ওডাফাকে আটকানোই আজ সুব্রতর চ্যালেঞ্জ
নিজেকে প্রমাণ করার ম্যাচে জ্বলে উঠবেন কে? ওডাফা না সুব্রত পাল? সপ্তাহ শেষের সান্ধ্য আড্ডায় ময়দানে এই প্রশ্নই যে মুখে মুখে ঘুরল।
রবিবার যুবভারতীতে করিমের দলের প্রতিপক্ষ মেঘালয়ের রাঙ্গদাজিদ। আই লিগ টেবলে দশ নম্বরের সঙ্গে লড়াই তেরো নম্বরের। লড়াই সন্তোষ কাশ্যপ বনাম করিম বেঞ্চারিফার স্ট্র্যাটেজি-ট্যাকটিক্সের। কিন্তু সব লড়াই ছাপিয়ে যাচ্ছে সেই ওডাফা-সুব্রত দ্বৈরথ। দেশের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড বনাম বিদেশে খেলার সুযোগ পাওয়া প্রথম ভারতীয় গোলকিপারের।
সম্মুখ সমরে নামার আগে দু’জনের মধ্যে মিল একটাই। চোয়াল শক্ত করে দু’জনেই নিজের দলকে জেতাতে মরিয়া। শনিবার সকালে অনুশীলনের শেষে প্রথম জন বাগান অধিনায়ক ওডাফা ওকোলি তাঁবু ছাড়লেন থমথমে মুখে। বলে গেলেন, “আজ কোনও কথা নয়। কাল ম্যাচের পরে কথা হবে।” আর দ্বিতীয় জন, বঙ্গসন্তান সুব্রত তখন যুবভারতীতে অনুশীলন সেরে হোটেলে ফেরার পথে বলে গেলেন, “মনঃসংযোগ করতে দিন। তিন পয়েন্ট চাই।”
প্রি-সিজন অনুশীলনে দেদার ফাঁকি মেরে বাগান অধিনায়ক এখন দূরবিন দিয়ে খুঁজছেন তাঁর হারানো ফিটনেসকে। ডার্বিতে বলে বলে গোল করার সেই ‘ব্র্যান্ড ওডাফা’-য় তাই থাবা বসিয়েছে ফেরোসোফেরিক অক্সাইড। অর্থাৎ মরচে। ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডানের বিরুদ্ধে গোল পাননি। তার চেয়েও অবাক করা তথ্য, গত পঁয়ত্রিশ দিনে আই লিগে কোনও জয় নেই মোহনবাগানে। শেষ জয় সেই ২৬ অক্টোবর মুম্বই এফসি-র বিরুদ্ধে। সন্তোষ কাশ্যপের দলের বিরুদ্ধে গোল করে দলকে লিগ চ্যাম্পিয়নদের ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে তাই এ দিন অনুশীলনে তিন ছেলেকে নিয়েই হাজির বাগানের ‘কিং কোবরা’। অনুশীলন দেখতে আসা সমর্থকদের ফিসফাস, ছেলেপুলে নিয়ে ম্যাচের আগের দিন ওডাফা অনুশীলনে এলে দল কখনও হারে না। ওডাফা যদিও এ সব তুকতাক নিয়ে মুখ খুলছেন না।

যেন কোনও চাপই নেই। বাগান প্র্যাকটিসে
ছেলেকে নিয়ে ওডাফা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
তাঁর হয়ে বরং জবাবটা দিলেন যুযুধান প্রতিপক্ষ সুব্রতই। রবিবার দুপুরের যুবভারতীতে যিনি ওডাফার গোলে ফেরার সরণিতে জিব্রাল্টারের পাহাড়। সুব্রত পাল বলছেন, “সামনে ওডাফা মানেই চ্যালেঞ্জ। কে বলে ও ফর্মে নেই? আধা ফিট ওডাফাও গোলের সামনে ভয়ঙ্কর। দেখা যাবে আমাদের বিরুদ্ধেই হয়তো গোলের খাতা খুলে ফেলল! খুব সতর্ক থাকতে হবে।”
ভারতীয় ফুটবলের ‘স্পাইডারম্যান’ নিজেকে বিনয়ের চাদরে মুড়ে রাখলেও সুব্রতর ব্যক্তিগত কোচ (পারিবারিক জীবনে শ্বশুর) প্রাক্তন জাতীয় গোলকিপার দেবাশিস মুখোপাধ্যায় যদিও বললেন, “ডেনমার্কে প্রায় সপ্তাহ তিনেক ট্রায়াল দিয়ে এল। এখানকার চেয়ে ডেনিশ লিগের মান অনেক উপরে। এটাই সুব্রতর ভাল খেলার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। বিপক্ষে ওডাফা না মোগা কে আছে সেটা নিয়ে ও চিন্তা করতে যাবে কেন?”
আর ওডাফার কোচ করিম বেঞ্চারিফা? তেরো দলের লিগে দশ ম্যাচে মোটে পাঁচ পয়েন্ট (পাঁচটাই ড্র) রাঙ্গদাজিদের। লিগ টেবলের একদম শেষ স্থানে থাকা দলের বিরুদ্ধে নামার আগে করিম বলছেন, “সুব্রত-গৌরমাঙ্গি-মননদীপরা আসায় শক্তি বেড়েছে রাঙ্গদাজিদের। তবে আমাদের জিততেই হবে। পরপর তিনটে ম্যাচ জিততে পারলেই লিগ টেবলে দশ নম্বর থেকে আমরা প্রথম পাঁচে ঢুকে পড়ব।”
ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডানের বিরুদ্ধে ৪-২-৩-১ ছকে নেমে জয় আসেনি বাগানে। সন্তোষ কাশ্যপের দলের বিরুদ্ধেও কি সেই একই স্ট্র্যাটেজি? করিম মুখে যদিও বলছেন, “চার ব্যাকের আগে রক্ষণের একটা দেওয়াল তো রাখতেই হবে।” কিন্তু অনুশীলন দেখে বোঝা গেল রাঙ্গদাজিদের বিরুদ্ধে বাগানের রণকৌশল অন্য। ৪-৩-৩। গোলে সন্দীপ। ব্যাক ফোরপ্রীতম, আইবর, ইচে, সৌভিক। সেন্ট্রাল মিডিও কিংশুক। তাঁর ডান দিকে মণীশ, বাঁ দিকে ডেনসন। আক্রমণে ডান দিকে কাতসুমি। বাঁ দিকে এরিক। স্ট্রাইকার ওডাফা। অর্থাৎ আক্রমণাত্মক গেমপ্ল্যানই নিচ্ছেন এগারো পয়েন্ট সংগ্রহ করা মরক্কান কোচ।
বিপক্ষ সন্তোষ কাশ্যপ যদিও বলছেন, “মোহনবাগানের খেলার ধরন জানি। ফরোয়ার্ডরা ওদের ডিফেন্সের ফাঁকফোকড় বার করতে পারলে তিন পয়েন্ট অসম্ভব নয়।” রাঙ্গদাজিদের তোম্বা সিংহ, ল্যামিন তাম্বা, কোরিয়ান কিম সং ইয়ংরা তাই কোচের নির্দেশে ব্যস্ত আইবরদের ভুল কাজে লাগিয়ে প্রথম জয় আনতে।
শেষে আরও একটা তথ্য। আই লিগে গত ৬ নভেম্বর বিপক্ষের জালে শেষ বার বল ঢুকিয়েছে সবুজ-মেরুন। তার পর গোল এখন বাজারের ‘চন্দ্রমুখী’ আলুর মতোই মহার্ঘ করিমের দলে। অধিনায়ক ওডাফা ওকোলি কি সুব্রত-র সঙ্গে ডুয়েলে সেই গোল এবং জয় ভগীরথের মতো গঙ্গাপারের তাঁবুতে ফিরিয়ে আনতে পারবেন?
সুব্রত পালকে টপকালেই কিন্তু ওডাফার দলের সেই লক্ষ্য পূরণ হয়ে যাবে।

দু’কোটি ফেরতের দাবি বাগানের
গত আই লিগে ডার্বি ম্যাচে বিরতিতে দল তুলে নেওয়ার জন্য দু’কোটি টাকা জরিমানা হয়েছিল মোহনবাগানের। ক্লাবের আর্থিক হাল ফেরাতে ফেডারেশনের কাছে চিঠি দিয়ে সেই টাকা ফেরতের দাবি জানাল তাঁরা। যুক্তি হিসাবে বাগান কর্তারা সামনে আনলেন প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। যিনি বাগানের ঝামেলায় ফেডারেশন নিযুক্ত এক সদস্যের কমিটিতে ছিলেন এবং সম্প্রতি যাঁর বিরুদ্ধে এক ইনটার্নকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। বাগান সচিব অঞ্জন মিত্র বললেন, “আমাদের যে শাস্তি হয়েছিল তাতে অশোকবাবুর রিপোর্ট ছিল ফেডারেশনের অন্যতম হাতিয়ার। ওঁর নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। আমরা চাই অশোকবাবুর সেই রিপোর্ট পুনর্বিবেচনা করা হোক। এবং আমাদের জরিমানার দু’কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হোক। যাতে আমরা ফুটবলারদের বকেয়া মেটাতে পারি।” অঞ্জনের চিঠি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ফেডারেশন কর্তারা। তবে শোনা যাচ্ছে, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, অরিন্দম ভট্টাচার্যদের বকেয়া মেটানোর জন্য ফেডারেশন ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এই চিঠি ঘুরিয়ে তারই পাল্টা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.