|
|
|
|
পরকীয়ার জেরে ফরমান পঞ্চায়েতের,
ধানবাদে বিয়ে বিবাহিত যুবক-যুবতীর
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি
৩০ নভেম্বর |
হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েতের ‘ছায়া’ এ বার ঝাড়খণ্ডে!
স্থানীয় সূত্রের খবর, অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে বিবাহিত এক যুবকের সঙ্গে বিবাহিত এক যুবতীর বিয়ের ‘ফরমান’ দিয়েছে ধানবাদের গোবিন্দপুর ব্লকের জামডিহা পঞ্চায়েত। অভিযোগ, দ্বিতীয় বিয়েতে তাঁর আপত্তি নেই বলে যুবকের প্রথম স্ত্রী’র কাছ থেকে জোর করে মুচলেকাও লিখিয়ে নেওয়া হয়।
ঘটনায় বিব্রত ধানবাদ প্রশাসন। জেলার পুলিশ সুপার অনুপ ম্যাথু বলেছেন, “এ ভাবে কারও বিয়ে দেওয়া আইনবিরুদ্ধ। পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি দেখা হবে।”
অতীতে বারবারই ভিন্ গোত্রের বিয়ের ‘বিচার’, সম্মান-হত্যার দায়ে সংবাদ শিরোনামে এসেছে হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েত। উত্তাল হয়েছে গোটা দেশ। এ বার সেই তালিকায় ঢুকল ধানবাদের জামডিহা পঞ্চায়েত।
জামডিহা পঞ্চায়েতের অধীনে রয়েছে কেঁদুয়াডিহি গ্রাম। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, মনোজ রওয়ানি নামে এক যুবকের সঙ্গে ওই গ্রামের মেয়ে মালতীর কয়েক বছর ধরে সম্পর্ক ছিল। দু’জনেই বিবাহিত। মালতীর শ্বশুরবাড়ি ঝরিয়াতে। মনোজের তিন সন্তান। সন্তান রয়েছে মালতীরও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার স্বামীর সঙ্গে কেঁদুয়াডিহিতে বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন মালতী। সন্ধ্যায় গ্রামের একটি নির্জন জায়গায় মনোজের সঙ্গে মালতীকে দেখেন গ্রামের কয়েকজন। দু’জনকে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়। দু’জনকে গ্রামের রাস্তায় সারারাত বেঁধে রাখেন এলাকাবাসী। খবর দেওয়া হয় জামডিহা পঞ্চায়েতের প্রধান, অন্য সদস্যদের।
বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চায়েতের প্রধান ফতে আলি আনসারি, সদস্য ভগবতপ্রসাদ জায়সবালের নেতৃত্বে বিচারসভা বসে। সেখানে মনোজকে কান ধরে উঠতে-বসতে বলা হয়। দু’জনের মুখে চুন-কালি দিয়ে, চুল কেটে গ্রামে ঘোরানো হয়। এরপর শুরু হয় ‘সওয়াল-জবাব’। পঞ্চায়েতের চাপ, গ্রামবাসীদের মারধরের ভয়ে সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন মালতী, মনোজ। ‘বিচারের’ পর পঞ্চায়েত তাঁদের দু’জনকে বিয়ে দেওয়া ‘রায়’ ঘোষণা করে। মালতীর স্বামীকেও সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। ওই রাতেই বিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের।
আইন উপেক্ষা করে কী ভাবে ওই সিদ্ধান্ত নিল পঞ্চায়েত?
পঞ্চায়েত প্রধান ফতে আলি আনসারির যুক্তি, “সব জেনে মালতীর স্বামী তাঁকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করে। মালতীও চেয়েছিল মনোজকে বিয়ে করতে। মনোজের আপত্তি ছিল না। তাঁর স্ত্রীও লিখিত সম্মতি দিয়েছে। গ্রামের মানুষও চাপ দিচ্ছিল। এ সিদ্ধান্ত না-নিয়ে উপায় ছিল না।”
পঞ্চায়েতের বক্তব্য মানতে নারাজ রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মহুয়া মাজি। তিনি বলেন, “এ ঘটনা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। কমিশন বিষয়টি দেখবে।”
রাঁচি হাইকোর্টের আইনজীবী সিদ্ধার্থজ্যোতি রায় বলেন, “এই পদক্ষেপ ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং বিবাহ আইনের বিরোধী। এ ভাবে বিয়ে দেওয়া কোনও অধিকার পঞ্চায়েতের নেই।” তাঁর বক্তব্য, ওই যুবকের প্রথম স্ত্রী এখন হয়তো সব মেনে নিয়েছেন। পরে তিনি আপত্তি তুললে, দ্বিতীয় স্ত্রী কী করবেন? দ্বিতীয় স্ত্রী’র সন্তান হলেও, সে আইনত বঞ্চিত হবে। |
|
|
|
|
|