আগাম জামিনের আর্জি খারিজ, হেফাজতে তরুণ
৩০ নভেম্বর
বিকেল থেকে চার ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। বিচারক তখনও তাঁর চেম্বারেই রয়েছেন।
সকাল থেকে ভিড়ে ঠাসাঠাসি ছিল যে আদালতকক্ষ, সেখানে বসে কেউ হাই তুলছেন। কেউ পা ছড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। টিভি চ্যানেলের রিপোর্টাররাও ক্যামেরার সামনে ‘যে কোনও মুহূর্তে রায় ঘোষণা হবে’ বলতে বলতে হাঁফিয়ে গিয়েছেন। আর, তরুণ তেজপাল নিজে ডোনা পাওলার ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসে বসে।
অবশেষে রাত আটটা নাগাদ ফের এজলাসে এলেন মুখ্য জেলা এবং দায়রা বিচারক অনুজা প্রভুদেশাই। জানালেন, তেজপালের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করা হল। এই জাতীয় মামলায় সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ের কথা উল্লেখ করে বিচারক বলেন, “তেজপাল আগাম জামিন পেতে পারেন কি না, এই প্রশ্নে আমার একটাই উত্তর, না।” নিগৃহীতার বয়ান, ই-মেল ইত্যাদি থেকে প্রাথমিক ভাবে তেজপাল যে মেয়েটির শরীরের উপর জোর খাটিয়েছেন, তেমন ইঙ্গিত মিলেছে বলে মন্তব্য করেন বিচারক। ঘটনার ১১ দিন পরে কেন অভিযোগ করা হল, তেজপালের আইনজীবীর এই প্রশ্ন অভিযোগের গুরুত্ব খাটো করে দেয় না বলেই জানান তিনি। বিচারক বলেন, ঘটনার দিনই যে সহকর্মীদের কাউকে কাউকে মেয়েটি সব জানিয়েছিলেন, তার সাক্ষ্যও রয়েছে। রায়ে তিনি লিখেছেন, তেজপাল মেয়েটির গুরুবৎ, পিতৃপ্রতিম হওয়া সত্ত্বেও মেয়েটির সম্ভ্রম নষ্ট করেছেন, নিজের পদের অপব্যবহার করেছেন, বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন।

গোয়ার অপরাধ দমন শাখায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তরুণ তেজপালকে। ছবি: পিটিআই
জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পরিণতি যা হওয়ার, তা-ই হল। ঘড়িতে রাত ন’টা কুড়ি ডোনা পাওলাতেই তেজপালকে গ্রেফতার করল গোয়া পুলিশ। ফাঁড়ির সামনে তখন হাজারো মানুষের ভিড়। একটু দূরেই চলছে ফিল্মোৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠান। কিন্তু সাধারণ জনতা তেজপালকে দেখার আগ্রহেই রাস্তায় নেমেছে। কোলে বাচ্চা নিয়ে, মাথায় মালা জড়িয়ে তেজপাল-নাট্যের দর্শকরা রাত দশটার ডোনা পাওলা সরগরম করে রেখেছেন।
রাতেই তেজপালকে গোয়া মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। আগামী কাল তাঁকে বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে পেশ করা হবে। সোমবার তাঁকে সকাল দশটার মধ্যে দায়রা আদালতে তুলে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করবে পুলিশ। তবে ডোনা পাওলার অফিসে যে হেতু লকআপ নেই, ফলে তেজপালকে আজ রাতে এখানে রাখা যাবে না। আগাসসাইম, মাপুসা অথবা পানজিম থানার লকআপে নিয়ে যেতে হবে তাঁকে। শোনা যাচ্ছে, আগাসসাইমের লকআপটি ক’দিন আগে মেরামতি হয়েছে। সুতরাং ওখানেই তেজপালের ঠাঁই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একটি সূত্রের দাবি, তাঁকে পুলিশের সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
আদালতের রায় যে তেজপালের পক্ষে না-ও যেতে পারে, তার একটা ইঙ্গিত এ দিন দুপুরেই মিলেছিল। দু’ঘণ্টা ধরে তেজপালের আইনজীবী এবং সরকারি আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পরে বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত রায়দান স্থগিত ঘোষণা করেছিলেন বিচারক। কিন্তু এজলাস ছাড়ার আগে বলে যান, ‘তেমন বিশেষ বিশেষ মামলা ছাড়া’ আগাম জামিন মঞ্জুর করা হয় না। বোন এবং স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আদালত কক্ষে বসে তেজপাল নিজেও শোনেন কথাটা। তার পরই আদালত থেকে বেরিয়ে হোটেলে ফিরে যান তাঁরা। বেরনোর সময় একটি লোক তাঁকে লক্ষ করে স্লোগান দিতে দিতে একটি কালো কাপড় ছুড়ে মারে। পুলিশ লোকটিকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
বিকেল সাড়ে চারটের পর তেজপাল আর আদালতে না এসে সোজা ক্রাইম ব্রাঞ্চে চলে যান। তখন থেকেই ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে থাকা শুরু। এই বুঝি রায় ঘোষণা হয়! এই বুঝি রায় ঘোষণা হয়! এই ভাবেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধে গড়িয়ে রাত। বিচারক চেম্বার থেকে বেরোলেন আটটায়। আগাম জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে বললেন, তেজপাল চাইলে পুলিশি হেফাজতে জেরা চলাকালীন দিনে এক বার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। বাড়ির খাবারও খেতে পারবেন।
আজ সকালে অবশ্য কালকের কথারই পুনরাবৃত্তি করে তেজপালের আইনজীবী গীতা লুথরা সওয়াল করছিলেন, তেজপাল যে হেতু পুলিশের তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত, তাঁকে গ্রেফতার করার প্রয়োজন কী? সহযোগিতার বার্তা দিতেই তেজপাল এ দিন সকাল ন’টার মধ্যে ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসে চলে গিয়েছিলেন। সে সময় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা তাঁকে ঘিরে ধরলে তিনি নিজেও সহযোগিতার কথাই বলেন। পুলিশ জানায়, তেজপালকে তখন কোনও রকম জেরা করা হয়নি। সেখানে মিনিট দশেক সময় কাটিয়ে হোটেল ঘুরে আদালতে আসেন তেজপাল। এজলাসে তখন তেজপালের আইনজীবী দাবি করছেন, তদন্ত চলাকালীন তেজপাল গোয়াতেই থাকবেন। মুম্বই (যেখানে মেয়েটি এখন থাকছেন) গিয়ে অভিযোগকারিণীর সঙ্গে দেখা করার কোনও চেষ্টা করবেন না। গীতা বলেন, “আমার মক্কেল সাক্ষীদের প্রভাবিত করবেন বা সাক্ষ্যপ্রমাণ বদলে দেওয়ার চেষ্টা করবেন, এমন ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।”
উল্টো দিকে সরকার পক্ষের আইনজীবী সরেশ লোতলিকার বলেন, অতীতে তদন্তে প্রভাব খাটানোর নজির রয়েছে তেজপালের নামে। এই মামলাতেও তিনি এ পর্যন্ত শুধু নিজের শর্তে সহযোগিতা করেছেন। একে সহযোগিতা করা বলে না। এটা একটা ধর্ষণের মামলা। যথাযথ ভাবে জেরা করার জন্য অভিযুক্তকে ১৪ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। পুলিশ হেফাজতে জেরার সঙ্গে অন্যত্র জেরার অনেক ফারাক আছে। আইনজীবীর বক্তব্য, তেজপাল বারবার বিবৃতি বদল করে গিরগিটির মতো রং পরিবর্তন করছেন। বিশেষ করে হোটেলের লিফটে সিসিটিভি ছিল না জানার পরই তিনি তাঁর বক্তব্য পাল্টেছেন। অথচ তার পাশে অভিযোগকারিণী কিন্তু নিজের বক্তব্য থেকে এক চুলও নড়েননি।
সরকারি আইনজীবী তাঁর সওয়ালে বলেন, “একে প্রহসনই বলতে হবে যে, যে থিঙ্ক ফেস্টের আসরে ধর্ষিতার লড়াইকে কুর্নিশ করা হল, সেই ফেস্টিভালেই উদ্যোক্তা নিজে তাঁর অধস্তন কর্মীকে ধর্ষণ করলেন!” আইনজীবী যে ধর্ষিতার লড়াইয়ের কথা বলছিলেন, তিনি পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার নিগৃহীতা। থিঙ্ক ফেস্টে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তেজপালই, ওখানে যাওয়ার পরে তাঁর সাক্ষাৎকার নেন তহেলকার সদ্য ইস্তফা দেওয়া কার্যনির্বাহী সম্পাদক সোমা চৌধুরী।
এ দিন পার্ক স্ট্রিটের ওই নিগৃহীতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরকারি আইনজীবীর বলা কথাটাই প্রায় হুবহু পুনরাবৃত্তি করেন। বলেন, “এর চেয়ে লজ্জাজনক কিছু হতে পারে না। অভিযুক্ত যত ক্ষমতাবানই হোন না কেন, মেয়েটিকে সুবিচার দিতেই হবে।”

সারা দিনে
সকাল ৯টা ১০: তদন্তে সব রকম সহায়তা করবেন, গোয়া পুলিশের অপরাধ দমন শাখার দফতরে এসে
বললেন তেজপাল।
৯টা ৪৫: হোটেলে ফিরে গেলেন তেজপাল।
১০টা: মুখ্য জেলা এবং দায়রা আদালতে এল পুলিশের দল।
১০টা ১৫: তেজপালকে ১৪ দিন হেফাজতে চাইল পুলিশ।
১০টা ২৫: আদালতে এলেন তেজপাল।
১০টা ৫০: জামিনের আর্জি তেজপালের আইনজীবীর। মুম্বই (অভিযোগকারিণী যেখানে থাকেন) না যাওয়ার আশ্বাস। প্রস্তাব পাসপোর্ট জমা রাখারও।
১১টা ৪৫: আদালতে হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজ জমা দিল পুলিশ।
দুপুর ১২টা ৩০: বিকেল সাড়ে চারটেয় রায়, জানালেন বিচারক।
১২টা ৩৫: তেজপাল আদালত ছেড়ে যাওয়ার সময় তাঁর দিকে কালো কাপড় ছুড়লেন এক বিক্ষোভকারী।
বিকেল ৪টে ৩৫: আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে ফের অপরাধ দমন শাখায় এলেন তেজপাল।
রাত ৮টা: জামিনের আর্জি খারিজ।
৯টা ২০: তেজপালকে গ্রেফতার করল গোয়া পুলিশ।

টুইট-বিতর্কে মীনাক্ষী লেখি
তরুণ তেজপালের বিরুদ্ধে যে তরুণী সাংবাদিক ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন, তাঁর পদবি বিজেপির মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখি টুইটারে ফাঁস করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠল। জাতীয় মহিলা কমিশন মীনাক্ষীর কাছ থেকে গোটা বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়েছে। কমিশনের তরফে গোয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত শামিমা শফিক বলেন, “ওঁর মতো এক জন দায়িত্বশীল মহিলা যদি এই ধরনের ভুল করেন তা হলে সেটা খুব দুর্ভাগ্যজনক।” মীনাক্ষী নিজেও শুক্রবার এই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু শনিবার তিনি সরাসরি দায় অস্বীকার করেন। বলেন, তাঁর ছবি দিয়ে অন্য কেউ টুইটার অ্যাকাউন্টটি খুলে ওই মন্তব্য লিখেছে। তিনি পুলিশে অভিযোগ করেছেন। বিজেপি মুখপাত্রের কথায়, “যে জানে এর ফলাফল কী হতে পারে, সে নিশ্চয়ই এমন কিছু করবে না।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.