তাঁকে মাঠ থেকে তুলে নেওয়ায় কোচকে কটাক্ষ করে টোলগের হাততালি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
ঘটনার সূত্রপাত বিরতির নয় মিনিট পর। টোলগে এর এক মিনিট আগেই তিন নম্বর সহজ সুযোগটি নষ্ট করেছিলেন। ডেম্পো কিপারকে একা পেয়েও। কোচ আজিজ তাঁকে তুলে নিয়ে নামান অসীম বিশ্বাসকে। রাগে হাততালি দিয়ে কটাক্ষ করার পাশাপাশি কোচকে ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু বলতে বলতে ড্রেসিংরুমে চলে যান টোলগে। পরে অন্য ফুটবলারদের থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অশ্রাব্য ভাষায় কোচকে নাকি গালাগালি করেছেন টোলগে। পরে তাঁকে ড্রেসিংরুম থেকে ডেকে এনে রিজার্ভ বেঞ্চে বসানো হয়। তখন অবশ্য তাঁর গায়ে জার্সি নেই। হাফ প্যান্ট-টি শার্ট আর চটি পরে এসে বসেন তিনি। যা ফিফার আইনে নিয়মবিরুদ্ধ।
এই ঘটনায় টোলগের ওপর রীতিমতো চটেছেন ক্লাব-কর্তারা। এ ধরনের আচরণের জন্য তাঁকে শো-কজ করা হচ্ছে। মহমেডান ফুটবল সচিব বললেন, “টোলগে যা করেছে সেটা অত্যন্ত অন্যায়। তাই ওকে শো-কজ করছি।” টোলগে অবশ্য এ সম্পর্কে কোনও কথা বলতে চাননি। রাগে গজগজ করতে করতে বান্ধবী শেরাপের হাত ধরে বাড়ি চলে যান তিনি।
গোলের সুযোগগুলো নষ্ট না করলে এ দিন ডেম্পোকে হারাতেই পারত মহমেডান। দশ মিনিটের চোট পেয়ে বসে যান ডেম্পোর একমাত্র বিদেশি ফুটবলার বেটো। তার পর পুরো ম্যাচটাই বিদেশি ছাড়াই খেলেন ক্লিফোর্ড মিরান্ডারা। ডেম্পোর এই দলে হোলিচরণ, নারায়ণ দাসদের মতো অনূর্ধ্ব-২১-এর পাঁচ জন ফুটবলার ছিলেন। তবু ঘরের মাঠে মহমেডানের সংগ্রহ মাত্র এক পয়েন্ট। হতাশ আজিজ ম্যাচের পর বললেন, “অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম আমরা। গোল হয়নি। ফুটবলে এ রকম হতেই পারে।”
কোচ পদত্যাগের ইচ্ছা থেকে বিরত হয়েছেন শেষ পর্যন্ত। কোচকে কর্তারা ‘হলুদ কার্ড’ দেখানোর কথাও বলেছিলেন ম্যাচের পর। ফিনল্যান্ড থেকে আসা আজিজ অবশ্য গাড়িতে ওঠার আগে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন ক্লাবকর্তাদের বিরুদ্ধেই। “আমি তো নিজের মতো করে দলই সাজাতে পারছি না। কর্তাদের কথা মতো টিম গড়তে হচ্ছে। আর আমি নিজেও মাঠে নেমে খেলছি না। ফুটবলাররা মিস করলে আমার দোষ কোথায়?” টিম সূত্রের খবর, ডেম্পোর বিরুদ্ধে টোলগে, নির্মলদের প্রথম একাদশে রাখতেই চাননি আজিজ। কর্তাদের চাপেই ওদের মাঠে নামাতে বাধ্য হন সাদা-কালো কোচ। টোলগের পরিবর্তে অসীমকে আরও আগে নামাতে চেয়েছিলেন তিনি। তাতে নাকি বাধা দেন কিছু কর্তা।
চার বছর পর আবার আই লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছে মহমেডান। ভাল দলও গড়েছে তারা। কিন্তু টুর্নামেন্ট অর্ধেক গড়ানোর আগেই সেখানে তীব্র গণ্ডগোল। বালাই নেই শৃঙ্খলারও। পরিস্থিতি যা তাতে ইস্টবেঙ্গলের পর মহমেডানেও কোচ বদলের হাওয়া। টোলগেকেও ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছেন কর্তারা। মহমেডান যে আছে মহমেডানেই।
মহমেডান: লুই ব্যারেটো, নির্মল, মেহরাজ, লুসিয়ানো, অ্যান্টনি, রাকেশ (মণীশ), ইসফাক (অজয়), কলিন, পেন, জোসিমার, টোলগে (অসীম)
|
সুব্রত ভট্টাচার্য
টোলগেকে আর একটু সময় হয়তো মাঠে রাখতে পারতেন মহমেডান কোচ আজিজ। তবে এ দিন দেখলাম খুব বাজে দু’টো গোল মিস করেছে। কোচ হয়তো নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনার ভিত্তিতে ওকে তুলেছেন। তবে এর পর টোলগে যদি এসে কোচকে প্রশ্ন করে সেটা অন্যায়। এটা ও করতে পারে না। এতে টিমের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। |
মইদুল ইসলাম
টোলগের আগের সেই ফর্ম নেই। সহজ সুযোগ নষ্ট করেছে। শনিবার যে সব গোল নষ্ট করেছে চোখে দেখা যায় না। তা সত্ত্বেও বলছি কোচ হয়তো আর একটু সময় রাখতে পারতেন ওকে। তবে কাকে তুলবেন, কাকে রাখবেন সেটা কোচের ব্যাপার। মাঠ থেকে বেরিয়ে আসার সময় দেখলাম কোচকে লক্ষ্য করে টোলগে কিছু বলছে। যদি ও তুলে নেওয়ার জন্য ঝামেলা পাকায় সেটা অপরাধ। ওর বিরুদ্ধে ক্লাবের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। |
|