|
|
|
|
ভোলবদলে রেকর্ড গড়ল নভেম্বরের শেষ
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এক বছরেই বদলে গেল ছবিটা!
২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর ছিল এক দশকের মধ্যে শীতলতম। আর এ বছরের ৩০ নভেম্বরকে আবহবিদেরা বলছেন, এক দশকের উষ্ণতম।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র উত্তুরে হাওয়ার হাত ধরে মেঘমুক্ত আকাশে দক্ষিণবঙ্গে শীত ঢুকে পড়েছিল নভেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহেই। এ বারের পরিস্থিতি পুরোপুরি আলাদা। আকাশ মেঘলা। আর তার জেরে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে শনিবার। যা এ সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রার থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি।
এক বছরের মধ্যে তাপমাত্রার এমন আকাশ-পাতাল ফারাক কেন?
আবহবিদেরা বলছেন, গত বছরের আবহাওয়াটা ছিল স্বাভাবিক। এ বারেরটা অস্বাভাবিক। এর জন্য দায়ী বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া পর পর দু’টি ঘূর্ণিঝড়, হেলেন ও লহর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দু’টি ঘূর্ণিঝড় অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়লেও তার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের আকাশে মেঘ ঢুকেছে। আর এর ফলেই বাধা পেয়েছে শীত।
আবহবিজ্ঞানীরা জানান, নভেম্বরের গোড়া থেকেই ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়া (পশ্চিমী ঝঞ্ঝা) আছড়ে পড়ে কাশ্মীরে। পরে তা বয়ে আসে উত্তর ভারতের দিকে। ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ে সেখানে এবং সেই ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়ার হাত ধরেই শীত হাজির হয় দক্ষিণবঙ্গে। |
|
এ বছরও সব কিছু এগোচ্ছিল নিয়ম মেনেই। নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে তীব্র উত্তুরে হাওয়ার দাপটে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল স্বাভাবিকের থেকে নীচে। দক্ষিণবঙ্গের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ১৪-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নেমে গিয়েছিল। মাঝ নভেম্বরেই সোয়েটার-মাফলার চাপিয়ে রাস্তায় বেরোচ্ছিলেন রাজ্যবাসী। কিন্তু তার পরেই পর পর অন্ধ্র উপকূলে ধেয়ে এল দু’টি ঘূর্ণিঝড়। বদলে গেল শীত-ছবিটা। এখন মাঝ রাতেও গায়ে ভারী কিছু চাপানোর তেমন প্রয়োজন পড়ছে না।
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ২০১০ সালেও নভেম্বরের শেষে তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। সে বছর পশ্চিমী ঝঞ্ঝা উত্তর ভারতের বদলে সরাসরি দক্ষিণবঙ্গে চলে এসেছিল। তার ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে মেঘ ঢুকে পড়েছিল দক্ষিণবঙ্গে। ওই বছর ৩০ নভেম্বর কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মৌসম ভবন সূত্রের খবর, কাশ্মীরে জোরালো পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আর না আসায় গত কয়েক দিনে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতেও শীতের তীব্রতা কমেছে। উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানার বহু এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু এই সময় ওই সব এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম থাকাটাই দস্তুর। আবহবিদদের একাংশ বলছেন, এই কারণেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কাটতে শুরু করলেও উত্তর ভারত থেকে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া এখনই মিলবে না।
এমন অবস্থায় আম-বাঙালির প্রশ্ন, কবে জাঁকিয়ে শীত পড়বে দক্ষিণবঙ্গে?
আবহবিদেরা জানান, শীত হাজির হয় ধাপে ধাপে। অর্থাৎ কয়েক দিন জাঁকিয়ে ঠান্ডা এবং তার পরের কয়েক দিন একটু গরম। এ ভাবেই দক্ষিণবঙ্গে পাকাপাকি ভাবে থিতু হয় শীত। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, “রবিবার থেকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা কমবে। তবে পাকাপাকি ভাবে শীত পড়তে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।” আবহবিজ্ঞানীরা জানান, রবিবার থেকে দিন কয়েক তাপমাত্রা নামবে। আগামী সপ্তাহের শেষে ফের একটু গরম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই গরমের পর্যায়টা কেটে গেলেই দক্ষিণবঙ্গে পাকাপাকি ভাবে শীত পড়তে পারে বলে আবহবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। সেটা কবে?
নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আবহবিদেরাও। |
|
|
|
|
|