দুপুর বারোটা বাজতে তখনও মিনিট পনেরো দেরি। দুধ সাদা গাড়ি থেকে নামলেন মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার। নামী ব্র্যান্ডের কালো প্যান্ট আর হলুদ জামায় বেশ চনমনেই ছিলেন তিনি। দেখে বোঝার উপায় নেই, আগের দিনই শিলিগুড়ি থানায় টানা সাত ঘণ্টা খোদ পুলিশ কমিশনার-সহ পোড় খাওয়া গোয়েন্দাদের জেরার মুখে বসে থাকতে হয়েছে তাঁকে। শনিবারও শিলিগুড়ি থানার সামনে সাদা গাড়িটা দাঁড় করিয়ে, সোজা ঢুকে গেলেন গোয়েন্দা বিভাগের দফতরে। আরও একপ্রস্ত জেরার মুখোমুখি হতে।
জেলাশাসককে থানার ভেতরে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে বসানো হয়। কিছু পরেই ওই ঘরে ঢোকেন এসিপি সেলিমা লামা সহ তদন্তকারী অফিসাররা। এসিপির নির্দেশেই ঘরের দরজায় টেনে দেওয়া হয় ছাই রঙের ভারী পর্দা। সাড়ে তিন ঘণ্টা এভাবেই কাটে। |
পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে আসেন এসিপি। হঠাৎ-ই থানার পুলিশকর্মীদের মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়। পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন এবং এডিসিপি কে সাভারি রাজকুমার জেরার ঘরে ঢুকে যান। আধঘণ্টা পরে ফের শুরু হয় পুলিশি তৎপরতা। থানায় ডাকিয়ে আনা হয় বেশ কয়েকটি পুলিশের গাড়িও। পুলিশকর্মীদের মুখেই ছড়িয়ে পড়ে খবরটা। জেলাশাসক তথা এসজেডিএর প্রাক্তন সিইও গোদালা কিরণ কুমারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অবশেষে বেরিয়ে এলেন তিনি। এ বার কিন্তু সাদা গাড়িটা থানার সামনেই দাঁড়িয়ে থাকল। পুলিশের গাড়িতে ওঠানো হল জেলাশাসককে। তখন চনমনে ভাবটা উধাও। নিখুঁত গোঁজা জামা তখন উঠে গিয়ে বেখাপ্পা ভাবে। চোখমুখে উদ্বেগ। চারদিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে টিভি চ্যানেল। ঘন ঘন উড়ে আসছে প্রশ্ন, ‘আপনি কী ষড়য়ন্ত্রের শিকার?’ ‘আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে?’ ‘আপনাকে গ্রেফতার করা হল কেন?’ ঘুরেও তাকালেন না গোদালা।
কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক জানান, এ দিন জেরার শুরুর থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে জেলাশাসক বারবারই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ছিলেন। একসময়ে এসিপির প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে টেবিলের উপরে ঝুঁকে পড়তেও দেখা তাঁকে। আদালত চত্বরে ঢোকার সময়েও জেলাশাসকের চোখেমুখে অস্বস্তির ছাপ ছিল স্পষ্ট। রাজনৈতিক নেতা কর্মী সাধারণ মানুষ সকলেই ‘হাই-প্রোফাইল’ অভিযুক্তকে দেখতে ভিড় করেছেন। বেশ কয়েকজন মোবাইল ক্যামেরা বের করে ছবিও তুলতে শুরু করেন তাঁর। যদিও, এজলাসে ঢোকার পর নিজেকে কিছুটা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। বেশ কয়েকবার নিজের আইনজীবীকে ডেকে কথাও বলতে দেখা যায় তাঁকে। তবে পুলিশের তরফে তাকে দশ দিনের হেফাজতে চাওয়া হয়েছে শুনে অবশ্য প্রকাশ্যেই ভেঙে পড়েন তিনি। দাঁত দিয়ে নখ কাটতে থাকেন ২০০৫ সালের বেঙ্গল ক্যাডারের এই আইএএস।
আদালত চত্বর থেকে বের করে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতের হাজতে নিয়ে যাওয়া হয় গোদালা কিরণ কুমারকে। এরপরে ফের পুলিশের গাড়িতে চাপিয়ে মাটিগাড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমেছে। পুলিশের গাড়ি থেকে থানায় ঢোকার পথে তাঁকে ঘিরে আবার ভিড়। সাংবাদিকদের ক্যামেরার ফ্ল্যাশ থেকে চোখ বাঁচাতে এ বার হাতের আড়াল দিয়ে মুখ ঢাকলেন জেলাশাসক। |