করা হল’, তখন গোদালা মোবাইল বার করে কারও সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। পুলিশ অবশ্য তাঁকে ফোন করতে দেয়নি। বরং মোবাইলটি তাঁর কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় গোদালার নিরাপত্তা রক্ষীরাও হকচকিয়ে যান।
শনিবারের গ্রেফতারের প্রেক্ষাপট কী?
পুলিশ সূত্রের দাবি, টাকা নয়ছয় সংক্রান্ত সব ক’টি নথিতেই কিরণকুমারের সই রয়েছে। তদন্ত শুরুর পরে পুলিশ কমিশনার হায়দরাবাদে একটি তদন্ত দল পাঠিয়ে জানতে পারেন, সেখানে গোদালা সম্প্রতি কিছু সম্পত্তি কিনেছেন। সে ব্যাপারে সেখানকার ভূমিসংস্কার দফতর থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করার নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনার। তা পাওয়ার পরে তৎকালীন ডিজিকে চিঠি লিখে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি চান জয়রামন। তবে তখন সেই অনুমতি মেলেনি।
এ বারও কিন্তু জয়রামন যে সরকারি ভাবে গোদালাকে গ্রেফতারের অনুমতি পাননি, তা এ দিন মুখ্যসচিবের কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে কীসের ভিত্তিতে গ্রেফতার হলেন গোদালা? জয়রামন তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বার্তা দিয়েছেন, গোদালার বেপরোয়া এবং উদ্ধত মনোভাবই এই পরিণতির জন্য দায়ী। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এ বিষয়ে বলেন, “আমি নথিপত্র দেখে মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানিয়েছিলাম। তদন্ত হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ করছে। এখানে আমার বলার কিছু নেই।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.